অসিত কুমার রায় (রক্তিম) – কবিতা (রাঙিয়ে দিয়ে যা, আগামী বসন্তের জন্য, ফাগুনের গান, ফাগুন আসে, ফাগুনের আগুন)

রাঙিয়ে দিয়ে যা

– অসিত কুমার রায় (রক্তিম)

ভোরের সবুজ ঘাসে শিশিরে তোকে খুঁজে এসেছি।
ছুটে গেলাম বুড়িগঙ্গার ধারে,
তুই মাঝে মাঝে মন খারাপ করে সেখানে বসে থাকিস।
না সেখানে তুই নেই।
দেখি একরাশ সবুজ কচুরিপানায় ফুটে আছে
আমার ভীষণ প্রিয় সেই একমাত্র বেগুনি ফুল;
কি করে যে তোর নজর এড়িয়ে গেল কে জানে।
বুঝলাম এখানেও তুই আসিস নি।
বাঁধের ধারে পলাশ গাছের নিচে ছুট্টে গেলাম,
হাজার পলাশে গাছে যেন আগুন লেগেছে।
না সেখানেও শুনশান একদম ফাঁকা।
আগুন ঝরানো ফুলগুলো ঝরে আছে গাছের নিচে
সব আছে শুধু তুই নেই।
আকাশের নীলে শুধু একটা একলা চিল,
চক্কর দিচ্ছে, না জানি কোন অভিমানে।

আজ যে দোল উৎসব ।
তুই কোথায় কিংসুক তোর আবীরে,
আমি শেষবারের মতো রাঙতে চাই।
আর হয়তো কোনদিন কোন দাবী করব না।
চোখে জল আসছে, বুড়িগঙ্গায় বর্ষায় ঢল যেমন আসে;
বুকের ভিতর কেমন উথলে উঠছে একটা শোকের ঝড়।

তোর গায়ের গন্ধ আমার খুব চেনা,
বুঝতে পারছি, ধারে কাছেই তুই আছিস।
দূরে দূরে না থেকে চোখের সামনে চলে আয়।
আমায় লাল আবীরে রাঙিয়ে দিয়ে যা কিংসুক।
জন্মের মতো দুচোখ ভরে শুধু তোকে দেখতে চাই ।
আয় না প্রিয় সখা আমার
এই ফাগুনের আগুন দিনে আমায় রাঙিয়ে দিয়ে যা।

আগামী বসন্তের জন্য

– অসিত কুমার রায় (রক্তিম)

​ ​ ​

তোমার চলে যাওয়াতে কি ফুল ফোটে?
ফোটেই’তো তা’নাহলে এত সুগন্ধ কোথা থেকে আসে।
পাখির উড়ালও থমকে যায় ঠিক ছবির মতন…
দুদণ্ড পাখা ছড়িয়ে ছায়া দিয়ে উড়ে চলে যায় গন্তব্যে।
তবে আমি কেন ঠিক হাল ভাঙ্গা পাল ছেঁড়া নাবিকের মতন।
তারপর…

তোমার চলে যাওয়াতে কি পাখি ডাকে?
ডাকেই’তো তা’নাহলে এত গুঞ্জন কোথা থেকে আসে।
কাউকেই তো ক্লান্ত হতে দেখি না…
কী অসীম আগ্রহে তোমায় কাছে রাখতে চায়।
হয়তো তোমার ছায়ায় মায়ায় অবসাদ কাটাতে ইচ্ছা।
তারপর…

তোমার চলে যাওয়াতে কি আকাশ সেজে ওঠে?
সাজেই’তো দিনে রাতে মেঘের ওড়না দিয়ে সাজে।
কাজলা চোখে বৃষ্টি আনে হরেকরকমের…
মাথার এলোচুল বন উপবন ভিজিয়ে সিক্ত করতে চায়।
হয়তো তোমায় আগামীর স্বপ্নে সাথে রাখবে তাই।
তারপর…
আমি রয়ে যাব শুকনো পাতার মর্মরধ্বনিতে
কিম্বা ঝরাফুলের শূন্য বৃন্ততে
কাটিয়ে দেব সময় নক্ষত্রের পতনে
অপেক্ষা আর অপেক্ষা আগামীর একটা বসন্তের জন্য।

ফাগুনের গান

– অসিত কুমার রায় (রক্তিম)

সেজন কাছে আসলেই আমি ভুল সুরে গান গাই
ভোর বেলাতে পাশে এলে ফুল কুড়াতে ভুল হয়ে যাই।

বসন্ত মাস এলেই দেখি জঙ্গলেতে পলাশ ফোটে লাল
তখন কাজ-কামেতে মন বসে না শরীর বড়ই বেচাল।

ওই যে কারা কোথায় যায় শুধু ফাগুনের গান গায়
বারে বারে আমায় ডাকে বলে নাচবি যদি আয়।

কি যে করি ভেবে মরি এ’মন তাকেই দেখতে চাই
অন্তরে তার বাঁশি বাজে বাহিরে তার খবর নাই।

কোথায় আছে কে জানে দূরের দেশে কোন ঠিকানায়
মন যে চাই পাখী হয়ে তার কাছেতেই উড়ে যাই।

ফাগুন আসে

– অসিত কুমার রায় (রক্তিম)

তোর মুখে মোনালিসা হাসি দেখলেই
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ভুল করি সব কাজে। ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​
কেন অমন করিস, জানি বলবি না কিছুই
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ প্রশ্ন শুধু উত্তর খোঁজে।

বাসন্তী রঙ শাড়ি যেই পরেছিস মেয়ে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ তখন কেমন কেমন মন।
জানি কলকে ফুলে চলকে উঠে মধু ​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ মৌপিয়ারা পেয়েছে সন্ধান।

এলো খোঁপায় পলাশ গুঁজে যেই দিলি
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ কেমন উদাস হয়ে যাই।
হাতের বাঁশি অবশ হয়ে পড়লো খসে রাই
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ বল না এখন কী হবে উপায়।
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​
তোর পায়েতে রুনুঝুনু নূপুর বাজলো যেই
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ধামসা বাজে মনের কোণে।
আকাশ জুড়ে পূর্ণিমাতে চাঁদের মধুর ডাক ​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ জানি মিলন হবে সেইক্ষণে।

ফাগুনের আগুন

– অসিত কুমার রায় (রক্তিম)

হঠাৎ দেখি ভোর সকালে টুনটুনি দুটি
ডুমুর গাছের পাতায় করছে লুটোপুটি ।
বুঝি না তার কারণ!
বুঝলাম একটু পরে,
হিমজড়ানো পাতায় পাতায়
শিশির মেখে করছে ওরা স্নান।
মুগ্ধ স্নিগ্ধ স্নানের শেষে তাকায় মুখোমুখি;
কী না কী বুঝে হটাৎ কোথায় উড়াল দিল দুটি।

নিমের ডালে শালিক দুটো,
সেই দৃশ্যে অবাক হয়ে দেখে,
আর আকাশ-পাতাল ভাবে;
এবার বুঝি আসছে ফাগুন দিন
নতুন পাতায় নততুন সুরে গান।
দূরের বনে শাল-পিয়ালে
সাজো সাজো তাই রব উঠেছে।
আমার শহর চমকে উঠে
জাগে জাগায় ওদের!
ফুটপথে শীর্ণ পলাশকে বলে – ওঠো জাগো।
রবার গাছের নগ্নতা আর যে ভালো লাগেনা!
রাধাচূড়া কৃষ্ণচূড়া পাতায় আনো সজীবতা
মনের কুঁড়ি এবার মেলে ধরো।
কলুষতা মুছে দিয়ে, ফাগুনের আগুন দিয়ে সাজাও,
আমায় আবার জিতিয়ে দাও।


কবি পরিচিতি

অসিত কুমার রায় (রক্তিম)। জন্ম ৬ ফেব্রুয়ারি, ভতেহট্ট, নদীয়া, ভারতবর্ষ। বর্তমান নিবাস, কলিকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। পেশা কবিতার সঙ্গী হওয়া।

কবির ভাষায় – “জীবন কে দারুণ ভাবে অনুভব করতে চাই। যতটুকু আলো বাতাস খুশি আনন্দ মাটি আমার বরাদ্দ এই প্রকৃতির কাছে, আমি সবটুকু পেতে চাই। আমি বুঝে নিতে চাই একটা কাঁচপোকা বা পিপিলিকার এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবার অধিকার আছে। সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে চাই না। নারী স্বাধীনতা আমার কাছে বিশেষ মুল্য নিয়ে বিরাজ করে। চেষ্টা করি তার সম্মান তাঁকে পুরোটা ফেরত দিতে। আমি আমার পরিবার নিয়ে মাছে-ভাতে দিব্য আছি। ইলিশ বড় প্রিয়। বাংলাদেশের আমি ভীষণ ভক্ত। বাবার মুখে অনেক গল্প শুনেছি ভৈরব নদীর । স্বাধীন হবার প্রাক্কালে গিয়েছিলাম, সুযোগ হয়েছিল। সেই আভাস এখনো রয়ে গেছে স্মৃতিপটে। ভালো আছি, ভালো থাকবার চেষ্টা করি। অন্যকে ভাল রাখারও চেষ্টা করি নিরন্তর।”