সুমিত্র দত্ত রায় – কবিতা (আমার খেয়া, আমি স্মৃতি, শেষের কলম, তার চোখ)

আমার খেয়া

– সুমিত্র দত্ত রায়

অণুর সন্ধানেতে ছিলাম,
তুমি আছ তবু নেই কেন?
বটগাছ আলোছায়া দিয়ে-
কণাদ সেজেছে নিজ গুণে।
তবুও আমি অনুসন্ধানে।

পাহাড়ে ধ্বস নামলো, কবে?
মাথা নীচু। উঁচু টিলা ক্লান্ত।
চারদিকে অবক্ষয় তবু-
ঝরনার কোমর দুলুনি।
তুমি আছো, তবু দূরে কেন?

তিরতিরে শুধু ঘাম ঝরা,
আনন্দে! নাকি ক্লান্তি নিয়ে?
চরম পুলকে জাগা মনে,
সেই চোখে – অণুর সন্ধান।
“সব গোলমাল” হাঁকে কেউ।

“হেই তফাৎ যাও” – নয়তো!
বন্ধ চোখে অণু ঘুরবেই,
“সব ঝুট হ্যায়” – কবেকার
সেই কথা! তবু চিরন্তন,
অণুর কান্না থামার নয়…..।

আমি স্মৃতি

– সুমিত্র দত্ত রায়

অতীতটা অনেক দূরেই ছিলো,
নিজের অস্তিত্ব অস্বীকার করে
এগোতে চেয়েছি, নীট ফল আজ
ব্যস্ত জীবন সামলাতে কাহিল।

পাহাড়ের সাথে রোজ কথা হয়,
ইচ্ছেমতো নীরবতা তার সাথী,
কত আশা গুমরে গুমরে ভাসে
হাসি কান্নার সে খোঁজ কেবা রাখে।

নুড়িগুলো মুনি ছিলো, শোনা কথা।
আচ্ছা যদি এত্তো ঋষি তবু কেন
পৃথিবীর কান্না থামে না কিছুতে?
তবে ওরা কি ভুমির কষ্টে নেই?

হলকর্ষ জমি আজও সৃষ্টি বিমুখ।
সমানে বিকিয়ে চলে অল্পদামে
জ্যান্ত জোঁক রক্ত চুষে ফের নুড়ি।
বহু স্মৃতি ঘরে গুছিয়ে রাখা বই।

এতোসব খবর মুনিরা জানেই না,
মুখ থেকে মুখে ঘোরা কথাগুলো
যে স্মৃতির অন্তরালে আজো গুপ্ত,
ইথারে ইথারে ভেসে মৃতের দুয়ারে।

শেষের কলম

– সুমিত্র দত্ত রায়

একদিন নববস্ত্রে,
অন্নপ্রাশনে ছিলো,
বহু সামগ্রীতে ভরা-
নতুন এক রেকাবি।
খাগ-কলম নিয়েছি।

ফের ওই নববস্ত্র
পরিধানের সময়,
কলমটি রেখো বন্ধু-
এই মাথার শিয়রে।
এটুকুই শেষ ইচ্ছে।

তার চোখ

– সুমিত্র দত্ত রায়

সে মুদ্রাদোষে ‘পাগলা কোথাকার’
বলত সবাইকে, কথাটা মন্দ নয়।
বিশাল এই দুনিয়াই পাগলাগারদ
না হলেও, অনেকাংশেই ঠিকঠাক।

নিজে যখন দেখি সব দৃশ্যগুলো
প্রতিনিয়ত কিভাবে বদলে যায়?
অবাক মনেও একই বোধ জাগে।
এত গতি সামলানোটা অসম্ভব।

কোথায় কিভা‌বে যে ছুটে চলেছি
দিশেহারা হয়ে, নিজেও জানি না।
পট পরিবর্তন হতে তাল রাখাটা,
আজ খুবই দুরূহ কাজ এ চোখে।

সেইজন্যে বার বার তাকে খুঁজি।
অকস্মাৎ খবরেতে নজরে এলো
‘পাগলের পালানো গারদ ভেঙে’
ছবি নিঃসন্দেহে সেই লোকটার।


কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।

আমি ছেলেবেলা থে‌কে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু,  আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।