দোর খোলা
ডানা মেলে পাখি
হাসি কান্নার মত
ভাষার উপর দিয়ে
উড়েই চলেছে
মুক্তির আলো পেয়ে।
কল কাকলি যত
খোলা দরজার মত
অসীম পথকে ছুঁয়ে
ছড়িয়ে পড়েছে
ভোরের আমেজ নিয়ে।
মৃদু ভোরের হাওয়া
দামাল ছেলের মত
দারুণ গতিতে ধেয়ে
বয়েই চলেছে
নদীর দুকূল বেয়ে।
পাল তুলে জীবন
শেকল ভাঙা কয়েদীর মত
একবুক শ্বাস নিয়ে
ভেসেই চলেছে
জীবনের গান গেয়ে।
উত্তরণ
প্রথম দেখা
বর্ষারাতে বই হাতে
ষ্টেশনের আলোয়
তবু অন্ধকারে।
আবার দেখা
হৈম সকালে উড়ন্ত আঁচলে
পারঘাটের কুয়াশায়
অস্পষ্ট তখনো।
শেষ দেখা
বাসন্তী রোদে ব্যাগ কাঁধে
অফিস পাড়ায়
বেশ উজ্জ্বল।
আর দেখিনি
হয়তো এখন সে
আমার দেখা চোখে
অন্যকেও দেখে।
চলতি পথে দুজনে
দূর থেকে বহুদূরে
বহু পথ ঘুরে ঘুরে
একই রাস্তায়
হারাতে নয়
সম অবস্থানে।
সরেজমিন তদন্তে
কারাদণ্ড অবিচল
আকস্মিক আঘাত
বিচ্ছিন্নতার তরঙ্গে
প্রকাশের অক্ষমতা।
আপন ঘেঁষা ভাবনা
দোষ বিনিময়
ভুলের পরিসংখ্যান
প্রবঞ্চনার হিসাব
কাল মহাকাল।
নব দিগন্তে
আবার নতুন পথ
ডানা মেলা ভাবনা
নীরবতা নির্ধারণ –
পথের দেখায়, ফের।
কলঙ্ক, ত্রুটির খোঁজ
ঘুমের আবেশে চোখ বোজা
রঙিন স্বপ্নে ঘোরাঘুরি
সকাল না হতেই
সে স্বপ্নও শেষ।
এবার জীবনের পথে চলা
আঁকাবাঁকা সর্পিল পথ
মরীচিকা, শান্তির হিসাব
চলনের কদমে কদমে
কঠোর বাস্তব।
সে চলে গেল
আগমন
রক্তের পরশে
তপ্ত, উষ্ণ, ঘন।
মন বলেছিলো
সে এসেছিল।
গমন
কোমল গ্রন্থি ছেদনে
এলবামের ছবিতে
স্মৃতির পাহাড়ে।
মন বলেছিলো
সে চলে গেল।
মায়াবাদী মন
রোপিত বৃক্ষের মাঝে
শান্তি নীড় খোঁজে।
তৃষ্ণার জল খোঁজে
সরসীর পারে।
তবু মায়া মোহময়ী
মন বলেছিলো
মায়া চলে গেল।
মহাকালের যাত্রা পথে
আমিও যাত্রী একজন।
ঠিকানা
একদিন তুমি ঠিকানা চেয়েছিলে।
তখন বাতাস বারুদের গন্ধে ভরপুর ,
আমি জ্বরেতে বেহুঁশ!
হ্যরিকেনের আলো জ্বলছিলো ,
তুমি বলেছিলে, “কমরেড, ঠিকানাটা বলো।”
একখণ্ড তপ্ত গোলার মত ছুটে বেড়িয়েছি।
ভাবিনি ঠিকানা আমার থাকবে কখনো,
কাব্যিক সুরে বলেছিলেম,
“খুঁজো, কোনো শ্রমিক বা কৃষকের ঘরে।
জানবে, ওটাই আমার আসল ঠিকানা।
অনিন্দিতা, আমাদের স্বপ্ন দেখা মানায় না। “
বহুদিন অতিক্রান্ত –
তোমার ঠিকানা আমি অনেক খুঁজেছি।
জানি না কোথায় আছ তুমি ,
জানি না আমার দেখানো ঠিকানায় –
আজো আছো কিনা!
পথ যে বদলে গেছে দুজনের।
আমার আরামকেদারা কোনোদিনই –
হয়তো তুমি মানবে না।
হয়তো তোমার চোখে, আমি অতি কাপুরুষ!
হয়তো তোমার ঘৃণা হয় পরিচয় দিতে –
একদিন তুমি আমার ঠিকানা খুঁজেছিলে বলে ।
তবু বিশ্বাস করো,
তোমায় আমি অনেক খুঁজেছি।
দেখা হলে শুধু বলতাম,
আমার ঠিকানা আমি তো ভুলেই গিয়েছি –
কিন্তু তুমি থেকে যেও আমার চেনানো ঠিকানায়।
কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।
আমি ছেলেবেলা থেকে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু, আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।