বিভূতি দাস – কবিতা (ধর্ম চাই, প্রাণের আকাল, মৌন বিকেল, আঁখি, ঐক্য, অবশেষে, মানসী, রাঙামাটি, ছাপ)

ধর্ম চাই

– বিভূতি দাস

​নতুন একটা ধর্ম চাই
যেখানে বিভেদ নেই
বাঁচবে মানুষ, মানুষের জন্যই
কল্পনায় নয় বাস্তবেই
প্রার্থনার মন্ত্র মানব সেবাই
যে কোন সময়েই।

প্রাণের আকাল

– বিভূতি দাস

নিরবিচ্ছিন্ন অন্ধকারে প্রাণের আকাল
অশ্রুত পাখির কূজন
চাঁদের আলোয় ভাসে না মন
অদেখা ঋতু আবর্তন
নিজ মহিমায় সোচ্চার অর্ন্তজাল
অনুভবহীন সকাল।

মৌন বিকেল

– বিভূতি দাস

ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে অবসর
শৌখিন মৌনতায় চরাচর
চড়ুই নিরুদ্দেশ; নেই অন্যেরাও
ভোরের ফুল বিষণ্ণ
জীবন পথের অজস্র ভুল
অপচয়ের উত্তম দাবীদার।

আঁখি

– বিভূতি দাস

তোলো আঁখি তোলো প্রিয়া
দেখ কাঁদিছে হিয়া
শ্রাবণী রাতে আসিনি কাঁদাতে
ভুল ভাঙো প্রিয়া
দেখ আগের মত চাহিয়া
বিরহ যাপিছে পাপিয়া।

ঐক্য

– বিভূতি দাস

বিভেদ ভুলে একই তানে
জাগুক সারা বিশ্ব
অন্ধকারে রুদ্ধদ্বারে থাকার মানে
মনন হবে নিঃস্ব
কাটুক আঁধার আলোর বানে
জমাট বাঁধুক ঐক্য।

অবশেষে

– বিভূতি দাস

ভালোবাসা যদি স্মৃতিতে রয়
হারায় না জানি
চোখের কাজলে রাখলে তারে
মুছে দেয় পানি
স্মৃতিতেই তারে রেখো ধরে
ওগো স্বপ্ন রাণী।

মানসী

– বিভূতি দাস

অন্তরে তোমায় গড়েছে পুরুষ
নানা রঙ সঞ্চারী
দুর্লভ সজ্জায় রেখেছে গোপন
ভাসিয়ে প্রেমের তরী
বোঝনি কি বসন্তের আভাস
হৃদয় কুঞ্জে; নারী!

রাঙামাটি

– বিভূতি দাস

নামটি তোমার মিষ্টি ভারি, পাহাড় নিয়েই বাস
প্রকৃতি তোমায় ছুঁয়ে থাকে শীত গ্রীষ্ম বারোমাস
কর্ণফুলির বাঁধে তোমার রূপের ধারা অসীম; অতল
কিশোরী থেকে যুবতী হলে; কাপ্তাইয়ের জল টলটল।

নানা রঙের নানা নামের পারিযায়ীর মুক্ত মনের অঞ্চল
সকাল থেকে সন্ধ্যা; নিশ্চিন্তে ঘোরা ফেরা, ওরা চঞ্চল
হাঁপিয়ে গেলে; সবুজ ছায়ায় বাসায় এসে জিরিয়ে নেওয়া
মনের সুখে আবার ফেরা, নেই কোথাও বাধা দেওয়া।

জেনেছি; ছিল যারা পারিযায়ী, এসেছিল অনেক কাল আগে
এখন তারা রাঙামাটির, ঘর বেঁধেছে এইখানেই ভাগে ভাগে
মাথা জাগা পাহাড় গুলোয় সবুজ বনভূমি; আশ্রয় নিরাপদ
মানুষ যাঁরা আছেন সেথায়, করে না ওদের বধ।

ইতিহাসে নাই বা গেলাম, প্রকৃতিই হোক বর্তমানের গল্প
পাহাড় ডুবে দ্বীপের সৃষ্টি, আয়তন তার নয় অল্প
সবুজ ছায়ার কালো জলে বাঁচুক ওরা, আয়ু ওদের স্বল্প
বাঁচুক সবুজ, বাঁচুক বন্যপ্রাণ, এইটুকু হোক মানুষের সংকল্প।

ছাপ

– বিভূতি দাস

ঘটে যাওয়া সব ঘটনাই এই গোলকে রেখে যায় ছাপ
লুকাতে পারে না কাল কোন ভাবেই, ধরা পড়ে চোখে
সময়ে সে ভেসে ওঠে, ক্রমশ সামনে আসে হলেও অনুতাপ।

ঘটে যাওয়া সব ঘটনাই এই গোলকে রেখে যায় ছাপ।
দেখা না গেলেও নিজ মুখ, আচার বিচারে ভাষ্যে হাফ
অপরাধ না হলেও, বোঝে অন্যে মনের খবর মুখ দেখে।

ঘটে যাওয়া সব ঘটনাই এই গোলকে রেখে যায় ছাপ
লুকাতে পারে না কাল কোন ভাবেই, ধরা পড়ে চোখে।


কবি পরিচিতি

বিভূতি দাস। অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক। জন্ম ১৪ই ফেব্রুয়ারী, অভিভক্ত ২৪ পরগনার কৃষক পরিবারে। প্রকৃতির কোল ছুঁয়ে গ্রামে বেড়ে ওঠা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। ছাত্রাবস্থা থেকেই সৃষ্টির সাথে প্রেম। নেশা-লেখালিখি এবং ভ্রমণ। বর্তমান নিবাস – সোনারপুর, কলকাতা –৭০০ ১৪৯, ভারত।