শেষ পাতার ছবি
– পারমিতা ব্যানার্জি
এক জীবনে
আমি বেঁচেছি অনেকবার!
যেদিন তুমি আমায়
পাঠিয়েছিলে__
একলা একটি পাতার ছবি।
সেদিন আরও একবার
বাঁচার স্বপ্ন দেখলাম আমি।
“শেষ পাতা”র গল্পটা খুঁজি!
সেই শেষের পাতাটা__
যেটা আমাকে বাঁচতে শেখায়।
সেই পাতাটার ছবিই কী
তুমি পাঠিয়েছিলে!!
কেন পাঠালে?
আমি তো বাঁচতে চাইনি।
তবু কেন লোভ দেখাও?
কী জানি __
আমি সত্যিই হয়ত বাঁচতে চাই!
তাই স্বপ্ন দেখি বাঁচার _
বাঁচি বারবার ।
কথা কও
– পারমিতা ব্যানার্জি
অতীত সভ্যতায়,
সুঠাম দেহের উদ্ধতায়
আঁকা ছিলে জীবনের কবিতায়
সুর লগ্ন পাতায় পাতায়।
ঝর্ণার শব্দের বিষণ্ণতায়
তুমি ছড়িয়েছিলে শিরায়।
বরফের উষ্ণতায়
দীপ জ্বলে না যে হায়!!
তবু রচনা হয় প্রেম, আবিলতায়!
ঘুমন্ত সভ্যতার গরিমায়
পাখি জাগে কাকজোছনায়,
শেষ বিকেলের মায়ায়।
তাবাকোশি
– পারমিতা ব্যানার্জি
দেখে এলাম
ছোট্ট একটি পাহাড়ী গ্রাম,
নাম তার “তাবাকোশি”।
পাহাড়ের ঢালে
চা বাগান আর তাবাকোশি।
কাছাকাছি মেশামেশি।
গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলে
পাগল-পারা পাহাড়ী নদী,
মিষ্টি মধুর সুরে গান গায়।
চঞ্চল নদী “রম্ভোং”
ছুটে চলেছে হোম স্টে ছুঁয়ে।
মুগ্ধ আমি।
নদী গান গায়, গল্প বলে,
যখন পাশে এসে বসি।
মন কেমন করা গ্রাম,
এই অপরূপ “তাবাকোশি”।
প্রাণ ভরা ভালবাসা নিয়ে
তবু ফিরে আসি।
মেঘের দেশে
– পারমিতা ব্যানার্জি
ঘুমের দেশে
ঘুমিয়েছিলাম কাল__
পেরিয়ে সে নীরবতা
রাত ফুরিয়ে
আবার এলো সকাল!
পাইন বনে চলেছে
মেঘের লুকোচুরি খেলা!
থোকা থোকা কুয়াশারা
উদাসী আনমনা,
আকাশের রং করেছে চুরি!
যেন কতই বাহাদুরি!
ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ
ঘরে উঁকি দিয়ে
জাগায় আমার ঘুম!
মনটা তখনই হারায়
পেয়ে মেঘের চুম!
বৃষ্টি থামার পরে
(ট্রায়োলেট)
– পারমিতা ব্যানার্জি
ভাদু আকাশে ছেঁড়া মেঘের ওড়াউড়ি।
শরৎ ভাসে সুরে, বৃষ্টি থামার পরে।
কাশ বনে বাউল মন যে গ্যাছে চুরি!
ভাদু আকাশে ছেঁড়া মেঘের ওড়াউড়ি।
মেঘে আর সূর্য্যিতে খেলছে লুকোচুরি।
খেলা শেষে মেঘ ফিরবে আপন ঘরে।
ভাদু আকাশে ছেঁড়া মেঘের ওড়াউড়ি ।
শরৎ ভাসে সুরে, বৃষ্টি থামার পরে।
দুই পংতির পাঁচ কথা
– পারমিতা ব্যানার্জি
(১)
উড়িয়ে পাল চলছে তরী ।
নেই তো ঘাটে বাঁধার দড়ি!
(২)
ভেসে ভেসে চলি নিরুদ্দেশে।
জীবন খুঁজি তবুও বিশ্বাসে!
(৩)
গুমোট ঘরে নেই তো সুখ।
মনের মেঘেই তোমার অসুখ!
(৪)
বৃষ্টি শেষে জানলা খোলো ।
মুক্ত বাতাস জীবন পেলো।
(৫)
শিকড় যতই গভীরে যায় __
ইতিহাসের পাতা প্রাণ পায়!
কবি পরিচিতি
পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।
ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।