পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ বাংলাদেশীর সংস্কৃতি নয়

সম্পাদকীয় নিবন্ধ – যোষেফ হাজরা

বাংলাদেশ নদী অববাহিকায় দেশ। নদী ও সাগরের মিলনে জমাট পলি মাটির জন্য এদেশকে বদ্বীপ বলা হয়। কৃষক ও মৎস্যজীবী এদেশের ঐতিহ্যবাহী পেশা। মৎস্যজীবী হিন্দু বা মুসলমান সকলেই সুপ্রাচীন কাল থেকে‌ বৈশাখ মাসে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকে। বৈশাখ মাস হল মাছের প্রজনন মৌসুম। এই মৌসুমে মাছ ধরার ফলে যেমন সামগ্রিক মৎস্য উৎপাদনের ক্ষতি তেমনি মাছ না ধরা দেশের জন্য মঙ্গলজনক। বৈশাখ মাসে অনান্য মাছের সাথে ইলিশ মাছ সাগর থেকে উঠে এসে বড় নদীগুলোতে ডিম পাড়ে।

পহেলা বৈশাখে বাঙালির সংস্কৃতিতে বেশ কিছু সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব মিশে আছে। যদিও বলা চৈত্র সংক্রান্তিতে চড়কপুজা হয়। কিন্তু এর পরের দিন পহেলা বৈশাখে চিড়া-মুড়ি-নারকেল-গুড় সচ্ছল পরিবারে খাওয়ার চল আছে। বৈশাখ মাসে বৃষ্টি হলেও তা প্রথম সপ্তাহে নয়। তবে কাল বৈশাখী ঝড় হতে দেখেছি ছোট বেলায়। আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য হয়তো তা বাঁধা পেয়ে সময় গড়িয়েছে। জাতীয়তাবাদী দেশীয় সংস্কৃতিতে পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা গ্রহণযোগ্য। নবান্ন উৎসব গ্রহণযোগ্য। বিভিন্ন ভর্তা খাওয়া গ্রহণযোঘ্য। এছাড়া পহেলা বৈশাখে গ্রামে গ্রামে মেলা হতে দেখা যায়। এইসব মেলাতে মোরগ লড়াই, ঢালি খেলা, বায়োস্কোপ, যাত্রাপালা, কবিগানসহ ইত্যাদি বিনোদন মূলক বিষয় যুক্ত হতো। ধর্মীয় ভাবে হিন্দুরা নাম কীর্তন করে ভোরবেলা। খ্রিস্ট্রিয়ান মিশনে প্রার্থনা ও প্রীতিভোজ হয়ে থাকে। 

তবে যে সংস্কৃতি দেশের জন্য ক্ষতিকর তা অচিরে বন্ধ করা উচিত। কারণ এমন কোন সংস্কৃতি ছিল না কখনো। বরং সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষেরা এই দিনে শুকনো ঝাল আর‌ গরম ভাত খেত, আবার দরিদ্র কৃষক ও জেলেরা শাক ও কাঁচামরিচ দিয়ে আহার করত।

এই পান্তা ভাত ও ইলিশের ঐতিহ্য কিভাবে বাংলা ঐতিহ্যের ঢুকল তার প্রমাণ নেই। কিন্তু বিগত পনের বছর আগেও এই কুসংস্কার ছিল না। আমার মনে পড়ে কোন এর আদিম‌ অধিবাসী সম্প্রদায় পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশ খেয়ে তৎকালীন সময়ে ভাইরাল হয়ে যায়। এবং আমার এটা খুব ভালো করেই মনে আছে। বিশেষত তাদের সংস্কৃতিতে তারা শুঁটকি মাছ খেতে খুব পছন্দ করত। হয়তো কোন কারণে অতি উৎসাহী হয়ে তারা পান্তা-ইলিশ উৎযাপন করে। কিন্তু দেখা যায় যে এই বৈশাখ মাসে অনেক‌ পরিবারেই নিরামিষ খাওয়ার চল আছে। আর যে সংবাদ পত্রের এই খবর ছাপা হয়েছিল সেটাও ছিল আঞ্চলিক। কিন্তু আদিম‌ অধিবাসী অপরিকল্পিত ঘটনার প্রভাব থেকে আমাদের অর্থনীতি ক্ষতির উত্তরণ করা আমাদের বাংলাদেশী সকল নাগরিকের দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।

পরিচিতি

যোষেফ হাজরা। ছদ্ম নাম তারুণ্যের কবি।

আমি আমার জীবন গঠনের সময় বহু জায়গার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলাম। শহরের হাওয়া বা মফসলের জীবন এমনকি উত্তর আর দক্ষিণাঞ্চলের জীবনধারার ছোঁয়া আমি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছি। আমার জন্মস্থান মোংলার স্বনামধন্য সেন্ট পলস হাসপাতালে। ১লা মে জন্ম হাওয়ায় ফাদার মারিনো রিগন আমার নাম যোষেফ (আধুনিকায়নে যোসেফ) রাখে। পিতা তাপস হাজরা, মাতা এন্ড্রো রিনা নাথ।

আমি প্রথম যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “আমাদের ছোট নদী” কবিতা পড়ে তার সম্পর্কে জানি তখন থেকেই তিনি আমার অনুপ্রেরণা। এ জন্য চিত্রকলা, সংগীত, আবৃত্তি, অভিনয় ও পরবর্তীতে সেন্ট পলস স্কুলের লাইব্রেরি ও বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অপার সুযোগে লেখালেখির হাতে খড়ি দেই। সকল শিল্প-সংস্কৃতি থেকে আমি লেখালেখি করতে বেশি ভালবাসি। কারণ মনের কথা সম্পূর্ণরূপে ব্যক্ত করে, ভাষার জাদুকারিত্বে, জ্ঞান ও দর্শনের যে সমন্বয় হয়, সেই আত্মদর্শনে সম্পূর্ণ আত্মতৃপ্ত করতে সক্ষম। আমি যদিও রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব মানি তবুও তার ধাঁচে আমি লিখি না। আমি কাব্য ও রচনায় অন্যান্য ঢং রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করি যাতে কেউ পড়ামাত্রই বুঝতে পারে এই লেখনীর স্রষ্টা কেবলমাত্র আমি।

কবি হিসাবেই বেশী পরিচিত হলেও যোষেফ হাজরার  প্রতিভা বিভিন্ন ধারায় ফুটে উঠেছে – উপরে প্রদর্শিত ছবিগুলি  শিল্পী হিসাবে তার সেই প্রতিভার অন্য আরেকটি পরিচয়।