পরাধীনতা স্বাধীনতার জনক
– যোষেফ হাজরা
অহংকার অহংকারী হয় আন্তঃগর্বে
এভাবে তারা যা পাবার তা হারিয়ে বসে
নিজেকে মুক্ত রেখে হিংসা মনে মনে ভাবে
আমি অন্যদের মত এত লোভী নই
অথচ সুযোগ পেলে
এ আমার অধিকার বলতে কুণ্ঠিত হয় না
অনেকে দুঃখ পুষতে ভালবাসে
এভাবে তারা দুঃখ পায়
সুখের দিকে পা দিতে গিয়ে আন্তঃবলে হেরে যায়
কেউ কেউ আছে যারা সুখের ভিতর বিষ্ঠা খুঁজে পায়
মনে করে সুখ চিরদিন পরাধীন
তা না হলে স্বাধীন দেশে এত কষ্ট কেন
স্বাধীনতা মানে বাঁধনহারা নয়
নিজের কাছে নিজে পরাধীন থাকা
আজ যা আছে আর যা নেই
সে সব একদিন ছিল না
সে সব একদিন যোগ্যতার ভাগ্যে যাবে
আর যারা ভাগ্যবান তাদের দুঃখ থাকে না
যা দুঃখ তাই সুখ এভাবে তারা এগিয়ে চলে
যেমন ধৈর্যহারা হলে কোন কিছু লব্ধ হয় না
সেভাবেই ধৈর্যের অঙ্কুর মাটি ফুঁড়ে আলো পায়
তাতে পাতা হয়, ফুল হয়, ফল হয়
এবং বংশধর ছড়িয়ে পড়ে
পৃথিবীর সফলতা কামনায়
যখন অহংকার হিংসাকে অযোগ্য ভেবেই ভালবাসে
তখন হিংসা তাদের নিয়ে গর্ব করে
আর তারা নিজেদের আনন্দিত মনে করে
পরাধীনতা একদিন স্বৈরাচারিতাকে ভেঙে
নিজেকে স্বাধীন করে তোলে
পরাধীনতা সংজ্ঞা হারায়
স্কোরপিও
– যোষেফ হাজরা
অন্ধকার রাতের বুকে এত হলাহল কোথা থেকে এল?
কোথায় লুকিয়ে থাকে যখন আসে আলোর মিছিল?
তবে সে এক কাপুরুষ।
নাহলে কি অন্ধকারের রাজা সে হত কখনো?
শূন্য মরুভূমির মত নির্বাণমুখী যার চলা
শষ্য-সবুজ যার হৃদয় করে ভারাক্রান্ত
সে কেন তরুণীর রক্তের স্বাদ নিতে চাইবেনা?
একটি ছোবল অতঃপর মোজাইক পাথরের উপর
নিথর স্পন্দনহীন পড়ে থাকে মানবতা
স্কোরপিও, তুমি খুব মানানসই
যেমন আকর্ষণীয় হলে তোমাকে মরুভূমির রাজা মনে হয়
এতটুকুই তো উদর, এতটুকুই তো সঙ্গম
যে কেউ তার দূর্বলতাকে প্রশ্রয় দিতে চায়
সে তাকে গ্রহণ করে দূর্ভাগ্য ডেকে আনে
আর কিছু অসতর্কতা যার জন্য সারাদিন হাপিত্যেশ
লক্ষ লক্ষ প্রাণ মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে নিরুদ্দেশে
সেই তো হৃদয়ের গভীরে থাকা স্কোরপিও
বিষময়তা সর্পিল হয়ে বেরিয়ে আসে কখনো কোনদিন
জন্ম, মৃত্যু ও ভালবাসা
– যোষেফ হাজরা
মৃত্যুর আগেও বহুবার মরতে হয়
জন্মের পরেও বহুবার জন্মাতে হয়
তবুও কিছু থেকে যায়
দৃষ্টির সীমানা ছাড়িয়ে এই যে রেল লাইন
ক্লান্ত দুপুরে ঝনঝন করে ছুটে চলে যাওয়া
তারই পথ ধরে ওরা আসে
আমরা চলে যাই
আমার সেদিনও জন্ম হয়েছিল
যেদিন তুমি আমাকে ভালবেসেছিলে
ভালবেসে আঙুল ছুঁয়েছিলে
তারপর তুমি চলে গেলে
মৃত্যু আমার আমিকে কাছে টেনে নিল
ভালবেসে আমি মরতে প্রস্তুত
তুমি যদি ফিরিয়ে আনতে পার আনবে
লাভ আর ক্ষতির হিসেব বহুদিন আগেই ছেড়েছি
না হলে জীবন হয়ে যেত স্থুল জড় পদার্থ
আনন্দ বা বেদনা, যদি নাই বইতে পারলাম
ভালবাসতে কখনোই সাহস করতাম না
এভাবে যদি একদিন মৃত্যুও হয়
জানবে সে সবই আমার ভালবাসা
কারণ সেটাই একমাত্র পথ
যেখানে আমরা বেঁচে থাকতে পারি
কবি পরিচিতি

যোষেফ হাজরা। ছদ্ম নাম তারুণ্যের কবি।
আমি আমার জীবন গঠনের সময় বহু জায়গার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলাম। শহরের হাওয়া বা মফসলের জীবন এমনকি উত্তর আর দক্ষিণাঞ্চলের জীবনধারার ছোঁয়া আমি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছি। আমার জন্মস্থান মোংলার স্বনামধন্য সেন্ট পলস হাসপাতালে। ১লা মে জন্ম হাওয়ায় ফাদার মারিনো রিগন আমার নাম যোষেফ (আধুনিকায়নে যোসেফ) রাখে। পিতা তাপস হাজরা, মাতা এন্ড্রো রিনা নাথ।
আমি প্রথম যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “আমাদের ছোট নদী” কবিতা পড়ে তার সম্পর্কে জানি তখন থেকেই তিনি আমার অনুপ্রেরণা। এ জন্য চিত্রকলা, সংগীত, আবৃত্তি, অভিনয় ও পরবর্তীতে সেন্ট পলস স্কুলের লাইব্রেরি ও বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অপার সুযোগে লেখালেখির হাতে খড়ি দেই। সকল শিল্প-সংস্কৃতি থেকে আমি লেখালেখি করতে বেশি ভালবাসি। কারণ মনের কথা সম্পূর্ণরূপে ব্যক্ত করে, ভাষার জাদুকারিত্বে, জ্ঞান ও দর্শনের যে সমন্বয় হয়, সেই আত্মদর্শনে সম্পূর্ণ আত্মতৃপ্ত করতে সক্ষম। আমি যদিও রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব মানি তবুও তার ধাঁচে আমি লিখি না। আমি কাব্য ও রচনায় অন্যান্য ঢং রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করি যাতে কেউ পড়ামাত্রই বুঝতে পারে এই লেখনীর স্রষ্টা কেবলমাত্র আমি।