হঠাৎ বৃষ্টি
– সুমিত্র দত্ত রায়
উত্তাপ বাড়ছিল ক্রমশঃ
আগুনে কড়াই মাঝে ঘি।
হেঁটে বাদাম খাবার মত
বসে, নির্জন লেক পারে।
উথাল পাথাল হাওয়ার
গাছের দোলাগুলো মনে।
এখন বাতাস কিছু কম
নড়েচড়ে দু ডাল ঝোঁপে।
হঠাৎ বৃষ্টিতে রিমঝিম
টলমল পথ বেয়ে চলা।
পিচ্ছিল রাস্তাও কর্দমাক্ত
ডালপালাগুলো পরিশ্রান্ত।
দূরে রাখাল বাঁশি বসন্তে
শীতল আবেশে মুক্তধারা।
সবুজ ক্ষেতে স্পন্দন জাগে
চেতনাতে সৃষ্টির উল্লাস।
হাত খোলা
– সুমিত্র দত্ত রায়
একদিন এক কবিবন্ধু আমায় বললো
‘ফালতু কাব্য ছেড়ে এবার হাত খুলে লেখ’
অনেক চেষ্টা করেছি, পারিনি…
সেই কাব্যই শুধু ব্যঙ্গ করেছে বারবার।
এ শতাব্দীর প্রথম বছর পঁচিশে জুলাই
কেরালার কোথাও কোথাও আশ্চর্যভাবে
রক্ত বৃষ্টি হয়েছিল, সত্য কাহিনী।
তাই নিয়ে জ্যোতিষ মতবাদ, বিজ্ঞান চর্চা,
মোটের উপর কত্ত গবেষণা!
কিন্তু আজো প্রতিনিয়ত কতো রক্ত যে
হৃদয় গহ্বরের থেকে বেড়িয়ে
লুটোপুটি খায় কোনো পাষান জমিতে,
হিসেবেই আসে না।
হিসেবে আসে না
কিভাবে তরুনীদের রক্তে
ক্ষেতের ধার বা নির্জনতা কলুষিত হয়।
একবার দেখি পরিচিত কিনা? চলে যাই,
খুব বেশি হলে “আহা” বলে সহানুভূতি।
কিম্বা কোন সড়ক দুর্ঘটনায়
যখন রক্তের বন্যা বয়ে যায়,
তখনো শুনি কাছাকাছির লোকেরা বলে,
“দাদা,একটু সাইড দিন,
অফিসে লেটমার্ক পড়ে যাবে।”
এসব রক্তবৃষ্টি নজর এড়িয়ে যায় !!
জানি না এবারও লেখা হাত খোলা হলো
না কি সেই,
কবিতাই!!!!
হারায়ে খুঁজি
– সুমিত্র দত্ত রায়
প্রতিটি নিশ্বাস তোমায় দিয়েছি,
খেলা ভেবে অবিশ্বাসে হারিয়েছ।
আজ রুদ্ধশ্বাসে তৃপ্তি খুঁজলেও-
একসুরে বাঁশি আর বাজবে না।
ভাসতে ভাসতে ক্লান্ত হয়ে ভাব,
পাশাখেলার বাজীতে লাভ বেশী!
চিরকাল তো লাভক্ষতি গুনেছো,
দেখনি তো রঙিন শালুক কলি।
জোয়ার হলে জলেতে মাছ আসে,
ধরা দেয় ভাঁটার টানের মাঝে।
সেই ভাঁটাই পলি বয়ে আবার-
সবুজের বিপ্লবে মন মাতায়।
জোয়ার ভাঁটায় ভরা এ জীবন,
তবু জোয়ার হার মানে অন্তিমে।
ভাঁটাই কেবল চিরন্তন ধারা,
যেথা নদী হেসে সাগরেতে মেশে।
ভোরের আলোতে
– সুমিত্র দত্ত রায়
এক একটা পাথর কেটে পথ
উঁচু পাহাড় ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন
পর্ণমোচী গাছের ছড়ানো রথ,
বনফুল অযত্নে বাড়তে থাকে।
মায়াময় ঝরনার ঝরঝর
ঝিল্লিঝঙ্কার ছেড়ে দেখছি,
লবঙ্গলতিকা এক কুঁড়ি
হারাবার কোন বাঁধা নেই।
পাহাড় টিলায় সূর্যোদয়
কুয়াশা সরতে রাজি নয়
তবু যেতে হয়। নিমরাজি
মেয়ে, সূর্যের আলোয় রাঙা।
নয়া হাতের স্পর্শে ব্যাকুল মন
উষ্ণ হতে উষ্ণতা কাঙাল,
ক্যামেলিয়া বেনীবন্ধনেতে
সমস্ত দুরন্ত বাতাস নিশ্বাসে।
বিশ্বাস উজার করে যাত্রা পথ
কিন্তু সবই হারাতে হবে আজ,
একবারের ঝটিকা নিবেদন
না ফুটতে শেষ করে কুঁড়িটাকে।
রোজ গাড়ি আসে তবু চলে যায়
বিনুনি খালি পড়ে উষ্ণতা কই?
নয়া সূর্যতো লালও হতে পারে
ভোরের আলোয় দোর বন্ধ তার।
কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।
আমি ছেলেবেলা থেকে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু, আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।