ভাসি শুভেচ্ছায়
– পারমিতা ব্যানার্জি
এক পলাশের মাসে
জন্মেছি আমি।
তখন __
মলয় বাতাস ঘিরে ছিল,
হয়তো চারপাশে।
বুঝেছি কি বুঝিনি তাই
ভাসি ফাগুনের উচ্ছাসে।
কোন এক কবির কথামতে,
আমার চলার পথে
জানি না কোনো
সর্বনাশের ইঙ্গিত ছিল কিনা।
তবুও আমি জানি
একটা জন্মদিন আসা মানে
জীবনের একটা বসন্ত
হারিয়ে ফেলা।
হয়তোবা এটাই ‘সর্বনাশের
নামান্তর’!!!
বুঝি না, বুঝি না
এভাবেই জীবন চক্রে
জন্মদিন আসে।
ফাগুনে আগুন জ্বলে।
এগিয়ে যাই কিনারে..
সবাই তবু হেসে বলে
“শুভ জন্মদিন”!
শুভই হবে হয়তোবা।
বোবা চাওয়া
– পারমিতা ব্যানার্জি
একটা ভীষণ বোকা মেয়ে,
জীবন আঁকতে চাইতো!
অনেক ভালবাসায় ছুঁয়েও
সত্যি সে প্রেমই খুঁজতো!
সেই মেয়েটা, সেই মেয়েটা
নিছকই যে সাধারণ।
হাজার ভীড়ের মধ্যেও যে
তার অন্য একটা মন।
একলা থেকেও সবসময়ই
তাদের কথা ভাবতো।
ভালোবাসা বিকিয়ে যারা
ভাতের চিন্তা করতো!
সেই মেয়েটা, সেই মেয়েটা
বুনলো একটা বাসা।
সত্যি বাঁচা হারিয়েই মেয়ে
পোড়ালো সেই আশা!
বুঝলো জীবন যে রঙ্গমঞ্চ,
অভিনয় যেন শেষ কথা।
বোকা মেয়ে রইলো বোবা,
মিথ্যে হ’ল জীবন গাঁথা!
বসন্ত এলো গেলো
– পারমিতা ব্যানার্জি
কত না বসন্ত গেল __
কখনো হোঁচট খেতে খেতে,
পায়ে হেঁটে।
কখনো সুখের মাঝে
দুঃখটা চিনে, কেঁদে কেটে!!
কত না বসন্ত গেল __
লুকোচুরি খেলতে খেলতে!
এভাবেই বসন্তরা চলে যায়।
ফিরেও আসে
নিয়ম মেনে, হয়ে নিরুপায়।
যৌবন একদিন
বসন্তে পলাশ শিমুল নিয়ে
খেলা করেছিল হেলায়,
সোনাঝুরির হাটে!
ভেবেছিল,
বসন্ত বুঝি বারোমেসে।
প্রেম আজ আসে
দুচোখে চশমা এঁটে
জীবনের সন্ধ্যার ধার ঘেঁষে,
পলাশের ঘ্রাণ খোঁজে
নির্জন দুপুরে।
বসন্ত এভাবেই রয়ে যায় _
অগোচরে!
খেলার ঘনঘোরে
– পারমিতা ব্যানার্জি
খেলা_
সে তো চলছে…
চলবে এবং চলবেই!
শুরু থেকে শেষ
খেলা চলে ঘনঘোরে!
সে যে হাত পা নেড়ে
শুরু বোবা হাসি কান্নায়।
পরে খেলনায় __
আর সঙ্গী হলে মন্দ নয়!
খেলা খেলার
পাঠ শিক্ষার মাঝে,
গড়ে নিজেকে
নিজেরই ছত্রছায়ায়!
যেন ভোরের সূর্য খেলা!
মধ্য গগনে,
প্রখর হও আপন তাপে!
জাহির করো…
জেতার খেলায়
মত্ত থেকো নিজেই!
জুটিয়ে সাথী
হও যে পাগলা ঝোরা।
শেষের খেলা__
ভয়ঙ্কর সুন্দর!
নিজেকে জিইয়ে রাখা
যেন দরকার!
মায়ায় ছায়ায় ঘিরে __
গোলপোস্টের জালে।
সাঙ্গ হবে খেলা
নীরবে সন্ধ্যা-নীরে!
সমুদ্র নেশা
– পারমিতা ব্যানার্জি
সমুদ্র,
তোমায় দেখি এবং দেখি।
তাই তো আবার কাছে এলাম।
বারে বারে এই ফিরে আসা….
জানি না কী যে প্রত্যাশা!
চোখের তৃষ্ণা মেটে না যে আর।
সমুদ্র,
তোমায় দেখি আর দেখি…
কখনো ঘন নীল,
কখনো পান্না সবুজ জলে তুমি
এক অনন্য সুন্দর।
আলাদা আলাদা অনুভূতি
তোমার জলের কানায় কানায়!
সমুদ্র,
তোমায় দেখি, শুধুই দেখি।
কিছু তো চাইবার নেই আমার।।
তবু তোমার ঢেউ
ছুটে ছুটে আসে যেন __
হয়ত ছুঁতে চায় আমায় একবার।
এ যে আমার অহঙ্কার!
কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।
ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।