বিভূতি দাস – কবিতা (কবিতার মেলা, কি কথা বলে গেলে, চট জলদি, মন্ত্রী উবাচ, উপকার)

কবিতার মেলা

– বিভূতি দাস

কবিতার টানেই ছুটে এলাম ভীষণ জরুরী কাজ ফেলে
কবি বললেন মঞ্চে উঠে উদ্দেশ্যটা ঠিকঠাক না বোলে
জন্ম নক্ষত্রের অবস্থান সহ ধর্ম কর্ম ইত্যাদির কথা
সঞ্চালক বলেছেন সময় বাঁধা, নিবেদনে ছোট্ট দুটি কবিতা
বিশ পংতির দুটি ছোট্ট কবিতা, অণু হিসাবে ধরা যায়!
স্মারক হাতে বিজয়ীর হাসি, সময় যায় ছবি তোলায়
শ্রোতা-কবিরাও বুঝতে পারেন পরে কি? ঋদ্ধ অভিজ্ঞতায়
তবুও কবিতার মেলা বসে কবিতা হাসে সাহিত্য সভায়।

কবি নামলেন বসলেন পিছনের দিকে চায়ের পর্ব সেরে
কবিতা চলছে কবিকুল শুনছে গুঞ্জন সত্তেও কানখাড়া করে
ফাঁকা চেয়ারের দিকে তাকিয়ে অনেকে, মঞ্চে পাট চলছে
বাস্তব চিত্র ক্যামেরার চোখে কবিমনে কি ছায়া ফেলছে?
কবি ও কবিতার মধ্যে মাথা তুলছে বেসুরো আলাপন
বিনীত সঞ্চালকের অনুরোধে গুঞ্জন থামান অবশিষ্ট গুণীজন
উসখুস করছে হাতে মোবাইল কাগজ এবার কার ডাক
আয়োজক গুণীজনেরা ও জানেন কারা শুনবেন শেষ ভাগ।

কি কথা বলে গেলে

– বিভূতি দাস

জল ভরা দু-চোখে
অভিমানে কি কথা বলে গেলে
দেখি না আগের মত খিলখিলিয়ে
হাসো না গোলাপ ছুঁয়ে দিলে
প্রিয়তমা … কথা বল
থেকো না অভিমানে চুপ করে।

ভেবেছি তোমায় চির পূর্ণিমা রাত
কখনো ভাবিনি মিটিবে না সাধ
যখনি চেয়েছি এসে ধরা দিয়েছ
দুঃখ গুলো সরিয়ে দিয়ে
কথায় সুরে এ হৃদয় ভরেছ
আজি এ স্মরণের মধু দিবসে
কেন হৃদয়ে নামে আঁধার রাত।

মনের বাগিচায় রেখেছি গোলাপ সাজিয়ে
বাজে না মন বীনা তোমার নূপুর বিনা
কলম আঁকে না ছবি সময় বয়ে যায় নীরবে।

চট জলদি

– বিভূতি দাস

চট জলদি জানিয়ে দেনা সব লেঠা চুকে যাক
যার যে স্থান মঞ্জুর হয় সেখানে পড়ে থাক।

রোজ রোজ কচকচি ঠ্যালাঠেলি এবার ভন্ডামি বন্ধ কর
হরে নিয়ে হরিহরি মিথ্যের বেসাতি লুঠপাটের নিশ্চিন্ত ঘর।

বুড়োভাম বে-আক্কেলে শয়তানি মনস্কাম পুষেছিলি মনে
বর্তমান ভবিষ্যৎ সব বিকিয়ে থাকছিস বনে।

আর কতদিন থাকবি কালো চশমায় চোখ ঢেকে
গলার ঐ গামছা ধরে এবার মারবে লোকে।

ছাগল বাচ্ছার তিড়িং বিড়িং আর কতো সহ্য হয়
লজ্জার মাথা খেয়ে তর্ক করিস মনে নেই ভয়!

চট জলদি জানিয়ে দেনা থাকলে পাপের ঘরের খবর
যা হবার হয়ে যাক, চাইছে মানুষ দুর্নীতির কবর।

নিরাপত্তার ঘেরাটোপে বিনামুল্যের খাবারে ও নেই লজ্জা
সাধারনের ঘামে ভেজা অর্থের যোগানে হলেও সব সজ্জা।

মন্ত্রী উবাচ

– বিভূতি দাস

মন্ত্রী মশাই বলছে শুনি শপথ নিয়ে ধম্ম কথা
পাপের ভাগি নয়রে আমি, আমার খাতায় সাদা পাতা
সমাজ সেবায় রাখিনি ত্রুটি ভোটই আমার ভাগ্য দাতা
কাঁদলে মানুষ সান্তনা দিই মানুষের জন্যই মাথা ব্যথা।

দিনে দিনে বদলায় রঙ মানুষের সাথে দূরত্ব বাড়ায়
মানুষই হয় চক্ষু শূল মধুর ভান্ডে নজর গড়ায়
নিয়ম নীতির পাঠ চুকিয়ে হাত পাকিয়ে ছক্কা হাঁকায়
গরীবের প্রাপ্যে সম্পদ বৃদ্ধি দলের কাছে মান্যতা পায়।

মন্ত্রী মশাই রাজার জামাই থাকলেও মানুষ আগের জায়গায়
দালাল সান্ত্রী ঘিরে রাখে জনতা দেখলেই দূরে সরায়
মন্ত্রী খোঁজেন আগামীর জয় ছোট বড় হাজার চামচায়
জয়েই মেলে লাভের বহর , হলেও তা জনতার টাকায়।

মন্ত্রী মশাই বলেন তবু স্বচ্ছতাই আমার শেষ কথা
কথা শুনে হাসছে শেয়াল ঝোপে ঝাড়ে যথাতথা
মাথা যখন বেড়া ভাঙে ধম্ম কথা কে আর মানে
চাটলে শেয়াল মধুর ভান্ড বাঘ কি বসে আঙুল গোনে?

উপকার

(ট্রায়োলেট)

– বিভূতি দাস

গোষ্ঠীতে সমাজে মানুষের অনুভবে একই ভাবনায় ভিন্ন অবস্থান
তবুও লক্ষ্য সকলের নাকি এক সামাজিক জীবের উপকার
অভিজ্ঞতা বলে খুড়োর কলে সভ্য লুটেরাদের নিরাপদ সহবস্থান
গোষ্ঠীতে সমাজে মানুষের অনুভবে একই ভাবনায় ভিন্ন অবস্থান।
প্রতারকের শ্রেণীবিন্যাসে মুগ্ধ চিত্ত, তবুও দুঃস্বপ্নের নেই অবসান
সুসংঠিত উপকারের মুনাফায় ধস্ত জনজীবনে নামে নিকষ আঁধার
গোষ্ঠীতে সমাজে মানুষের অনুভবে একই ভাবনায় ভিন্ন অবস্থান
তবুও লক্ষ্য সকলের নাকি এক সামাজিক জীবের উপকার।


কবি পরিচিতি

বিভূতি দাস। অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক। জন্ম ১৪ই ফেব্রুয়ারী, অভিভক্ত ২৪ পরগনার কৃষক পরিবারে।

প্রকৃতির কোল ছুঁয়ে গ্রামে বেড়ে ওঠা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। ছাত্রাবস্থা থেকেই সৃষ্টির সাথে প্রেম। নেশা-লেখালিখি এবং ভ্রমণ। বর্তমান নিবাস – সোনারপুর, কলকাতা –৭০০ ১৪৯, ভারত।