আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও বইমেলা – মোংলা – ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ( স্লাইড শো – দেখতে উপরে ক্লিক করুন)
সম্পাদকীয় নিবন্ধ – যোষেফ হাজরা
ভাষা শহীদের স্মরণে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যথাযথ মর্যাদায় এবারেও (২০২৪) পালিত হল মোংলা পোর্ট পৌরসভা ও আশেপাশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের প্রভাত ফেরি, আলোচনা সভা ও বইমেলার আয়োজনের মধ্য দিয়ে।
পৌর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে মোংলা উপজেলা প্রশাসন ও মোংলা পোর্ট পৌরসভা কর্তৃপক্ষের আয়োজনে মোংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র ও পৌর আ’লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আঃ রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি বাগেরহাট-৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য বেগম হাবিবুন নাহার এমপি তিনদিনব্যাপী একুশে বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৫টায়। উদ্বোধনের পরে বইমেলায় বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন সংসদ সদস্য বেগম হাবিবুন নাহার।
চাঁদপাই মেছেরশাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও চাঁদপাই মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোংলা সরকারি কলেজ, আজিজভাট্টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মোহসিনিয়া আলিম মাদ্রাসা, মোংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হলদিবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হলদিবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহ মোংলা এলাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ বছর ভাষা দিবস পালিত হয়েছে বিশেষ উদ্দীপনার সাথে।
তিন দিনের (১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ শে ফেব্রুয়ারি বিকেল পর্যন্ত) প্রতিদিন বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থী, পাঠক এবং জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে মেলা প্রাঙ্গণ। বইমেলার প্রথম দিনের বিকাল ৩টা থেকেই উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এছাড়া এই উদযাপনের বিভিন্ন দিনে কবিদের স্বরচিত কবিতা পাঠ; কবিতা আবৃত্তি, রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতা; নৃত্য ও সঙ্গীত সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণীর আয়োজন ছিল। এবারের বইমেলায় ২০টি স্টল বসেছে (গাঙচিল, তিলোত্তমা প্রকাশনী, মোংলা সাহিত্য পরিষদ, দখিন হাওয়া সাহিত্য পরিষদ, জসিম বুক ডিপো, ইমন বুক ডিপো, মোংলা বুক হাউস, ছাত্র বন্ধু লাইব্রেরি)। এছাড়া এখানে প্রদর্শনীর জন্য স্থান পেয়েছে ক্রীড়া সংগঠন জুস্ট জোন মোংলা, বন্ধু মহল ক্রীড়া চক্র, মোংলা টাইমসের মেডিক্যাল ক্যাম্প, পৌরসভার লাইব্রেরি সহ এলাকা ভিত্তিক ছোট পাঠাগার ও ক্ষুদ্র কুঠির শিল্প।
বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এছাড়া মোংলা সাহিত্য ঘরানার সর্বপ্রথম রহস্য রোমান্স ও ক্লাসিক ম্যাগাজিন গ্রহণ করেছে জনাব হাবিবুর রহমান ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। লিটল ম্যাগাজিন হিসেবে তিলোত্তমা প্রকাশনী মন্ত্রী ও নেতৃবৃন্দদের কাছ থেকে ভূয়সী প্রশংসা লাভ করে। মেলার প্রথম দিন থেকেই দর্শনার্থীদের ভীড় ছিল লক্ষ্যণীয়। বইমেলার পাশাপাশি শহীদ মিনার চত্বরের মুক্ত মঞ্চে চলছে অমর একুশের নানা কর্মসূচিও। শান্ত বিকেলে কবিদের স্বরচিত কবিতা পাঠে অংশগ্রহণ করে শুক্লা বোস, আসমা আক্তার কাজল, যোষেফ হাজরা, দিপন মন্ডল, শেখ মোঃ সাইফুল্লাহ, শামিম হাসান, রেজাউল বিশ্বাস, অধ্যাপক মনোজ বিশ্বাস সহ গুণীজন। সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের তিন দিনে যথাক্রমে আসর জমিয়ে রাখে সুর ও বাণী শিল্পী গোষ্ঠী, কলতান শিল্পী গোষ্ঠী ও উপজেলা সম্মিলিত সংস্কৃতি পরিষদ। করোনা পরবর্তীকালে এই উৎযাপনে জনসমাগম ছিল স্বতঃস্ফুর্ত এবং চোখে পড়ার মতো।
এছাড়া শহীদ মিনারে আল্পনা করতে সহায়তা করে গার্লস স্কুলের শিক্ষক বৃদ্ধ এবং তিনদিন ব্যাপী পৌরসভা কতৃক মশা তাড়ানোর স্প্রে ব্যবহার করা হয়।
এ বছরের ভাষা দিবস মোংলার ইতিহাসে বিশেষ স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে। ভাষা আন্দোলন, শিল্পকলা, ভাষা ও সাহিত্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এবারের একুশে পদক পেয়েছেন ২১ জন – তাদের মধ্যে মোংলার প্রয়াত কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (মরণোত্তর) ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘একুশে পদক’ গ্রহণ করেন রুদ্রের পক্ষে তার অনুজ ডা: শেখ মো: সাইফুল্লাহ। তিনি রাষ্ট্র স্বীকৃত এই সম্মাননা পেলেন মৃত্যুর ৩২ বছর পর। এছাড়া তার স্মরণে রুদ্র স্মৃতি সংসদ মোংলা বইমেলাতে অংশগ্রহণ করে। কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ১৯৫৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং মাত্র ৩৫ বছর বয়সে ১৯৯১ সালের জুনে মৃত্যুবরণ করেন। এই সংক্ষিপ্ত সময়ে বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান বাংলাদেশে বিশেষ পরিচিত লাভ করে। তার কবিতা ‘বাতাসে লাশের গন্ধ’ এবং গান ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে বাংলাদেশ ও পার্শবর্তী দেশ ভারতেও।
পরিচিতি

যোষেফ হাজরা। ছদ্ম নাম তারুণ্যের কবি।
আমি আমার জীবন গঠনের সময় বহু জায়গার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলাম। শহরের হাওয়া বা মফসলের জীবন এমনকি উত্তর আর দক্ষিণাঞ্চলের জীবনধারার ছোঁয়া আমি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছি। আমার জন্মস্থান মোংলার স্বনামধন্য সেন্ট পলস হাসপাতালে। ১লা মে জন্ম হাওয়ায় ফাদার মারিনো রিগন আমার নাম যোষেফ (আধুনিকায়নে যোসেফ) রাখে। পিতা তাপস হাজরা, মাতা এন্ড্রো রিনা নাথ।
আমি প্রথম যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “আমাদের ছোট নদী” কবিতা পড়ে তার সম্পর্কে জানি তখন থেকেই তিনি আমার অনুপ্রেরণা। এ জন্য চিত্রকলা, সংগীত, আবৃত্তি, অভিনয় ও পরবর্তীতে সেন্ট পলস স্কুলের লাইব্রেরি ও বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অপার সুযোগে লেখালেখির হাতে খড়ি দেই। সকল শিল্প-সংস্কৃতি থেকে আমি লেখালেখি করতে বেশি ভালবাসি। কারণ মনের কথা সম্পূর্ণরূপে ব্যক্ত করে, ভাষার জাদুকারিত্বে, জ্ঞান ও দর্শনের যে সমন্বয় হয়, সেই আত্মদর্শনে সম্পূর্ণ আত্মতৃপ্ত করতে সক্ষম। আমি যদিও রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব মানি তবুও তার ধাঁচে আমি লিখি না। আমি কাব্য ও রচনায় অন্যান্য ঢং রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করি যাতে কেউ পড়ামাত্রই বুঝতে পারে এই লেখনীর স্রষ্টা কেবলমাত্র আমি।
কবি হিসাবেই বেশী পরিচিত হলেও যোষেফ হাজরার প্রতিভা বিভিন্ন ধারায় ফুটে উঠেছে – উপরে প্রদর্শিত ছবিগুলি শিল্পী হিসাবে তার সেই প্রতিভার অন্য আরেকটি পরিচয়।