ঠিক কতটা
– পারমিতা ব্যানার্জি
এটা কি সত্যিই
এক নেপথ্য প্রতারণা!
নাকি বয়ে বেড়ানো
বিশাল এক দ্বন্দ্ব যন্ত্রণা!
বুঝি না ___
ঠিক কতটা সুখ পেলে
ভুলে যাওয়া যায় দুঃখ।
জানা নেই ___
ঠিক কতটা ভালবাসায়
ভরে যাবে অপূর্ণতা!
জানি না ___
এর হিসেব কষেই গেছি।
পাইনি কূল কিনারা।
দুঃখকেই ভালবেসে
সুখ খুঁজে হই দিশাহারা!
এ যে যন্ত্রণা ___
কোন নীরবতার সামনে
যখনই দাঁড়িয়েছি
বুঝিনি কতটা উষ্ণতায়
গলবে বুকের বরফ!
পাবো সান্ত্বনা ___
ভেবেছি, মনের কয়লায়
দুঃখটা এক ‘হীরে’!
যত্ন করে লুকিয়ে বুকে
সুখ টা পাবো ফিরে!
এ নিছক কল্পনা ___
নিক্তিতে মাপতে বসিনি,
ঠিক কতটা সুখ চাই!
কতটা ভালবাসা চাইবো
ভালবাসা দিতে ___
চিন্তায় আসে না!
পৃথিবীর বুকে এতো সুখ ___
তবুও কেন
ভরেনা আমার বুক।
আমি বোধহয় নিতান্তই
এক উজবুক!
আয় বৃষ্টি
– পারমিতা ব্যানার্জি
আয় বৃষ্টি ঝেঁপে ___
যা বলছি মন দিয়ে শোন,
যাসনি যেন ক্ষেপে।
চাষের ফাটা জমি দেব,
পা পোড়ানো উঠোন দেব,
শুখনো একটা
পুকুরও দিতে পারি!!
আর করিস না ভাই আড়ি!
এতেও যদি
মন না ভরে বলিস ___
মুখ ঘুরিয়ে থাকিস না প্লিজ।
বন্ধু হয়েই আসিস ___
লজেন্স দেব, বিস্কুট দেব।
এই গরমে ঠাণ্ডা একটা
আইসক্রিমও দিতে পারি,
যদি বলিস।
তুই তো আবার শিলা বৃষ্টির
বরফ ভালবাসিস।
আজ যে বড়ো দায় ___
ঝমঝমিয়ে মন ভিজিয়ে,
আয় বৃষ্টি আয়।
ইচ্ছে আছে তাই
– পারমিতা ব্যানার্জি
ইচ্ছে থাকলে ___
রাতটা একটা কবিতা হ’তে পারতো।
ইচ্ছে থাকলে ___
তপ্ত আকাশটা সবুজ হয়ে ঝরতো!
কেন যে এসব ___
মনের ব্যথা, প্রলাপ বকতে চায় গো!
কেন যে এসব _
সুখের ছবি আঁকতে গিয়ে কাঁদি গো!
ইচ্ছেরা আছে ___
তাই কী কালবৈশাখী বুকে আসেনি!
ইচ্ছেরা আছে ___
তাই মুগ্ধ নয়ন বন্ধ যে আজও হয়নি।
নিবেদনে ঝাঁকি
– পারমিতা ব্যানার্জি
সবই তো লিখে গেছো ___
কিছুই যে রাখোনি বাকি!
আমি তো অযোগ্য, তবু _
জানি না এ কেমন ফাঁকি!
অগোচরে আবডালে
জীবনের যত কিছু ___
যত ওঠাপড়া,
ভাঙা আর গড়া,সবই
লিখে গেলে, আগু পিছু!
কত শূন্যতা, যত বৈভব,
যা আছে ___
মিলে যায় মিহি সুতোয়
গাঁথা বকুল মালায়।
একটাই মনে___
লিখে দিয়ে গেলে সব।
কি করে পারলে কবি?
তোমার মনের রঙে
এঁকে দিয়ে গেলে
অজানা অথচ জানা
মনের কথা-ব্যথার ছবি!
দিন শেষের সুর
– পারমিতা ব্যানার্জি
তুমি যে আমার
গোধূলির হলুদ আলো___
জীবন মরণের সন্ধিক্ষণ!
তুমি যে আমার
হলুদ রঙে মুগ্ধ অমলতাস।
আমার বিজন মনে
বয়ে আনা দখিনা বাতাস!
নিবিড় অমার প্রলেপ তুমি,
সন্ধ্যা নামার আগে,
ভোলাও গভীর সে দীর্ঘশ্বাস!
তুমি সন্ধ্যার বেলী ফুল ___
আমার হারিয়ে পাওয়া ভুল!
আমার গোধূলি তুমি ___
ফুরিয়ে যাওয়া দিনে,
নতুন করে খানিক পাওয়া,
জীবন আঁকার গান!
তুমি আমার কাব্য সাধনা!
শূন্য মন কেড়ে নেওয়া
এক ভীষণ অভিমান!
কবি পরিচিতি
পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।
ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।