সুমিত্র দত্ত রায় – কবিতা (নগরীর কান্না, ছলনা, হারাবারে চাই, যাত্রা শুরু, চারাগাছ)

নগরীর কান্না

– সুমিত্র দত্ত রায়

পাথর কেটেই রাস্তা করে ওরা,
পাথরকে ওরা পাথর ভাবে না!
রাস্তা শেষে কিন্তু নজরে আসে না,
পড়ে থাকে শুধু ধুলিময় পথ।

চলার পথটি ছিল বলে আজ,
দুপাশে ক্যামেলিয়ার রক্তহাসি,
জানালার চম্পাকলি অবিশ্বাসে,
যখন যার খুশি যাওয়া আসা।

এমনি করেই জনপদে পদ,
নোংরা ছাউনি উধাও হয়ে যায়,
ওদের সাড়ার সময় কোথায়?
নগরীতে ওরা অবাঞ্ছিত দল!

ফের নির্বাসিত কোনো দূর দেশে।
পথ শেষ হবার নয় বলেই –
আবার কাঁধে পাথর ভাঙা পণ,
জানে না ঠিকানা কোথা ভবিষ্যৎ।

ছলনা

– সুমিত্র দত্ত রায়

আমি অনেক কিছুই দিতে চাই,
পারি না ঘট শূন্য বলে।

যদি বা কিছু রাখি,
যে যার ইচ্ছেমতই ভাবে।

দাঁড়কাকের ঠোঁটে শ্লেট পেন্সিল
মানে না কোনো ল।
হযবরল!

আমার সব ভাবনা জড়ো করে দেখি,
ভাববো বলে যা রেখেছিলাম গোপনে,
শুকিয়ে কাঁঠালের আমসত্ত্ব!

কল্পবিলাসী মন তবু –
খুঁজে ফেরে পরশ পাথর,
ক্ষেপার মতোই।

আর আমি একলা নিভৃতে বসে,
উড়বো বলে স্বপ্ন এঁকে যাই
আকাশের নীলে।

হারাবারে চাই

– সুমিত্র দত্ত রায়

মাঝে মাঝেই অন্ধকার আমাকে
হাতছানি দেয়। বলতে ব্যাকুল
হয় অনেক না বলা সব কথা।
কালো চামড়ার মোড়কেতে রাখা,
লাল পাষাণের বিন্দু আকুলতা।

স্তরে স্তরে সাজানো গল্পের থেকে,
তুমি কখন যে এসে আবেশের
বশে আমাকে নিয়ে খেলতে থাক,
বুঝি না। তোমার নিবিড় পরশ
অনুভব করি, সরাতে পারি না।

আমি ভালো করে জানি অপর্যাপ্ত
আলোতে কিছু দেখা যায় না, তবু
তুমি যেন আমার সেই চেনাজন,
যাকে চিনতে আলো কাজে লাগে না।
হারাবার ভয়ে অন্ধকার খুঁজি।

জোনাক জ্বলা সে রাতটা আমাকে-
তোমার রূপসী আঁধার আলোয়
ভরে দেয়। পাষাণ স্বপ্ন কলজে
হয়ে, জানি না কখন মিলে যায়
ব্যাকুল মনেতে শেষ বিন্দু পাই।

যাত্রা শুরু

– সুমিত্র দত্ত রায়

অনেক ভেবেও জালে মাছ নেই।
প্রতিটি দিনই হিসেব চাইছে,
কার জন্যে কতটুকু ছাড়লাম!
বাদীপক্ষে বাদশাহী প্রশ্ন, তবু
নিরুপায় দৃশ্য শিকারে আবদ্ধ।

প্রাত্যহিক দৃশ্যের অভাবে নয়,
চেতনাতে হয়নি কোনো ঘাটতি।
প্রেমের দুচোখে বিচ্ছুরিত প্রাণ,
অবকাশ হাতছানি দিয়ে ডাকে।
তবুও মন সাড়ম্বরে নির্লিপ্ত।

ভাঁটামুখী নদী পলি নিয়ে আসে,
প্লাবন অভাবে নৌকার স্তব্ধতা।
বসে আছি পাল তুলে যদি মেলে
একটু বাতাস, মন ভরে শ্বাস নিয়ে
যাত্রা শুরু করি ফের অনিমিখে।

চারাগাছ

– সুমিত্র দত্ত রায়

ছেলেবেলা থেকেই
আমি ফালতু চিন্তা করি।
ট্রেনে যেতে যেতে
সকলের নাক মেলাতাম
দুটি অবিকল নাক কখনো দেখিনি।

সে কি আমার দেখার ভুল?
না কি মনের মতই,
নাকও মেলে না,জানি না।
বে-আক্কেলে মনগুলোও কারো এক নয়।

তবে নাক অবশ্য বিচারে উঁচু,
ইচ্ছেমতো পাল্টি খায় না,মনের মত।
বদলায়, তবে ধীরে ধীরে সময় দেয়।
আসলে পৃথিবীতে কোনো দুটি বস্তুই এক নয়।

মুখে যে যাই বলুক
সম নীতিতে বাঁধা সম্ভব নয়,
বাঁধলে বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী।
কিন্তু কোনো চারাগাছ,
যখন নতুন সংসারেতে বাঁধো বলতো,
কজনে এটা মনে রাখো!


কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।

আমি ছেলেবেলা থে‌কে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু,  আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।