পারমিতা ব্যানার্জি – কবিতা (অনাসৃষ্টি, আনন্দ পারাবারে, অন্তবিহীনতায়, সমান্তরাল পথ, লড়তে হবে তাই)

অনাসৃষ্টি

– পারমিতা ব্যানার্জি

গাছগুলো কেটে সাফ __
কতদিন আর থাকবে গ্রাম!
“শহর” হবে সবার নাম!
কী যে হবে “বাপ্ রে বাপ্”!

পুকুর বুজিয়ে অট্টালিকা!
ব্যাঙের নাইকো ঠাঁই!
ডাকবে না আর ভাই__
ঘ্যাঙোর ঘ্যাঙোর ডাকা,
শুনবে না “মেঘ ভাই”!!!
বুঝি, জমছে না মেঘ তাই!
বৃষ্টি মুখ করেছে বাঁকা!

বৃষ্টি জানিয়ে দিল সাফ __
ছিরিক্ ছিরিক্ ঝরবো,
এর বেশি না পারবো __
“আমায় করো মাফ”।।

আনন্দ পারাবারে

– পারমিতা ব্যানার্জি

দুঃখের ওপারে
চলে যাব আমি হাসিমুখে।
যেতে যে হবেই সুখে।
থাক না যত জরা-বেদনা,
ভব সংসারের যাতনা…
থাক আদি-অন্ত অতৃপ্তি,
কায়ার ছায়ার আড়ালে!!

চলে যাব আমি।
থাকবে একাকী নির্জনে
যত ক্লান্ত কাগজ-কলম,
আমার একলা ঘর!
অসমাপ্ত কবিতার কথায়
ফেলে রেখে যাবো সুখ!
চির নিস্তব্ধ মনের গভীর!

পিছুটান না রেখে,
উড়ে যাবে শ্রান্ত বলাকা।
আমি ফিরে দেখব না আর
ধীর পায়ে হাঁটা ডাহুক,
পুকুরের পাড়ের কাদায়…
শুধু শুনতে পাব
দুঃখ-পরপারের ডাক!!

অন্তবিহীনতায়

– পারমিতা ব্যানার্জি

রাস্তা ফুরিয়ে যাওয়ার বাঁকে,
ওই চলে গেলো ওরা!
নীরবে কত ছবি দিলো এঁকে
দু চোখের শ্রাবণ ধারা!

হেরে যাওয়া মৌন-কলরবে
তুমি তো উদাসী ভয় !
এ যেন ভাঙনের স্মৃতির শবে
ভরে থাকা শূন্য জয়!

বাতায়নে বসে একা অলক্ষ্যে,
নীরব আমি ছন্দ হীনা!
অনুভব গাঁথা গীতি আলেখ্যে,
তুমিই শেষ মুগ্ধ বীণা!

নির্জন যখন আপন মহিমায়,
মৌন কলম অন্ধ অনন্তে ধায়!

সমান্তরাল পথ

– পারমিতা ব্যানার্জি

সমান দূরত্বে হাঁটে ওরা…
ছুঁয়ে থাকে ওদের
এক পরিবেশ, এক আবহ।
ইচ্ছে থাকলেও
ওরা মিলিত হবে না।
ওরা যে সমান্তরাল।

হাঁটতে হাঁটতে কেড়ে নেয়
পথ-পাশের
সহানুভূতি, ভালোবাসা।
একই প্রেম বুকে নিয়ে
ওরা কী একটু অভিমানী!!
হয়তোবা!

কখনো কখনো
কোনো একজনের হয়তো
ভাঙে বুক।
পথ সারাই এর জন্য
আসে লোকজন, যন্ত্র।
সে এক যন্ত্রণা!
অন্য পথ এসব দেখে যেন
নির্বাক!
কেউ বোঝে না এ অ-সুখ!

প্রেম সাথে নিয়ে
ওরা এভাবেই দূরত্বে হাঁটে!
ওরা যে সমান্তরাল _
অনন্তকাল।

লড়তে হবে তাই

– পারমিতা ব্যানার্জি

কোথা থেকে যেন
‘অনীহা’ নামক এক রোগ
ছেঁকে ধরেছিল আমাকে।
মস্তিষ্কের চলন প্রায়
বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জোগাড়!
বোবায় ধরেছিল
বেয়াক্কেলে কলমটাকে!
এই সুযোগটাই খুঁজছিল
ভার বোঝাই মনটা।
প্রায় চির নিদ্রায় যাওয়ার
তোড়জোড় করছিল।

এই সময়ে নিভে যাওয়ার
আগের প্রদীপের মতো
দপ্ করে জ্বলে উঠলাম!
“আরে থাম্!!!”
লিখি আর না-লিখি,
বাঁচার ইচ্ছে আছে এখনো
ষোলো আনা।
অনেক রোগের সাথেই
নাহয় জোড়া থাক্ ‘অনীহা’!
এভাবেই জারি থাকুক
মনের লড়াই!


কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।

ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।