অনন্ত অজানায়
– গোলাম রহমান
হিম শীতের খোলস থেকে মুক্ত প্রাণ
পৃথিবী আজ ফাগুন আবীরে রঙিন!
বহিছে ধীরে দখিনা সমীরণ
পাখিরা কণ্ঠে ধরেছে সুমধুর গান!
গাছের যে সব শাখা ঝরায়েছে হলুদ পাতা
সেখানে আজ দেখা যায় নব কিশলয়।
ঘুমন্ত কুঁড়িরা উঠিছে জেগে নতুন স্বপ্নে,
ধরেছে মেলে সুবাসিত রঙিন পাপড়িদল;
পরাগায়নে ব্যাকুল নীল ভোমরা উচ্ছ্বসিত
গুঞ্জরণে গুঞ্জরণে মোহিত চরাচর!
পাখিদের ঠোঁটে ঠোঁটে সোনালী খড়।
নির্জন দুপুরে ঘুঘু ডেকে যায় অবিরাম
প্রাণ করে আনচান আনচান।
কোকিলারে কহিলাম শুনাও তোমার
সুমধুর গান, হাসিয়া কহিল-
‘লোকে ডাকে মোরে কুহকিনী বলে
তুমি শুনতে চাও গান; বড় বিস্ময়’!
কহিলাম তারে- কুহকিনী, তোমার মোহন
সুরে সুরে আবেশিত হয়ে গ্রীক পুরাণের
নাবিকের মত হারিয়ে যেতে চাই অনন্ত অজানায়!
বসন্তগান
– গোলাম রহমান
ইদানিং কথারা চড়ুই পাখির মত
ঝাঁক বেঁধে উড়ে যায় নিরুদ্দেশে
বুকটা চৈত্রের শুকনো বিলের মত
খাঁ খাঁ করে! মড়া নদীর বুকে এখন
গরু ছাগল হেঁটে বেড়ায় আর কচি কচি
ঘাস খায়, ছায়ায় শুয়ে আরামে যাবর কাটে।
আমার কিচ্ছু করার নাই
একা একা হাঁটি মেঠো পথে
সবুজ গাছের ডালে পাখিদের বাসা খুঁজি
নীল বর্ণের ডিম খুঁজি, পাখির ডিম।
হয়তোবা একদিন ডিমের খোলস ভেঙ্গে
চিঁচিঁ করে উঠবে ছানারা…
শীতের কাঁথা উলটে লিখব বসন্তগান
তুমি শুনবে কি শুনবে না, জানি না
জানার এতো প্রয়োজন বোধ করি না
অবিরাম লিখতে থাকব কেবল তোমার জন্য!
গহীনের শব্দ
– গোলাম রহমান
আদিমতম গুহার গহীন থেকে
অদ্ভুত শব্দ শুনতে পাই
সেটা কি যন্ত্রণার আর্তনাদ,
নাকি অট্টহাস্য;
আমার শ্রুতিযন্ত্র ঠিক আলাদা করতে পারছে না
মানুষ হিসেবে এটা আমার বড় ব্যর্থতা!
বসন্ত বসন্ত খেলা
– গোলাম রহমান
বসন্ত এসে গেছে ধরায়,
শিমুলের নরম শাখায়
রক্তিম ফুলের বুকে
আগুনের ছায়া!
কচি বাতাবিলেবুর ঘ্রাণে
মৌ-মাছিরা দিশেহারা।
কোকিলের কুহূ স্বরে
বিভ্রান্ত কাক
বুকের উষ্ণতায় ডিম ফোটায়,
কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফুড়ুত!
রক্তমাখা বর্ণমালা
– গোলাম রহমান
একুশ
অ আ ক খ
মায়ের কোলে সন্তানের লাশ
আঁচল ভরা রক্তমাখা বর্ণমালা
আহ! মরি বাঙলা ভাষা
আমার মায়ের ভাষা…
আগ্রাসন
– গোলাম রহমান
যতো কলি ধরেছিল জীর্ণ লতা গুল্মে
উহারা সব পড়েছে ঝরে,
আলো-জল-মাটি এতোটুকু ভালোবাসা
পারেনি দিতে তাদের
শিমুলশাখে ফোটে রঙিন ফুল অগণন
মুগ্ধতায় বেভভুল
জানো নাকি কতোটা গভীরে তার শিকড় আর মূল
আগ্রাসন! আগ্রাসন!! আগ্রাসন!!!
কবি পরিচিতি

গোলাম রহমান। জন্মস্থানঃ বরিশাল।
বর্তমান নিবাসঃ ঢাকা, বাংলাদেশ, ফোনঃ ০১৭১০৮৯৫২৫০।