বড়দিনের অজানা রহস্য – ২৫শে ডিসেম্বর ২০২৪

সম্পাদকীয় নিবন্ধ – যোষেফ হাজরা

বড়দিন হল প্রভু যীশু খ্রিস্টের জন্মদিন। খ্রিস্টানদের বড় দুটি ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে এটি একটি। প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর ত্রাণকর্তা প্রভু যীশু খ্রিস্টের জন্মদিন পালন করা হয়। প্রভু যীশু খ্রিস্টের জন্ম হয় দায়ুদ নগরের বৈথলেহেম গ্রামে। জন্মের পরে তাঁর আশ্রয় হয় পশুর খাবার পাত্রে শুষ্ক খড়কুটোর উপর। তাঁর জন্মগ্রহণের আগে পুর্বদেশীয় পন্ডিতগণ গণনা করে জানতে পেরেছিলেন যে, একজন রাজার জন্ম হবে বৈহলেহেমে। তাই তাঁরা পথ চলতে চলতে হেরোদ রাজার দরবারে এসে উপস্থিত হন। তাঁরা ভেবেছিলেন যে, রাজার জন্ম নিশ্চয় রাজ পরিবারেই হবে। কিন্তু তাঁরা ভুল ছিলেন, ঈশ্বরের মহান পরিকল্পনা বোঝার সাধ্য কার আছে! তিঁনি রাজাকে ফকির করেন, আর কাঙ্গালীকে সিংহাসনে বসান। প্রভু যীশু তেমনি এসেছিলেন একেবারে রিক্তহস্তে। তবে আপাতত শূন্য মনে হলেও সেখানে ছিল পিতা-পরমেশ্বরের অনন্ত অনুগ্রহ, প্রেম ও ক্ষমার বাণী। জগতের কোন কিছুর নিতে আসেনি বরং মানুষের মাঝে ভালোবাসার শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন কথা ও কাজে। প্রথমত তিনি খুব ভালো একজন বক্তা ছিলেন। কারণ তিঁনি গল্পের মাধ্যমে সকলকে শিক্ষা দিতে পারতেন। অসংখ্য মানুষ তাঁর কাছে ছুটে আসত আত্মিক ও দৈহিক নিরাময়ের জন্য। সেই সকল সেবাকর্মের উল্লেখযোগ্য কিছু উদাহরণ বাইবেলে পাওয়া যায়, সব কিছু পাওয়া যায় না। যার মধ্যে আছে, তাঁর প্রথম আশ্চর্য কাজ, পাঁচ হাজার লোকের একসাথে খাওয়ানো, অনেক মানুষকে জীবন দান, তিনদিনের মৃত মানুষকে জীবনদান, অসুস্থের সুস্থতা দান ইত্যাদি।

যীশু খ্রিস্টের বারজন শিষ্য ছিল।‌ তাঁরা বিশেষ বিশেষ কাজ ও কথাগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখতেন। প্রভু যীশুর খ্রীষ্টের কাছে কোন আয়াত নাজিল হয়নি বরং তিনি নিজেই ছিলেন ঈশ্ববাণী। যদি গভীর বিশ্লেষণ করা হয়‌, তবে বোঝা যায় যে কুমারী মা হলেন সেই ঈশ্ববাণীর ধারক ও বাহক। আর প্রভু যীশু খ্রিস্ট হলেন সেই জীবন্ত বাণী, যে বাণী পথে প্রান্তরে মানুষের ভিড়ে, কাজ ও সেবার মাধ্যমে মঙ্গলসমাচার প্রচার করে গিয়েছে। মঙ্গলসমাচার হল‌ মানুষের কাছে ঈশ্বরের অনন্ত রাজ্যের দাওয়াত। যেখানে ভালবাসা, শান্তি, ক্ষমা, অনুগ্রহ, আনন্দ, উদারতার কথা বলা হয়েছে।

খুব সংক্ষেপে বললেও প্রভু যীশুর জীবনে তিনটি অধ্যায়; জন্ম, মৃত্যু, প্রচারকার্য। যার মধ্যে রয়ে গিয়েছে অসংখ্য রহস্য। যদি তাঁকে খুব সাধারণ হিসেবেও ধরা হয়, তবে এই সাধারণ বিষয়গুলো এত বছর লিখে রাখার যোগ্য নয়। তবে কেন মানুষ তাঁকে হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করল? কারন প্রভু যীশুর কথা, কাজ ও রহস্যময়তা একজন অতি খারাপ মানুষের মধ্যে সূক্ষ্ম মানবতাবোধকেও বিশাল ছায়াবক্ষের মত ফুটিয়ে তোলে।

যীশু খ্রিস্ট কী পারতেন না, এক যন্ত্রণা বিহীন মৃত্যুর পথকে বেছে নিতে? হ্যাঁ, পারতেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের একটা গান এখানে মনে পড়ে যায়,

আমার এ ধুপ না পোড়ালে, গন্ধ কিছু নাহি ঢালে।

আমার এ দ্বীপ না জ্বালালে, পড়বে না তার আলো।।

নিঠুর হে। এই করেছ ভালো।

অর্থাৎ, মানুষ যে যতটুকু যোগ্য তাকে ততটুকু পরিক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সোনা তখন‌ই খাঁটি হয়, যখন তাকে আগুনে পরিশুদ্ধ করা হয়। পৃথিবীর সকল ভোগ বিলাসীতা যায় কাছে অত্যন্ত সামান্য তিনি মহান ঈশ্বরতূল্য। বেঁচে থাকার জন্য যিনি গ্রহণ করেন,‌ যিনি ত্যাগ করার জন্যেই শুধু গ্রহণ করেন, তিঁনি খুব সাধারণ পরিবেশ জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর কিছু যায় আসে না। কারন ঈশ্বরের পুত্র বলে অভিষিক্ত তিঁনি। এছাড়া অন্যকোন দৃষ্টিকোণ থেকেও যদি দেখা হয়, তবেও এমন কোন অমানবিক ঘটনা চোখে পড়ে না যা চক্ষুশূল হয়।

যীশু খ্রিস্টের জন্মের সঠিক তারিখ নিয়েও বেশি কিছু জানা যায় না। এটাও আনুমানিক। কারন বাইবেলে বলা হয়েছে, “জন্মদিনের চেয়ে মৃত্যু দিন শ্রেয়।” যদিও এই ক্ষেত্রে এই কথা খাটে না। তবুও যীশু কিংবা যীশুর শিষ্যরাও তাঁর ব্যক্তিগত জীবনকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। খুব প্রয়োজন না পড়লে এমন কোন অতিরিক্ত কথাও কোথায় লেখা হয়নি। ঠিক এইখানে আমার মাদার তেরেসার কথা মনে পড়ে যায়। যখন সাংবাদিকেরা তাকে জিজ্ঞাসা করছিল যে, আপনার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আমাদের বলুন। তিনি বলেছিলেন, আমার ব্যক্তিগত জীবন জেনে কোন লাভ নেই। শুধু আমার কাজগুলো মানুষকে বলুন, যাতে মানুষেরা ভাল কাজ করতে উৎসাহী হয়। ঠিক এই দৃষ্টিভঙ্গি মানুষকে মানুষের ব্যক্তিপূজা থেকে দূরে ঠেলে দেয়, যা আরো বেশী মোহনীয় ও রহস্যতূল্য।

সর্বশেষে প্রভু যীশু খ্রিস্টের একটি মাত্র বাণী দিয়ে শেষ করতে চাই। যে বাণীর সুতার সকলের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তা হল,

“সমস্ত মন-প্রাণ-শক্তি দিয়ে ঈশ্বরকে ভালবাসা এবং মানুষ নিজেকে যেমন ভালবাসে ঠিক তেমন অন্যকেও যেন ভালবাসে।”


পরিচিতি

যোষেফ হাজরা। ছদ্ম নাম তারুণ্যের কবি।

আমি আমার জীবন গঠনের সময় বহু জায়গার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলাম। শহরের হাওয়া বা মফসলের জীবন এমনকি উত্তর আর দক্ষিণাঞ্চলের জীবনধারার ছোঁয়া আমি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছি। আমার জন্মস্থান মোংলার স্বনামধন্য সেন্ট পলস হাসপাতালে। ১লা মে জন্ম হাওয়ায় ফাদার মারিনো রিগন আমার নাম যোষেফ (আধুনিকায়নে যোসেফ) রাখে। পিতা তাপস হাজরা, মাতা এন্ড্রো রিনা নাথ।

আমি প্রথম যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “আমাদের ছোট নদী” কবিতা পড়ে তার সম্পর্কে জানি তখন থেকেই তিনি আমার অনুপ্রেরণা। এ জন্য চিত্রকলা, সংগীত, আবৃত্তি, অভিনয় ও পরবর্তীতে সেন্ট পলস স্কুলের লাইব্রেরি ও বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অপার সুযোগে লেখালেখির হাতে খড়ি দেই। সকল শিল্প-সংস্কৃতি থেকে আমি লেখালেখি করতে বেশি ভালবাসি। কারণ মনের কথা সম্পূর্ণরূপে ব্যক্ত করে, ভাষার জাদুকারিত্বে, জ্ঞান ও দর্শনের যে সমন্বয় হয়, সেই আত্মদর্শনে সম্পূর্ণ আত্মতৃপ্ত করতে সক্ষম। আমি যদিও রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব মানি তবুও তার ধাঁচে আমি লিখি না। আমি কাব্য ও রচনায় অন্যান্য ঢং রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করি যাতে কেউ পড়ামাত্রই বুঝতে পারে এই লেখনীর স্রষ্টা কেবলমাত্র আমি।

কবি হিসাবেই বেশী পরিচিত হলেও যোষেফ হাজরার  প্রতিভা বিভিন্ন ধারায় ফুটে উঠেছে – উপরে প্রদর্শিত ছবিগুলি  শিল্পী হিসাবে তার সেই প্রতিভার অন্য আরেকটি পরিচয়।