পারমিতা ব্যানার্জি – কবিতা (তুমি কি আমার কৃষ্ণ হবে, নষ্ট জাগরণ, জমানো চিঠি, অন্য মনে হারাই, আকাশ কেন কাঁদে)

তুমি কি আমার কৃষ্ণ হবে

– পারমিতা ব্যানার্জি

ছন্দ খুঁজি নিত্য নতুন
বন্ধ ঘরের চার দেয়ালে।
রাধা হই, ভাবের ঘরে,
কৃষ্ণ ভজি মন-খেয়ালে।

তুমি কি আমার কৃষ্ণ হবে?

বসন্তের প্রথম পলাশ,
রাঙায় যখন অধর কলি;
কৃষ্ণ প্রেমের সাধনায়
মন ভরালো কুসুম হোলি।

তুমি কি আমার কৃষ্ণ হবে?

কদম নেশায় যে কৃষ্ণ
বুঁদ হয়ে রেনু মাখে গালে;
রাধার আলতো চুমুই
সাজায় স্বর্গ, প্রেম ভালে!

তুমি কি আমার কৃষ্ণ হবে?

নষ্ট জাগরণ

– পারমিতা ব্যানার্জি

রাতের দূরপাল্লার ট্রেনটা
ঝমঝমিয়ে চলে গেল।
আমি তখনও এপাশ ওপাশ করি।
দু চোখে আমার যে নষ্ট ঘুম।
মন জুড়ে জীবন জিজ্ঞাসা!
শীতের রাতে নিস্তব্ধ সিলিং…
ফ্যান ঘুরছে না যে।
রাস্তায় নেড়ি কুকুর কেঁদে উঠল।
আজ পেট ভরেনি বোধহয়।
বন্ধ ঘরের অন্ধকারে তাকাই…
মধ্য রাতে তারারা হয়তো
গল্পে মশগুল…
ওরা কুশল আদান প্রদানে ব্যস্ত।

এভাবেই কেটে যায়
কোনো কোনো বেয়াড়া রাত!
কখন যেন ভোর চারটের
ফার্স্ট লোকাল ট্রেনটার শব্দ
কানে কানে বলে, “ওঠো এবার”!
পাখিদেরও গান শুনি।
ভোর হয়।
না ঘুমিয়েও জেগে উঠি আমি।
এটাও কি নষ্ট-জাগরণ!!

জমানো চিঠি

– পারমিতা ব্যানার্জি

যাবার বেলায় _
অনেকেই বলে যায়,
‘চিঠি দিয়ো আকাশের ঠিকানায়’!
তবু জানায় না সঠিক ঠিকানা।
হয়তোবা সময় পায় না,
কিংবা ইচ্ছে করে ভুলে যায়।

সুবিশাল আকাশে
ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনেক বাড়ি!
অনেক তাদের রঙ,
অনেক তাদের কান্নার সুর!
খুঁজবো কেমন করে _
কোনটা তোমার ভালো ‘বাসা’!
কোনটা থাকবে
আমার চিঠির অপেক্ষায়।

সবাই চলে যায় _
কেউ সশরীরে, কেউ মন-ভুলে।
বুকে রেখে যায় স্মৃতির ‘মুক্তো’!
বলে যায়, ‘ভালো থেকো’!
ঠিকানা না জেনেই _
মনে জমতে থাকে
আকাশের হাজার ‘চিঠি’!!!

অন্য মনে হারাই

– পারমিতা ব্যানার্জি

গানের ওপর গান সাজিয়ে
যখন খুঁজি পুরোনো সেই ঘর,
কেবল হারিয়ে যাই!

ছিটকে যায় হাতে রাখা হাত।
কুয়াশা নেমে আসে…
মনে হয় কাঁচের দেয়াল,
আড়াল করে রাখে যত বন্ধন!
কিংবা হারাই!

পথ চলতে চলতে হোঁচট খাই,
পিছন ফিরে তাকাই…
অজানা মনে হয় সব কিছু!
নতুন করে গান বাঁধতে গিয়ে
বার বার হেরে যাই!

ভোর ছিনিয়ে ছেঁড়া কুয়াশা
জীবনকে ভাবায়…
নিজেকে তখন
কেন যে অন্য অন্য মনে হয়।
আবারো হেরে যাই!

আকাশ কেন কাঁদে

– পারমিতা ব্যানার্জি

আকাশ যখন _
তৃষায় পাগলপারা,
মাটির জল হ’ল দিশাহারা!
আকাশ পারে
চায় যেতে যে আকূল মন।
বক্ষ জুড়ে উষ্ণতা তার
চাইল আকাশ ছুঁতে।
গগন জুড়ে ছড়িয়ে গেল
হীরের কুঁচির মত
যত বাষ্পকণা।

সেই সুরেতেই
মেঘে মেঘে করলো জমা
পৃথিবীর যত গান…
ঠিক তখনই _
বাজলো উঠে শূন্য মাঝে
কী ভীষণ টংকার!!!
হয়ে যায় আকাশ পৃথিবীর
প্রেমের লেনদেন।
অশ্রুর মত ঝরে পড়ে
আষাঢ় শ্রাবণ।


কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।

ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।