আবর্তন
– সুমিত্র দত্ত রায়
বসন জমকালো
মন দুরন্ত
স্বচ্ছল মগ্ন জল
রঙিনের মেলা।
বসন খোলামেলা
মন চঞ্চল
কালবোশেখী জল
নিদাঘ প্রবল।
বাঁধনের দিন
লজ্জা রাঙা মুখ
ছায়া নিকষিত জল
প্রবল বাদল।
আঁচল বসন
মন বাঁধতে মন
ঝর্ণা হিমেল জল
সুরে আগমনী।
সাজ বদল পালা
স্ব ভাবনে মন
শেষ জোয়ারের জল
নবান্নে বিভোর।
শ্বেতশঙ্খ বসন
কায়া শূণ্য মন
শীতল কালো জল
নিদ্রা ব্যাকুলতা।
মুক্তি
– সুমিত্র দত্ত রায়
আকাশ দেখার জন্য
সিঁড়ি ডিঙানো হলো না
অন্ধকার কাটলো না
সলতের উস্কানির অভাবে।
কিন্তু যখন
প্রদীপের অপেক্ষায়
না থাকা সূর্যকিরণ
ছড়াবে আলো
কাটাবে অন্ধকার
তখনো কি পথ
তোমায় ডাকবে না?
ঘরের বদ্ধতা
তখনও কি রাখবে
আকাশকে দূরে?
প্রশ্ন করেছিল,
উড়ে যাওয়া
এক স্বাধীন বুলবুলি।
উৎস
– সুমিত্র দত্ত রায়
তুমি যন্ত্র গড়েছো!
চাকা থেকে
বাস্প, বিদ্যুৎ বা
আনবিক বিবর্তনে
উৎপাদিকা শক্তি
তার অনেক পরিণত।
স্রষ্টা মানুষ!
তুমিও কি যন্ত্র নও?
আ্যমিবা থেকে
বাণর, গেরিলা বা
শিম্পাঞ্জীর বিবর্তনে
শুধু মাত্র মানুষ গড়ার
উৎপাদিকা শক্তি
নও কি তুমিও?
স্রষ্টা মানুষ!
অব্যক্ত
– সুমিত্র দত্ত রায়
একদিন এই তুমি
হাত ধরে বলেছিলে
– ও গো যেও না
আমি বড় একা
আমি শুনি নি।
আজ তোমার ওই
দৃষ্টি আমায় বলছে,
– কেন এলে তুমি?
কি আছে দেখার?
কিছু বলি নি।
শুধু তোমার
মুখের কথা আর
চোখের ভাষাটুকু
পৌঁছে দিলাম
সমাজের কোলে।
বাদবাকি?
অব্যক্ত, ভাবি নি।
কালঘুম
– সুমিত্র দত্ত রায়
জননীর কান্নাতেও ঘুম ভাঙে না।
লুণ্ঠন মানুষের আদিম বাসনা,
যৌবনে জননী যখন সম্পদ সাগরে,
লুটেরার দল বারবার দিয়ে হানা –
সম্পদ লুঠেছে, তাঁর অঙ্গ শূন্য করে।
অসহায় সন্তানেরা আপ্রাণ লড়েছে
মান রক্ষায়। আঘাত ছিলো না মনে,
পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে তখনো দেখেছে –
সন্তানের উদ্দীপনা আত্মবলিদানে।
পরাধীন জীবন যখন হলো শুরু,
তখনো মনে জাগেনি নামমাত্র ব্যথা।
বুঝেছিল সন্তানেরা নয় তাঁর ভীরু
সংগ্রামে মেতেছে ভুলে জীবনের কথা।
দীর্ঘকাল যারা তাঁকে বন্দীত্বে রেখেছে
আন্দোলনে শক্তিহেনে সন্ত্রাস ছড়ালো,
সন্তান ছিলো না তারা, এ সান্ত্বনা ছিলো।
আজ বাঁধা মানে না তো নয়নের জল,
জননীর বুকে আজ শেল বিঁধে গেল।
সজ্জনের বেশে এসে সন্তানের দল
বিশ্বাস ভাণ্ডার তাঁর শূন্য করে দিলো!
হীনকর্ম হানাহানি বৃথা রক্তক্ষয়,
করে তাঁর ব্যথাতুর হৃদয় চঞ্চল,
কি করে বলবে – এরা সন্তান নয়!
এই প্রথম হারালো মা, শেষ সম্বল।
তবু,
জননীর কান্নাতেও ঘুম ভাঙে না।
কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।
আমি ছেলেবেলা থেকে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু, আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।