সুমিত্র দত্ত রায় – কবিতা (ওরা নিশ্চিন্তে আছে, নক্ষত্র সন্ধানে, অনিবার, আকাঙ্ক্ষা)

ওরা নিশ্চিন্তে আছে

– সুমিত্র দত্ত রায়

বাড়িটা খারাপ। অনেকেই বলে থাকে।
বহু আশা নিয়ে রাজবাড়িতে থাকবে
বলে, নতুন বউ এলো ছুটি কাটাতে।
দালানে দোলনাতে দুদিন না দুলতে
ভোররাতে আতঙ্কিত লাশ – কামরায়।
উত্তর নেই। অনেক স্মৃতি ভরা বাড়ি
আবার একলা। ভয়ংকর নীরবতা।

আগে টমটমের শব্দে – রমনীদের
আগমন বোঝা যেতো। ঘুঙুর বাজতো।
বাঁচবার আকুতি ভাসতো প্রজাদের
কানে। অর্ধশতক আগে ভোরে হঠাৎ
ভারী বুটের আওয়াজ। উগ্রপন্থীরা
ডেরা বেঁধেছিল। কিভাবে খবর পেলো
বিস্ময়! লাশগুলোর নজরে – আতঙ্ক ।

তবু সূর্য ওঠে, আলো দেয়, পাখি গায়,
কখনো বা দেখি দু একটা ডানপিটে –
দিনভোর ঘোরে গুপ্তধনের সন্ধানে।
কিন্তু অন্দরে না যাওয়াই – রেওয়াজ।
নিশ্চিন্তে ঝুমকোলতা লতিয়ে বাড়ছে।
কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া প্রাঙ্গণের শোভা,
যেন দুজগতে ওরা বিভেদ গড়েছে।

প্রাচীনযুগ থেকেই সাধারন শোভা
বারবার পরাভূত মানব সমাজে।
আজ ওরা বেশ শান্তিময় পরিবেশে।
সবুজের বাড়বাড়ন্ত দেখার মতো!
নতুন অবিঘ্নিত জগতের সন্ধানে
মলয়ানিলে রজনী সুবাস চর্চায়।
রাজবাড়ি মনে হয় ইন্দ্রপুরী যেন!

নক্ষত্র সন্ধানে

– সুমিত্র দত্ত রায়

ভালবাসবো বলে যখন ভালোবাসি,
দেখি বিশ্বজুড়ে পাগলামি,হাসিখুশি!
হাত তুলে নিই আপনার হাত ভেবে,
স্বপন সায়রে যাই ক্রমশই ডুবে,
ডুবতে ডুবতে যখন অতল মাঝে-
ভালবাসা কেন সাজে সাধারণ সাজে?
বিদায় বাঁশরী বাজে কোনো সুদূরেতে,
হারানোর ভয়ে ছুটে যাই জীবনেতে।
চেতনা আমায় তোলে অতলের থেকে,
হারাবার ধনও কোনো কি মূল্য রাখে?
বাস্তবতায় কল্পনা নেই, আমি আছি।
আমি ছাড়া হলে তারাদের কাছাকাছি!
স্বপ্নে যা ছিলো নেহাতই চমৎকার,
জেগে দেখি তায় চমক লাগে না আর।

অনিবার

– সুমিত্র দত্ত রায়

আগমনী সুর ছিলো ভোরাই দখলে,
একতানে মাতৃমন্ত্রে একত্র প্রয়াস।
যেদিনটা ধরেছিলে নিজের কব্জায়,
কখন যে উড়েছে মুক্তডানা মেলে-
নজর এড়িয়ে, তা মনন পরাজয়।

কাশের শরৎ – শিউলির গন্ধ ছাড়া,
হেমন্তের বার্তা বহে দেখি কুয়াশায়,
শুন্য ডালি নিয়ে ফুলহীন অস্থিরতা।
কেবা তখনো আরও একবার সাড়া –
দাও অন্তরালে! তবে কি বসন্ত আসে?

কিছুই ধরা দেয় না কবলে তোমার।
চলার পথে যখন যা পেয়েছো যত্নে
রাখলেও, আপন করতে অসমর্থ।
তাই আম্রকলি ঝরে, ঝড়ের প্রকোপে
কিম্বা বর্ষনধারার শিলার আঘাতে।

বর্ষারাণী নিজে যখন ক্ষেত ভরিয়ে-
ফসল নিয়ে আসে, রাখে কোলেতে
তোমার, তখনো তা সবার মাঝে দান
করে, তুমি নিস্বঃহায়! তোমার চলন-
আবহমানের প্রতীক্ষায় অনিবার।

আকাঙ্ক্ষা

– সুমিত্র দত্ত রায়

বাগানের ওই গোলাপ আমার।
বুকের লাল কলজে জুড়ে রাখি,
কত নাটক কত না চিত্রপট,
কালের যাত্রাতে পথের হদিশ।

ডানামেলা পায়রার দলগুলো
চিঠি নিয়ে দেশ বিদেশেতে ধায়,
আকাশের বুকচিরে রাখে। না কী-
মিলিয়ে যায় অসীম শূন্যতায়?

মোটকথা গোলাপী হারিয়ে যায়
ছিন্নপত্র বোশেখী ঝড়ের রোষে,
দুই তরুণ তরুণী অসহায়
সুত্রবদ্ধ তবু কত না তফাতে।

আজ শুধু মাতামাতি তাড়াতাড়ি
নিজের জন্যে নয় মায়া জগতে,
ছাড়াছাড়ি কাড়াকাড়ি অবাস্তব
সম্পর্ক! কৌতুকময় ট্যাবলেট।

আর গোলাপ? দুর্গন্ধ শুস্কতায়।
বৃথা মুক্তি সন্ধানে কুহক গায়
মোহমুক্তি গান। শান্তি পারাবত
মরীচিকা সম স্বপ্নিল ভ্রমণে।


কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।

আমি ছেলেবেলা থে‌কে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু,  আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।