গীত নং – ১
তাল – খেমটা
– জেমস শরৎ কর্মকার
ধন্য ধন্য ধন্য ওগো ধন্য মুক্তিসেনাগণ
ধন্য ওগো তোমাদের জীবন
দেশের তরে অমূল্য প্রান
করলে তোমরা সমর্পন
ধন্য ওগো তোমাদের জীবন।
বন্ধু বেশে শত্রু এসে করে অত্যাচার
চারিদিকে উঠল যে ওই শুধু হাহাকার
পুত্রহারা মায়ের কাঁদন স্বামীহারা বোনের বেদন
তোমরা কি আর সইতে পারো
করেছো তাই রণ
ধন্য ওগো তোমাদের জীবন।।
তোমাদের নাম রবে জীবন খাতায়
সোনারা আখরে লেখা মনের পাতায়
মরিয়াও তোমরা অমর হাজার সালাম লহো আমার
ভুলবনা তোমাদের কথা
থাকতে দেহে প্রাণ
ধন্য ওগো তোমাদের জীবন।।
বাসাবাটি, বাগেরহাট।
২৬মার্চ, সোমবার, ১৯৭৩
গীত নং – ২
তাল – কাহারবা
– জেমস শরৎ কর্মকার
সুজলা সুফলা ওরে আমার এ দেশ ভাই
ছায়াঢাকা পাখিডাকা এমন দেশ আর নাই
ওরে এমন দেশ নাই।
বাংলা মায়ের খেত খামারে
সোনার ফসল থরে থরে
দেখতে আমি পাই
ওরে এমন দেশ আর নাই।।
পথিক বসে ক্লান্তি মিটায় ছায়ায়
দক্ষিণ হাওয়া এসে চোখে ঘুম দিয়ে যায়।
দোয়েল শ্যামা পাপিয়ার তান
একতারাতে বাউলের গান
তুলনা এর নাই
ওরে, এমন দেশ নাই।
বাসাবাটি, বাগেরহাট।
১মে, মঙ্গলবার, ১৯৭৩ খ্রিঃ
গীত নং – ৩
তাল – কাহারবা
– জেমস শরৎ কর্মকার
জন্মভূমি বঙ্গভূমি সোনার বাংলাদেশ
আমাদের সোনার বাংলাদেশ
ছায়া ঘনশ্যাম নয়নাভিরাম রূপসী বাংলাদেশ
আমাদের সোনার বাংলাদেশ।
জল আনিতে যায় বধু কাঁখে গাগরী
রাখাল ছেলে চরায় ধেনু বাজায় বাঁশরী
মাঝি বসে নায় ভাটিয়ালি গায়
চিরমধুর দেশ আমাদের সোনার বাংলাদেশ।।
দোয়েল কোয়েল কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে সুখে গান
ফুলে ফুলে বসে অলি করে মধু পান
দখিনা-মলয় দোল দিয়ে যায়
শান্তি সুখের দেশ আমাদের সোনার বাংলাদেশ।।
পৈতৃক বাড়ি,
শেলাবুনিয়া, মোংলা।
৯ আগষ্ট, শুক্রবার, ১৯৭৪ খ্রিঃ
গীত নং – ৪
তাল – কাহারবা
– জেমস শরৎ কর্মকার
বাংলা স্বর্গধাম আমার বাংলা স্বর্গধাম
ফুলে ও ফসলে ভরা রূপে অনুপম রে
রূপে অনুপম।
নদী বহে কুলুপুলু দুকুল ছাপিয়া
বট পাকুড়ের শাখায় বসে ডাকে পাপিয়া
দিনে রাতে ঢেউয়ের তালে মাঝি নৌকা বেয়ে চলে
মুখে বিভু নামরে মুখে বিভু নাম।।
সোনালী সুরুযের আভা মাঠে মাঠে ধানের শোভা
মন কেড়ে নেয়
ঘন মেঘের ঘনঘটা বাউলের ঐ একতারাটা
উদাস করে দেয়।
রাখালি সুর যায় থেমে গোধূলি বেলায়
বলাকারা ফিরে আসে আপন কুলায়
রাতের আঁধার নেমে এলে কত যে জোনাকি জ্বলে
জ্বলে অবিরাম রে জ্বলে অবিরাম ।।
পৈতৃক বাড়ি,
শেলাবুনিয়া, মোংলা।
২৭ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার, ১৯৭৯ খ্রিঃ
গীত নং – ৫
তাল – কাহারবা
– জেমস শরৎ কর্মকার
আমি মনের হিল্লোলে গাই বাংলার জয়গান
বাংলা আমার জন্মভূমি বাংলা আমার প্রাণ।
মধু ভরা ফুলের কলি দোলে মৃদু বায়
গুনগুনিয়ে আসে অলি মধু পিয়ে যায়
রাখাল ছেলে বাজায় বাঁশি গাহে পাখি ঝোপে বসি
তারই সুরে সুরে মাঝি বৈঠাতে দেয় টান।।
তাল নারিকেল গুবাক তরু আছে পরস্পর
ঝিলের বুকে মরাল চলে কত না সুন্দর।
চারিদিকে শ্যামল শোভা চোখ জুড়ানো মনোলোভা
মাঠে মাঠে ফলেরে ভাই কত সোনার ধান।
সেন্ট পলস ছাত্রাবাস
শেলাবুনিয়া, মোংলা।
১৬ জুলাই, বুধবার ১৯৮০
পরিচিতি

জেমস শরৎ কর্মকার, জন্ম বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার শেলাবুনিয়া গ্রামে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে পহেলা অক্টোবর। পিতা মার্ক কর্মকার এবং মাতা সুবর্ণময়ী কর্মকার।
তিনি মুলত একজন গীতিকার ও সুরকার। এ পর্যন্ত তার লেখা গানের সংখ্যা এক হাজারের অধিক এবং তার অধিকাংশ গানের সুরারোপও তিনি নিজেই করেছেন। পেশায় তিনি ছিলেন একজন স্বনামধন্য বাংলার পাঠ্যবই এর শিক্ষক। সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয় একটানা দীর্ঘ ৩৬ বছর শিক্ষকতা করার পর ২০১২ খৃষ্টাব্দে তিনি অবসরে যান। তিনি ১৯৮১ খৃষ্টাব্দে মোংলার শেলাবুনিয়া কলতান শিল্পীগোষ্ঠী নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি গাংচিল মোংলা শাখার উপদেষ্টা পদে আছেন। বর্তমানে তিনি সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা সহ ধর্মীয় ও নানা সমাজ উন্নয়ন মূলক কাজে খুবই সক্রিয়।