গোলাম রহমান – কবিতা (স্রষ্টার সৃষ্টি মহামানব, মানুষ শ্রেষ্ঠতম, বেশুমার শাহেনশাহ, ২৫শে মার্চের রাত, স্বাধীনতা জলরঙে ছবি আঁকা, বাঙ্গালীর বিষাদিত ইতিহাস, ঠনঠনে মাঠে পচাশামুক)

স্রষ্টার সৃষ্টি মহামানব

– গোলাম রহমান

এইখানে লুকায়ে ছিলেন, প্রাণী রেখেছে আড়াল করে
চিনেছে বুঝেছে প্রাণীকুল, বেরহম মানুষ বুঝেনি
চিনে নাই তাঁরে!

আঁধার জগৎ থেকে বাঁচাতে মানুষ
শান্তির দূত হয়ে এসেছিলেন তিনি
যামিনীর শেষ প্রহরে
উল্লাসে উচ্ছ্বাসে উদ্বেলিত ধরণী
জ্যোতির্ময় আলোর বিভাস গগনে গগনে!

যেই সব মহৎপ্রাণ পেয়েছিলেন পরশ তাঁহার
শুনে ছিলেন অমিয় বাণী
বিশ্বাসীগণ করেছেন অমৃত পান;
আহা! কী সুধাবাণী ঝরেছে আকাশ থেকে
মগজে মননে গেঁথে নিয়ে হয়েছেন মহান
তাঁহাদের ঠাঁই অনন্ত শান্তিময় স্থান!

স্রষ্টার সৃষ্টি মহামানব আল্লাহর প্রিয়তম হাবীব
জগৎবাসীর জন্য এসেছেন অশেষ রহমত স্বরূপ!!!

মানুষ শ্রেষ্ঠতম

– গোলাম রহমান

বাহ! চোখ কান বন্ধ করে
রূপকথা গল্পে ডুবে আছো
অচিরেই দেখতে পাবে আকাশ
ছেয়ে গেছে কালো ধোঁয়ায় ধোঁয়ায়
আলোর দেখা পাওয়া যাবে কিনা
সূর্য বলতে পারে না

অবাক হওয়ার মতন কিছু নয়
আমরা মানুষ শ্রেষ্ঠতম…

মিলি, মিলি, ন্যানোমিলি মেপে
মেপেই দাগ কাটা হয়েছে মানচিত্রে
সবুজ গ্রহের কে কোথায় আছে জেগে
মগজে মননে…

বেশুমার শাহেনশাহ

– গোলাম রহমান

এই দেশে কত শাহেনশাহ আছেন?
কোনো হিসাবনিকাশ নাই, বেশুমার!
ইফতার সামগ্রীর বাজারে গেলে
বোঝা যায় এই দেশে শাহেনশাহরা
বহালতবিয়তেই আছেন বেশ
কী ব্যাপক আয়োজন
হালিম থেকে জিলিপি সবই শাহী খাবার
আযানের আগেই শেষ, বুঝুন এবার!
কেবল এই অধম আমরা দর্শনে অর্ধ
ভোজন কম্মটি সেরে ঢুকে পড়ি খুপড়িতে!

২৫শে মার্চের রাত

– গোলাম রহমান

একগুচ্ছ রক্তরাঙা গোলাপ পেলে
তুমি যতটুকু পুলকিত
আমি তার চেয়ে বেশি আতঙ্কিত

আমি মানুষের, প্রাণীর রক্তের রঙ
দেখেছি এমনকি মাছেরও

জীবের স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টি জীবের
রক্তের রঙে খুশি হন
কতিপয় বন্য মানুষও…

শয়তানের ব্যাপারটা জানি না

লাল-সবুজ পতাকাটা দেখলে
আমার চোখের পাতা ভিজে যায়!

তুমি তো দেখনি ২৫শে মার্চের রাতটা…

পৃথিবীর ইতিহাসে ভয়ঙ্কর সব
বর্বরতার রাতকে ছাপিয়ে যাওয়া একটা রাত!

স্বাধীনতা জলরঙে ছবি আঁকা

– গোলাম রহমান

যারা ১৯৭১ দেখে নাই,
যারা একটা লাল-সবুজ পতাকার
জন্ম ইতিহাস জানে না;
স্বাধীনতা তাদের কাছে
ভেজা সবুজ কচু পাতায়
জলরঙে ছবি আঁকা…

বাঙ্গালীর বিষাদিত ইতিহাস

– গোলাম রহমান

বাঙ্গালীর বিষাদিত ইতিহাস শুরু করা যাক
পাকভারতে ব্রিটিশ শাসন আমলে সিপাহী যুদ্ধ দিয়ে
যেই সব বাঙ্গালী শহীদ বীর সেনাদের হত্যা করা
হয়েছিল বাঙলার মাটিতে ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে
শহীদের স্মৃতি ফলক ঘিরে গড়ে উঠেছে ছোট্ট একটা পার্ক
নাম ভিক্টোরিয়া পার্ক, সে এক মহা বিস্ময়!
তারপর ১৭৫৭ সাল, পলাশীর যুদ্ধে বাঙলার
স্বাধীন নবাব এর পতন এবং নির্মম হত্যাকাণ্ড;
বাঙলার মাটিতে প্রথম জন্ম মীরজাফরের।
১৯৪৭ সাল, বাঙ্গালীর কলিজার দুই ভাগ!
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি
মায়ের মুখের ভাষা রক্ষায় শত তরুণের
বুকের তাজা রক্তে রাজপথ রঞ্জিত!
১৯৬৯, আসাদের রক্তের উষ্ণতায় গণ অভ্যুত্থান!
১৯৭১ এর ২৫শে মার্চের কালোরাতে
পাকিস্থানি সেনাবাহিনীর ভয়ঙ্কর গণহত্যা!
১৪ই ডিসেম্বরে নির্মম ভাবে বুদ্ধিজিবী হত্যা!
দীর্ঘ নয় মাসে তিরিশ লক্ষ শহীদের রক্তবন্যা
আর ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়
অর্জিত স্বাধীনতার ইতিহাস লেখা হল
সোনার অক্ষরে! এখানেই শেষ…
১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্ট
বাঙালার মাটিতে মীরজাফদের পুনর্ভব
নজির বিহীন হত্যাকাণ্ড,
জাতির পিতাকে স্বপরিবারে নিষ্ঠুর ভাবে হত্যাকরা
বাঙ্গালী জাতির শেষ কলঙ্কিত ইতিহাস!

ঠনঠনে মাঠে পচাশামুক

– গোলাম রহমান

রাতে খোলা মাঠে আকাশের নীচে নিশ্চুপে দাঁড়ালে
আকাশকে খুব আপন আপন মনে হয়
সন্ধ্যা বিশাখা রেবতি অরুন্ধতী ওদেরকে
প্রেয়সী প্রেয়সী মনে হয়, মনটা পুলকে ভরে যায়
সপ্তর্ষীমণ্ডল যেন পরাণের দোস্ত হাত ধরে সারা মাঠ হাঁটি
নীল ধ্রুবতারাটায় চোখ পরলেই সোমালীর মুখ ভেসে ওঠে
আসলে ওদের সাথে মাটির কোনও সম্পর্ক নাই
তবুও অন্যরকম একটা আবেগ কাজ করে ভিতরে ভিতরে
এমাটির তারাদের খুঁজে পাওয়া খুব একটা ভার
আহা! কী কঠিন সময় পার করে যেতে হয়…

তোমাদের কেউ একজন আমার মাথায় বটচারাগাছ
বসিয়ে দাও শেকড়ঝুরি সারাটা শরীর প্যাঁচিয়ে প্যাঁচিয়ে
মাটিতে প্রোথিত হোক, আমি আস্ত বটগাছ হয়ে যাই
কৃষক গামছা মাথার নীচে দিয়ে দিনের ক্লান্তি মুছে ফেলুক
ক্লান্ত রাখাল ঠেস দিয়ে বাঁশের বাঁশিতে মধুর সুর তুলুক
পাখপাখালীর কলতানে মুখরিত হোক চরাচর
পাকা বটফলে নিবৃত্ত হোক ক্ষুন্নিবৃত্তি, পাতার আড়ালে
শান্তির পরশে ঘুমাক নিশ্চিন্তে…

তোমার বোধের কাছে হতে পারে অলীক ব্যাপার
ধারণা সঠিক
কঠিন সময়
ঠনঠনে মাঠে আমি এখন পচাশামুক…


কবি পরিচিতি

গোলাম রহমান। জন্মস্থানঃ বরিশাল।

বর্তমান নিবাসঃ ঢাকা, বাংলাদেশ, ফোনঃ ০১৭১০৮৯৫২৫০।