দয়া করে থামুন
– বিভূতি দাস
জেলের ভাতের অনেক গুণ নাম নাকি বেড়ে যায়
জেল ফেরত হলে সত্যই কি নামি কল্কে পায় ?
দিকে দিকে দেখছি তেমন এবার সত্যিটা বলুন
কোনটা ঢাকতে কি টানছেন একবার অন্তত ভাবুন।
সবকথা নয় কথার কথা প্রমাণে লাগে নথি
এটুকু ও বুঝেন না একি তেলের গতি!
চক্ষুবুজে ভাব সাগরে কতদিন! এবার চক্ষু খুলুন
বোঝেননি যা এতদিনে, এখন না হয় বুঝুন।
তুঁত বিষে পোকা মরে, গাছ ও মরে তাতেই
মেরুদন্ড ভাঙার খেলায় কে কারা যুক্ত আছো ভাই
খোঁজ খবরে এত গোঁসা, ল্যাজে হাত পড়েছে তাই!
ধুলো ওড়াও কি লজ্জা ঢাকতে? ভেবে দেখো গোঁসাই।
মেনি থেকে হুলো নড়াচড়ায় ঝরছে ঝুড়ি ঝুড়ি উকুন
কাদের অর্থে হয় মামলা মোকদ্দমা একটু বসে ভাবুন
সাফাই দিতে হুমকির দাওয়াই ঠিক হচ্ছে কি বলুন?
হাঁকডাকে সমাজ জুড়ে বাড়ছে দূষণ, দয়া করে থামুন।
চিরকালের
– বিভূতি দাস
রাজায় রাজায়, থুড়ি নেতায় নেতায় যুদ্ধ হয়
না উলু খাগড়া নয়, জনগণই মূল্য চোকায়
চোর সাধু সাধুই চোর থাকে গলায় গলায়
গনতন্ত্রে সব হয় একথা কি ভোলা যায়?
ফারাক আছে রঙে ধাপ্পা দেওয়ার ঢঙে
চলন-বলন একই রকম যে উঠেছে টঙে
জনগণ নেচে বেড়ায় খেলেও ধাপ্পা জোর
আশ্বাসেই মেয়াদ শেষ আসে নতুন ভোর।
খুনি ধর্ষক পাশাপাশি সংবিধানের কথা কয়
গাঁটকাটা ধাপ্পাবাজ সহযোদ্ধা একথা মিথ্যা নয়
গলার জোরে সমাজ সেবক গোঁজামিলে মেলায়
জনগণ পোষা প্রাণ ঘণ্টা বাজে নড়াচড়ায়।
গৃহস্থ উদর ভরায় ঢেঁকির ভাগ্যে লাথি
বিরোধ নেই কোন কালেই সর্বংসহা মতি
গরমিল সর্বকালেই চোখ ফোটেনি মানুষের
কালো চশমার অনেক গুণ চিরকালের।
শেওড়া ছায়া
– বিভূতি দাস
বসে আছি শেওড়া ছায়ে কেওড়া পানির আশে
দিনমান গেল চলে রাত্রি এলো নিদ্রা আবেশে
বিষম ঘুমে স্বপ্ন দেখি শুয়ে আছি কৈলাশে
গুরু বলেন জাগরে হতভাগা পিপড়েরা কি ভালোবাসে?
ঘুম ভাঙতেই দেখি ভীষণ জ্বালা সারা শরীর জুড়ে
কাকে রেখে কাকে তাড়াই বিষয় ব্যথা হৃদয় ফোঁড়ে
গেলে কোথায় ওগো সাঁই, ভবের মাঠে লাঙল জুড়ে
দোয়া কর এই পাগলে দাওনা মিথ্যে বাঁধন খুলে।
অজুহাতের হাত
– বিভূতি দাস
অজুহাতের হাতে বন্দী জনতা মাথা কুটে মরে আশা
একটা না হলে অন্যটা যেন আলাদীন যোগায় পাশা
নতুন আশার কথার জালে স্তব্ধ হয় প্রতিবাদের ভাষা
মানুষ পারে কি বুঝতে? নব কলেবরে আসে হতাশা।
ক্ষয়ে যাওয়া দিনগুলো বারে বারে উঁকি দিয়ে যায়
কোন অপরাধে স্বপ্নের সবুজ নিয়ত ধুঁকে মরে মরিচিকায়?
আসবে কি আলোর তরী সুজান সময়ের শান্ত ধারায়
জাগবে কি নতুন ছন্দ বইবে বাতাস জীবন পাতায়?
আর নয় অজুহাত, এগিয়ে যাবোই হাতে রেখে হাত
আমরা জনতা ভাগ করে নেবো সকল দুঃখের রাত
শীর্ণ পাতায় জাগাবো নতুন দিনের মিষ্টি আলোর সুর
কেউ বলবে না সব ঝুট জমাবোই পাড়ি বহুদূর।
আঁধারের শেষে জাগবে আলো নিয়ে বুক ভরা আশা
শুকনো মুখের ছায়ায় ফেরাবো আশ্বাস, সুখের ভালোবাসা
ভুলে যাওয়া স্মৃতি পথে অজুহাত নয় জাগবে আশা
ভালো থাকার অঙ্গীকারে জেগে ওঠো মুছে ফেলে হতাশা।
ক্ষুধিত জঠরের ভীষণ আগুন ঝলসে দেবেই অজুহাতের হাত
শয়তানের হাত ও ভাববে, নিশ্চয়ই কাটবে অন্ধকারের রাত
মানুষের ভুলে থাকা সাময়িক, ঘুম ভাঙলেই জাগে আশা
পরিচ্ছন্ন আশা-ই জীবনের প্রতীক, পায় মানুষের ভালোবাসা।
কাব্য কনিকা
– বিভূতি দাস
(১) কথার আঁচ
কথার আঁচে ফুটছে ডাল
মান্যবরে বিছায় জাল
সাধারনে বুঝবে কবে হাল
ঝলসে গেলে ছাল!
অসত্য কথার লক্ষ্য ঢালে
কাদের ফেরে হাল?
(২) পূর্ণচ্ছেদ
বাড়ছে আঁধার কটু কথায়
পূর্ণচ্ছেদটা গেলো কই!
সমাজ জীবন জঞ্জালের গাদায়
পুড়ে হচ্ছে ছাই
কারা লাগালো কিসের মায়ায়
কেউ দেখেছ ভাই?
কবি পরিচিতি

বিভূতি দাস। অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক। জন্ম ১৪ই ফেব্রুয়ারী, অভিভক্ত ২৪ পরগনার কৃষক পরিবারে।
প্রকৃতির কোল ছুঁয়ে গ্রামে বেড়ে ওঠা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। ছাত্রাবস্থা থেকেই সৃষ্টির সাথে প্রেম। নেশা-লেখালিখি এবং ভ্রমণ। বর্তমান নিবাস – সোনারপুর, কলকাতা –৭০০ ১৪৯, ভারত।