সুমিত্র দত্ত রায় – কবিতা (কাঞ্চন কন্যা, তৃষ্ণা, দূরে কোথায়, যদি পাই)

কাঞ্চন কন্যা
(সনেট)

– সুমিত্র দত্ত রায়

হে কাঞ্চনজঙ্ঘা শুধু তোমারে সাজাতে
উদিত ঐ রবিপ্রভা দিগন্ত শোভাতে
আজ প্রভাতে। হলুদে আর লাল রঙে
প্রান্ত নৃত্যরত নানা বর্ণালির ঢঙে।
সম্মুখে পর্বত দেখি বাঁধা সৃষ্টি করে
যেন চায় – কাঞ্চনকে রক্ষা করিবারে।
কিন্তু কেউ স্তিমিতে কি পারে রবিকরে?
মাতিছে লজ্জিত কন্যা কাঙ্ক্ষিত শৃঙ্গারে।

কাঞ্চনের শিরেতে নব রক্তিমাভা
ধীরে ধীরে বক্ষোপরি গ্রাস করে শোভা।
নৃত্যরতা গিরিকন্যা সুবর্ণে সজ্জিত
বহু বর্ণে দেবধাম ভুষণ রঞ্জিত।
তাঁদের সে লীলাখেলা চলে দীর্ঘক্ষণ,
দৃশ্যপটে নৈসর্গিক মননে ভ্রমণ।

তৃষ্ণা

– সুমিত্র দত্ত রায়

সবুজ পাখিটা শিস্ দিতে দিতে
উড়ে গেল দূরে আকাশের দিকে,
রবিনহুড মনগুলো সব বুমেরাং
ভারাক্রান্ত মনে। নির্জনে নিস্তেজ।

কেউ বোধহয় ছিঁড়ে রেখে গেছে
রাস্তার দুধারে ফুটন্ত গোলাপ।
লাল পাঁপড়ি রাস্তায় লুটোপুটি,
পিঁপড়ের মিছিলে আমি চলেছি।

কাজ পাওয়া গেল করার মত।
চিন্তা? তাতে আমার কি দরকার?
পালের ভেড়া আগেরটাকে দেখে।
তার কাজ শুধুই পা চালাবার।

ধুলোয় লুটানো ইতিহাস আর
মুক্তির আলো কি চিনবে কখনো?
কোনো যাদুকর কি আসবে সেই
করুণ বাঁশি দিয়ে মন ভরাতে!

কিন্তু এ কি কোন বাঁচার হদিশ!
আবার প্রদীপ দাও আলাদীন,
ম্যাজিকে ছাড়া দানব, বিভীষিকা
নইলে কিছু হবার মত নেই।

দূরে কোথায়

– সুমিত্র দত্ত রায়

পর্দার আড়ালে তবু
অবিরাম কাজ গড়া,
অন্ধমনে প্রতিক্ষণ
সামান্যই দেয় ধরা।

কল্লোল প্রবাহে চলে
শিরা উপশিরা ধারা,
নাট্যরূপ চরিতার্থে
অমলিন হাসি ভরা।

অগনিত পদক্ষেপে
জীবনের আলাপন,
পুতুল নাচবে ঠিক
যতটা নাচাবে মন।

প্রথম বাতাস থেকে
কান্না শুরু স্বীয় ভোগে,
চলমান সব মোহ
বিচিত্র আত্মিক রাগে।

বলতে পারে না কেউ
কেন, কাকে ভালো লাগে!
মিলন বাসর স্মৃতি
শেষ হয় তা দুর্যোগে।

মায়ায় কায়িক শেষ
নিছক এক কল্পনা,
খেলাঘরে তালাচাবি
যাত্রা পথে কাল গোনা।

যদি পাই

– সুমিত্র দত্ত রায়

হাতের অক্ষরগুলো সাজানো হল না
বেসামাল মদ্যপের মত অবিরাম
মস্তিস্কে ছোটাছুটি, উত্তর মিলছে না।

দু একবার ভুমি কম্পনের ভীতিটা
থাকে বহুদিন। অতলে যাই না বলে
বুঝি না কাঁপুনির আকর্ষণ রীতিটা।

সামাজিক বুদ্বুদ খবর হয়, কিন্তু
কাগজের পাতা হতে হারানো চরিত্র!
পাশবিক বিচারেতে আমরাও জন্তু।

মাথার শিরায় কেন্দ্রীভূত লেখা কথা,
শিরঃপীড়ার দংশনে মূল্য যদি পায়
হয়তো গড়তে পারে নতুন কবিতা।

তাই ঘুরে মরে মন লেখনীর মোহে,
তবু মায়া বা মোহ ধরা দেবার নয়,
শূন্যতার মাঝে তাই দিন গুণি গেহে।


কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।

আমি ছেলেবেলা থে‌কে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু,  আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।