বোরহানুল ইসলাম লিটন – কবিতা (নির্মোহে মোহ, মায়ের মান, এ মনে গভীর রাত!, যখন …, বলোনি কি তুমি!)

নির্মোহে মোহ

– বোরহানুল ইসলাম লিটন

বিনীত অধরে রেখে শালিকের গান
কখনো প্রণয়ে মেখে বৃষ্টিস্নাত কদম্বের হাসি,
সহস্র বছর এই বাংলার বাটে
ব্যাকুলে ঘুরেছি আমি তারে লয়ে হেঁটে পাশাপাশি।

শাঁসালো দাহের ধারে সে যে ছিলো মৃদু সমীরণ
যেমন দূর্বার শির হাসি খুশি শিশিরের চুমে,
কেন আজ মনে হয়? হয়তো বা একা
ছিলাম অনন্তকাল লাশ ঘরে মিশে কারো ঘুমে।

আমার আমার বলে বেঁধেও রা লহরিতে সুর,
সত্যটাও জানলে না হে ধরণী তুমি
কেনেই সমূদ্র হয় নীরদেরই বেদনে বিধুর।

ছুঁতে আমি পারিনিকো তারে
চাইলেও ঋক্ষ সম তারে নাকি যায় নাকো ছোঁয়া,
বলিনি ছিলো সে চির চকোরীর তৃষা
যদিও নয়কো কোন স্বপ্নে দেখা অপ্সরার ধোঁয়া।

যতোই চলেছে স্রোত ভুলে তবু কার্তিকের দ্বার,
ততোই চলেছে শীষ পিছে রোপে বাসনা অপার!

মায়ের মান

– বোরহানুল ইসলাম লিটন

তোরা) দ্যাখ রে যুঝে নমনে,
দেখলে বুঝে সুমনে –
মায়ের মতো আর পাবি না আপন ভুবনে!

অর্থ কড়ি কাড়লে ঘোরাল রাতি –
খেলবে বুকে হরেক রঙই
নিত্য চড়ুইভাতি।
ক্লান্তি এলে ক্ষণিক ডালে
খুঁজলে তবু সুর নিরালে, কূজনে –
মায়ের মতো আর পাবি না আপন ভুবনে!

থাকলে সচল সখ্যে দেহ ঘড়ি –
চলবে সময় সূরের মতো
দীপ্ত দিবস গড়ি।
সন্ধ্যা এলে দিনের শেষে
ভাবলে তবু রইল কে সে! –
মায়ের মতো আর পাবি না আপন ভুবনে!

এ মনে গভীর রাত!

– বোরহানুল ইসলাম লিটন

পেলেই গো-গ্রাসে খেতে ফুটফুটে আশ
বুকের গহীনে যেচে সর্বগ্রাসী সাহারার খরা,
এ মনে গভীর রাত শ্বাপদের মতো
ধারালো কদম ফেলে চন্দ্রহীনে করে নড়াচড়া।

থর থর কম্পমান মৃত্তিকার হাড়
যমের দুয়ারে চেলে দু’গুটি পাশার।

কোথায় পড়েছে বাঁধা সপ্তর্ষির পণ?
নিজেরে পায় কি খুঁজে ক্ষণকাল ওরা! –
ফারাক পেয়েছে মাঝে হয়তো বা যোজনে যোজন।

সুদূরে হারায় যদি জোনাকিরও জ্যোতি,
লোহার শিকলে গেঁথে যায় কি গো রাখা
মর্গের গুমোট শ্বাস চেষ্টাতেও বলো লীলাবতী!

এহেন ভুবন তুমি দেখোইনি বলো!
যেখানে সূর্যের আলো রচেই না চলমান বেলা,
দজ্জাল আঁধার হয়ে সাগরের জল
পোয়াতি অম্বুদ গড়ে মথে মথে লহরির ঢেলা।

যখন …

– বোরহানুল ইসলাম লিটন

’ফুঁসলে দু’দিক ধু ধু ঊষর গায় কি সে ভূম শ্বাস বয়ে,
সদ্য প্রাতের ফুটফুটে হিম ঢুললে বুকে ঘাস খোয়ে!’
দেখছি সেদিন এহেন ধারাই একলা বসে নুন জলে,
লাল বরণের ফড়িঙ যখন ডাকলো মেঘের কুন্তলে।

বলোনি কি তুমি!

– বোরহানুল ইসলাম লিটন

না খেয়ে পান্তা দুধ রোদে পোড়া গায়ে,
উঠুক সময় মেতে ভিন দেশী চায়ে,
দেখবো না মেলে আশা।
বাংলা আমার ভাষা
গরবে রাখবো উঁচে সবিনয়ে নমি –
কথাগুলো বলোনি কি তুমি!

বোশেখের মেলা ভুলে চাওমিন জুসে,
ড্যাড মাম হোক জয়ী পার্টিতে ফুঁসে।
শহীদের বাক পণ
চষে যাবো আজীবন
মা মাটির পদতল সযতনে চুমি –
কথাগুলো বলোনি কি তুমি!

রক ব্যান্ড দিক তাড়া
হাতে নিয়ে একতারা
সাজাবো পাকুড় শাখ আধো আধো ঘুমি –
কথাগুলো বলোনি কি তুমি!


কবি পরিচিতি

বোরহানুল ইসলাম লিটন। শিক্ষাগত যোগ্যতা এম, এ (প্রথম পর্ব)।

কবির জন্ম ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বাংলাদেশ, নওগাঁ জেলার অন্তর্গত আত্রাই থানার ’কয়েড়া’ গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে। পিতা মরহুম বয়েন উদ্দিন প্রাং ছিলেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাতা মরহুমা লুৎফুন নেছা গৃহিণী। বর্তমানে তিনি একই থানাধীন ’পাঁচুপুর’ গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।

স্কুল জীবন থেকেই কবি সাহিত্যানুরাগী মানুষ। প্রকৃতির হাসি অন্তরে পুষে বড় হয়েছেন গ্রামীণ পরিবেশের শীতল ছায়ায়। প্রিয় সখ বই পড়া ও লেখালেখি। ছড়া, কবিতা, গীতিকাব্য ও অনুগল্প মিলে তার লেখার সংখ্যা প্রায় দুই হাজার এর মতো। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন ওয়েব সাইটে নিয়মিত লিখে চলেছেন।