বর্ষপূর্তি
– সুমিত্র দত্ত রায়
সকাল থেকেই অসহ্য যন্ত্রণা।
বছরের বোঝা আজ একদিনে,
দীর্ঘ পরিক্রমা কয়েক ঘন্টায়
হাজির হয়েছে – ব্যথা অফুরান।
স্মৃতির দরজা ফাঁক করলেই
ভুতুড়ে এক অন্ধকারে অতীত।
অথচ ধবধবে সাদা সচ্ছতা
নিয়েও বেশ কিছুদিন তো ছিলো!
এমনই হয়। আমাদের মন
না পাওয়া যন্ত্রণা আঁকড়ে রাখে।
কিন্তু আনন্দের দিন, মনে করে
হকের পাওনা – তাই ভুলে যায়।
ঘড়িবাবু তার কাজ করে যায়,
টিকটিক যাত্রা নিত্য নিয়মিত।
বছরের ভার মাথায় চাপিয়ে
কখন তা মুহুর্তে এলো, কে জানে?
চমকে রাতটা বদল ঔজ্জ্বল্যে!
আতশবাজির দীপ্ত ফোয়ারায়,
নিমেষে সব ক্লান্তি আলোয় মুক্ত।
জানালাতে মুখ রেখে চেয়ে থাকি।
দূরের গীর্জায় ঘন্টার ঢং..ঢং..ঢং..।
মনের দরজা খুলে নয়া রঙ।
প্রার্থনা সুরে আবার ভরে মন,
আসে নবীনের নয়া হাতছানি।
সবুজের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আজ,
নববর্ষ আমাকে বলতে চায়-
“ভাবনা ছাড়, পুরনো উৎসকে
কাজে লাগাও, হাঁট একটুখানি।
অভিজ্ঞতা তোমায় নিতেও পারে-
এক আলোকিত নতুন বছরে।
সৃষ্টি মাধুরীতে জীবনের শ্রেষ্ঠ
বছর রূপে আমি স্বীকৃতি চাই।”
আলেয়ার আলো
– সুমিত্র দত্ত রায়
অঙ্গরূপে অঙ্গ জড়ানো চিত্রপটের ,
অবিকৃত চোখে শুধু নির্লিপ্ত দর্শন।
সমুদ্র মন্থনে অসাড়তা, ভাগশেষ।
চঞ্চল দুচোখে পরিত্রানের আকুতি।
বদলানো প্রেক্ষাপটে মধুরতা স্থির।
অচেনা কখন দোলায় হৃদয়-প্রাণ ,
যেথা মনের রূপে মন বাঁধনে দিশা ,
ভাব গম্ভীরতা ক্লান্ত তরুচ্ছায়ে সুপ্ত।
দখলিত মন শূন্যতায় শেষ, তবু
ছুটবার অদম্য বাসনা হতাশাই।
সেদিন আসবে ফিরে, শুধু পাথরের
আঘাত ক্ষত বিক্ষত করবে বিশ্বাস।
তবু চোখের আয়না বড় পরিস্কার,
বিচারের ভুল তার হয় না কক্ষনো!
মনের নাগাল ছাড়া, নিরাশ্রয় নয়!
সম্ভাব্য মুক্ত মনের এ কী বন্দীদশা!
মরীচিকাতটে
– সুমিত্র দত্ত রায়
এক একটা রাত কেটে যায়,
অকৃতজ্ঞ রাত যখন ফুরায়
স্মৃতি রাখে ধুসর মরীচিকায়,
রাত কি তার হিসাবে কিছু রাখে?
ভাববে যামিনী অবকাশ কই!
তার চলনে যে দিনটাই মৃত।
আর কত এমন হত দিনরাত
স্মৃতিচারণে রাখতে বাধ্য হব!
আমাদের বয়স বাড়ে, না আয়ু
কমে যায়! তর্কের বিষয় বটে।
যেতে চাই না যুক্তি লঙ্ঘনে, তাই
নামামাত্র কাজ রেখে যেতে চাই।
পথিকের চাতক নজরে – বৃষ্টি
উধাও হয়ে যায়, আবার খরা।
ক্লান্ত পায়ে হেঁটে হেঁটে কতদূর
আর বইব এ শারীরিক যন্ত্রনা!
মেঘের যাওয়া আসা
– সুমিত্র দত্ত রায়
শুধু তোমার জন্যে কত না দিন কাটে,
অন্ধকারে আজ সব আলো টিমটিমে,
ভোরের আকাশে ঘন কুয়াশার ঘোর,
এর মাঝখানে অনাহুত পথ চলা।
একবার তখন মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা।
মাথার শিয়রে বসা মাও উঠে গেল,
আমার সেবার ভার তোমার উপরে,
তবু কপালে হাত দাওনি সংকোচে।
চোখের আরশি বাস্প মেঘে ভরা ছিলো,
যেন বাঘিনীর ওৎ পেতে বসে থাকা,
সাম্রাজ্য সামলানো! তবু ঝাঁপ দিলে না।
প্রচণ্ড পিপাসা, স্বপ্ন সমাপ্ত।…এলে না।
জানি না ছোঁয়ায় তাপ বেড়ে যেতো কিনা?
তাই , দরজা ভেজিয়ে রেখে চলে গেলে।
চোখের লোনা জলেতে ঠোঁট ধুয়ে গেল,
আবার স্বপ্ন দেখার উদ্দাম বাসনা।
ঘুম নেই। বসন্তের ডালি প্রতীক্ষায়।
পলাশ রাঙা গাল কোকিল কুহুতান,
কৃষ্ণচুড়ার প্লাবনে- ফের আবিরেতে
সীমন্ত রাঙাবো! দরজা রেখেছি খোলা।
কবি পরিচিতি
সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।
আমি ছেলেবেলা থেকে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু, আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।