স্বপ্ন
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
দিবস কোথায় যায়? মুখ কেনো ভার?
কখন, কে দিলো ওরে অদ্রি অদ্রি কুঁজ?
নির্জনেই বসে ভাবি সেই আম্রতলে,
ডুবেছে একটু আগে ভাষা খোয়ে স্বাধীন সুরুজ।
আসছে ভুসারা নেমে মৃদুলা কদমে
নয়কো বৃদ্ধের মতো বলবো না হাঁটি হাঁটি খুকি,
নিশ্চয় জানে না ওরা এটা কিন্তু ঠিক
চন্দ্রিমা দিতেছে থেমে মগডালে বারে বারে উঁকি।
যে’রূপেই যাক তিথি ঢালাইয়ে বা খড়ে
আঁধার আসবে ধেয়ে অমানিশা ঢেকে দিতে দোর,
নাচনে উঠবে মেতে পতঙ্গের দল
শুধুই নিভন্ত পেতে অবশিষ্ট গোরের আগর।
স্বপ্ন কি অজ্ঞান রয় আঘাতে শ’ কিরে!
রক্তাক্ত হয়েও যতো যুদ্ধ ক্ষেত্রে নেমে
আসেনি কি নিজ গৃহে স্ব-স্বভাবে বারে বারে ফিরে!
তোমাকে হে! দ্যাখো ঘসে হুঁশ আর মান,
মানুষ বিহনে নয় বহতা যা ছন্দিত লোবান।
স্বপ্ন মানে বুকে এক ধর্ম রূপী বাড়ি,
স্বপ্ন মানে চতুর্দিক ভিতে-গীতে সব নর-নারী।
কাকস্য সম্প্রীতি
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
অটল বান্ধব বেশে প্রকৃতিতে থাকি
ভুল কিছু নাকি?
সেদিন বললো ডেকে পাকুড়ের কাক
কর্কশ স্বরের মান ভাবেনি কে খাক?
অথচ স্বভাবে পেলে চড়ুই শালিক –
সুবোধও খুশিতে বলে
ষোল আনা খাঁটি নাগরিক।
বেঁধেছে আজি এ ক্ষণে নীরদেরা ভেলা –
শ্যামলা মাঠেরে দিতে
হয়তো বা তা-ছায়ের খেলা,
কি বুঝে কালের স্রোত নিয়েছে তা ঘাড়ে?
ভাবি আমি তারে –
মননে-খননে হলে চির সে প্রকৃতি
বুকে পেতো কাকস্য সম্প্রীতি।
যখন-তখন
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
যখন আবেশে জাগে যমুনার পালা
সহসা তাগড়া স্রোত হাতে লয় ঊর্মিল বেহালা।
কিঞ্চিত পেলে এ ছোঁয়া সমীরের ভাল?
শ্যামলা দামাল ক্ষেত হয়ে উঠে ষোড়শী কাঁকাল।
লালচে ফড়িংও প্রেমে ডাকলে ’হে চাষী!’
সুদূরে থাকতে পারে প্রস্ফুটিত শাপলার হাসি!
তখন —
থাকতে পারি না নব বাসনার মাঝে
রুখতে পারি না চেয়ে নাঙা সেই ব্যগ্রতার ছড়,
দাঁড়াতে পারি না চেয়ে স্বভাবের মাঝে
খুঁজতে পারি না চেয়ে নিজেকে এ বুকের ভিতর।
যখন পায় না সূর পাকুড়ের প্রীতি,
বিক্ষিপ্ত মেঘের খাঁজে থেমে যায় গোধূলির গীতি।
কোথা এ বাঁশের বাঁশি? কেনো হেন গান?
অকালে ভেঙে কে হলো চির সুখী গোঠের বিতান?
বিক্ষত ভাবনা পেলে কালশিটে কাঁদ,
লাভ কি মাথার উঁচে রলে প্রিয় পঞ্চমীর চাঁদ!
তখন —
থাকতে পারি না নব বাসনার মাঝে
রুখতে পারি না চেয়ে নাঙা সেই ব্যগ্রতার ছড়,
দাঁড়াতে পারি না চেয়ে স্বভাবের মাঝে
খুঁজতে পারি না চেয়ে নিজেকে এ বুকের ভিতর।
যখন দু’কানে আসে পর পর ভেসে সাইরেন,
বুঝি সে স্টেশনে এসে দাঁড়িয়েছে নিশুতির ট্রেন।
কে আসবে?) কেনোই বা জেগে উঠে মমতার ঢেউ?
তবে কি অদূরে ওই কৃষ্ণচূড়া পেঁচকীর কেউ?
সিমেন্ট পাথরে গাঁথা চেনা এক জলজ্যান্ত সিঁড়ি,
মৃত্তিকা বদনে মেখে সেজে হয় বাংলার পিঁড়ি।
তখন —
থাকতে পারি না নব বাসনার মাঝে
রুখতে পারি না চেয়ে নাঙা সেই ব্যগ্রতার ছড়,
দাঁড়াতে পারি না চেয়ে স্বভাবের মাঝে
খুঁজতে পারি না চেয়ে নিজেকে এ বুকের ভিতর।
রমণী
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
পাহাড় হয়নি দেখা, চেয়েছি কি ছুটি!
কতোটা অটল ওরা? থাক সে বেদনা!
মায়ার বন্ধন সে তো সোহাগার সোনা,
দ্যাখোনি কুঁড়ের তলে সর্বসহা খুঁটি!
ঊর্মিরা সিন্ধুর বুকে করে ছটফট –
কতো যে শিল্পীর মন এঁকেছে সে ছবি,
বলেছে কি কেউ তব – জিজ্ঞাসিলো রবি
’উতলা হতো কি ওরা! বল তো কে তট?’
রাত্রির চুম্বনে পায় অহ্ন ফিরে স্মৃতি –
নরে, হে রমণী! তুমি স্বরূপে অমন,
নিশ্চয় শিশির বলে সয়েই পতন
’সৃষ্টির আধার বিনে জেনো নয় ক্ষিতি!’
পাকুড়ের গান
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
মেঘলা বিকেল শেষে আলস্যের দায়ে
থামলে জ্যৈষ্ঠের সূর্য চির চেনা পাকুড়ের ঘাড়ে,
অনিবার খুঁজে ফিরি তারে।
বৃষ্টিস্নাত শ্যামা মাঠে শির তুলে আমনের চারা,
বুঝে সে ইশারা।
নিচল ব্যাকুল দেহ নাঙা পায়ে সঁপে
অনেক সময় করি নিশুতির মৌনতায় ক্ষয়
মাটির মায়াবী ঘ্রাণ গা-গতরে মেখে,
কম্পিত ফিঙের লেজে বাস্তুহারা আশা-ভাষা রেখে।
প্রসারী দু’হাতে লয়ে চপলা এ বাংলার ঋণ,
বুঝেনি সে কতো অমলিন।
অবশেষে সাঁঝ আসে চারিপাশে চুপিসারে নেমে
পৃথিবী হারিয়ে যায় বহুদূর
বহুদূর –
কস্মিনকালেও যেন আসবে না এই পথে ফিরে,
রলেও অধীরে।
থেমে যায় দিবসের তান, বাড়ে আনচান,
তখন আমারি শুধু ছেঁড়া এ সেতারে
ভেসে উঠে পাকুড়ের গান!
কবি পরিচিতি
বোরহানুল ইসলাম লিটন। শিক্ষাগত যোগ্যতা এম, এ (প্রথম পর্ব)।
কবির জন্ম ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বাংলাদেশ, নওগাঁ জেলার অন্তর্গত আত্রাই থানার ’কয়েড়া’ গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে। পিতা মরহুম বয়েন উদ্দিন প্রাং ছিলেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাতা মরহুমা লুৎফুন নেছা গৃহিণী। বর্তমানে তিনি একই থানাধীন ’পাঁচুপুর’ গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
স্কুল জীবন থেকেই কবি সাহিত্যানুরাগী মানুষ। প্রকৃতির হাসি অন্তরে পুষে বড় হয়েছেন গ্রামীণ পরিবেশের শীতল ছায়ায়। প্রিয় সখ বই পড়া ও লেখালেখি। ছড়া, কবিতা, গীতিকাব্য ও অনুগল্প মিলে তার লেখার সংখ্যা প্রায় দুই হাজার এর মতো। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন ওয়েব সাইটে নিয়মিত লিখে চলেছেন।