প্রেমে পড়া বারণ
– অসিত কুমার রায় (রক্তিম)
আকাশের মুখ গোমড়া দেখে মন খারাপ অনির্বানের।
আজ সেই মেয়েটা আবার আসবে
দেবীর সামনে ভক্তিভরে অঞ্জলি দেবে
শাড়িটা থাকবে কাঁচা হলুদ রঙের।
যাক বাবা ঐতো সূর্যি মামা কথা রেখেছে।
সে মেয়ে অঞ্জলি শেষে একবার দেখবেই
হালকা গোলাপী ঠোঁটে মৃদু হাসি রাখবেই
আমার হৃদপিন্ডটা কাটা মুরগীর মতন হবে।
এককদম এগিয়ে দুকদম পিছিয়ে আসব।
গলা শুকিয়ে কাঠ, রাজ্যের তৃষ্ণা পাবে…
যে কথা সারা বছর ধরে বলব ভেবেছি, বলা হবে না।
আজ সেই কথা বলবার সময় হয়েছে…
ওই যে আসছে… আসছে …
পৃথিবী কাঁপছে… গ্রহ তারা নক্ষত্র দুলছে …
এখুনি যেন এখানে মহাপ্রলয় ঘটবে…
সেই হলুদবরণীকে প্রস্তাব দেব, তুমি আমার হবে।
ঘন্টা বাজে… মন্ত্র পাঠ চলে… অঞ্জলি শেষ …
এবার সেই সময় উপস্থিত … আমায় দেখবে মেয়ে
না তেমন কিছু ঘটলো না …
কি একটা ছকভাঙ্গা ছন্দ শুরু হয়ে গেল।
এগিয়ে এসে সেই হলুদবরণী বলে –
আমি অনন্যা যে কথা বলতে পারছ না,
এসো হাত ধরো, আমি তোমায় শিখিয়ে দেব …
প্রেমে অপ্রেমে
– অসিত কুমার রায় (রক্তিম)
আমাকে শেষ করে দেবার জন্য
তোমার তির্যক দৃষ্টিই ছিল যথেষ্ট।
সাদা ধবধবে ফরাসের দরকার ছিল না
হাজার বাতির রোশনায়-এর দরকার ছিল?
পান পেয়ালায় জহর না মেশালে ও চলতো।
আমাকে শেষ করে দেবার জন্য
তোমার তির্যক দৃষ্টিই ছিল যথেষ্ট।
চাইলেই খঞ্জর ফুঁড়ে দিতাম হৃদপিন্ড
হাসতে হাসতে কালনাগিনীর ছোবল নিতাম
জ্বলন্ত অঙ্গারে নিজেকে নির্দ্বিধায় সঁপে দিতাম।
আমাকে শেষ করে দেবার জন্য
তোমার তির্যক দৃষ্টিই ছিল যথেষ্ট।
একটা অনুরোধ তোমার কাছে থাকত
ধনুক ঠোঁটে জ্যামুক্ত শব্দ শুনতে চাইতাম
অবহেলায় না’হয় বলতে তোমায় ভালবাসি।
আমাকে শেষ করে দেবার জন্য
তোমার তির্যক দৃষ্টিই ছিল যথেষ্ট।
আকাশ কুসুম চয়নে সারা জীবন দিতাম
হাজার বছর অপেক্ষায় যক্ষ হয়ে থাকতাম
শুধু শোনাতে ভালবাসি। তারপর…গল্পের শেষ।
প্রেম দ্রোহ বিপ্লব
– অসিত কুমার রায় (রক্তিম)
অনেক দিনের শূন্যতায় পূর্ণতা দিতে
তুলি হাতে তুলে নিয়েছিলে।
আশাহত হইনি কখন তবু মাঝে মাঝে
অভিমান করে ফেলি খেলাচ্ছলে।
ইতরজন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানান ইঙ্গিতে
তোমার আমার তিনভুবনের কথা বলে।
ঈশানকোণে ঘূর্ণিঝড় অপেক্ষা করে
আলো অন্ধকারে দুহাত শূন্যে তুলে।
উপোষী উনুনের ক্ষিদে সর্বনাশী বিশ্বগ্রাসী
দাউ দাউ করে শুধু খেয়ে যায়।
ঊষার খবর এনে দেবে কথা দিয়েছিল
পূর্বদিগন্ত এখন লুকিয়ে বেড়ায়।
ঋদ্ধ হয়েছি ক্রমশ তপ্ত বালুর মরুঝড়ে
সবুজের স্বপ্ন দেখি বন্ধ্যা বালুকায়।
লিখিনি এখন সেই নতুন দিনের উপন্যাস
সব জমিয়ে রেখেছি হৃদয় রক্তধারায়।
এখন যে অন্তর জুড়ে দ্রোহের আনাগোনা
এখানে ওখানে ষড়যন্ত্র জল্পনা কল্পনা।
ঐখানে আছে বাবার কবর তার পাশেতে মায়ের
সকাল সন্ধ্যে ঝরে পড়ে আদুরী হাস্নুহানা।
কারা চুরি করে নিল সুখ, মুখোশে ঢেকে মুখ
মানুষের বেশে ওরা ক্ষুধার্ত হায়েনা।
ঔপনিবেশিক সব সাবধান, একদিন ঘুম ভাঙবে
সেদিন আর পালাবার পথ পাবে না।
অপার্থিব প্রেম
– অসিত কুমার রায় (রক্তিম)
তোকে আর তুই বলতে ইচ্ছা করল না।
যেমন হিমের ভারে গাছের পাতা নুইয়ে পড়ে,
ঠিক তেমন তোর কাছে
নত হয়ে চেয়ে নিলাম;
আত্মাপূরণের অপার্থিব প্রেম।
বৃষ্টি হবে কি হবে না! প্রবল খরায় অপেক্ষা!
ক্রমশ সময় অতিবাহিত ধীর লয়ে।
আমার পৃথিবী জুড়ে ঝড়ের উন্মদনা।
অতি দ্রুত লয়ে ঝঙ্কারিত রবিশঙ্করের সেতার।
ঝড়ের তাণ্ডব বেড়েই চলেছে ক্রমাগত;
এলোমেলো এক প্রেক্ষাপটে যুঝে চলেছি,
দিশাহারা এক পুরুষ যেন পেয়েছে তার দেখা।
ঝড় থামিয়ে দিতে পারে একমাত্র
সেই আশ্চর্য অতি মানবী।
জানি না কতক্ষণ ধরে ছিল সেই অপেক্ষা
একযুগ নাকি এক নক্ষত্রকাল।
শুধু জানি গাছ ফুল মাটি পাখী প্রহর গুণছিল।
সেই আসন্ন মহেন্দ্রক্ষণের।
অবশেষে অঞ্জলিতে এলো যেন সেই সময়।
তোমার লাজুক মুখে তাই দেখি ভোরের পূর্বাভাষ।
সেও এক প্রেমিকা
– অসিত কুমার রায় (রক্তিম)
তোমার সাথে আমার হয়েছে মিলন
বেঁধে বেঁধে রেখেছিলাম মন।
তোমার রূপের মাধুরী সৌরভে
এখন হরষিত মন গৌরব অনুক্ষণ।
আমার যত ঢেউগুলো
খুঁজে খুঁজে সব ফিরছিল।
কোথায় তাঁরে পাই, কোথায় তাঁরে পাই।
দিনে দিনে জীবন জুড়ে
হতাশার মেঘ জমছিল।
হটাৎ যাকে দেখে থমকে গেলাম;
স্পন্দনহীন অপলক ছিল চাহনি।
স্বপ্নেরা এসে ভিড় করে ঘিরে ধরে,
বলে- দেখত চিনতে পারো কিনা?
ধানসিঁড়িটির পাশে নাকি ময়নামতির তীরে ।
হয়তো দেখেছ তাকে ব্যস্ত শহরে
একা একা পার করে পিচগলা রাস্তা।
হঠাৎ বৃষ্টিতে হয়েছে সে দিশাহারা।
এ তোমারি সেই বনলতা সেন।
দেখেছিলে যাকে স্বপ্নে দুচোখ ভরে;
নাকি দহণ দ্বিপ্রহরে তমালতলে
শীতলতার স্নিগ্ধ ছায়া মেখে,
তৃষ্ণা মেটাতে তৃষ্ণাবারি হাতে।
দাও জল দাও, দাও জল দাও
দাও প্রেম দাও, দাও প্রেম দাও।
এ হৃদয়ে শূন্যতা ভরিয়ে দাও।
পাখীর নীড়ের মত আঁখি নাইবা হোল
তবু তোমার নত চোখদুটি তুলে চাও ।
রাজহংসী গ্রীবা নাইবা থাকলো তোমার
তবু একবার এই বহু যুগের আজীবন
ভিখারি প্রেমিকের দিকে চাও।
দাও জল দাও, দাও জল দাও
দাও প্রেম দাও, দাও প্রেম দাও।
এ হৃদয়ে শূন্যতা ভরিয়ে দাও।
কবি পরিচিতি
অসিত কুমার রায় (রক্তিম)। জন্ম ৬ ফেব্রুয়ারি, ভতেহট্ট, নদীয়া, ভারতবর্ষ। বর্তমান নিবাস, কলিকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। পেশা কবিতার সঙ্গী হওয়া।
কবির ভাষায় – “জীবন কে দারুণ ভাবে অনুভব করতে চাই। যতটুকু আলো বাতাস খুশি আনন্দ মাটি আমার বরাদ্দ এই প্রকৃতির কাছে, আমি সবটুকু পেতে চাই। আমি বুঝে নিতে চাই একটা কাঁচপোকা বা পিপিলিকার এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবার অধিকার আছে। সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে চাই না। নারী স্বাধীনতা আমার কাছে বিশেষ মুল্য নিয়ে বিরাজ করে। চেষ্টা করি তার সম্মান তাঁকে পুরোটা ফেরত দিতে। আমি আমার পরিবার নিয়ে মাছে-ভাতে দিব্য আছি। ইলিশ বড় প্রিয়। বাংলাদেশের আমি ভীষণ ভক্ত। বাবার মুখে অনেক গল্প শুনেছি ভৈরব নদীর । স্বাধীন হবার প্রাক্কালে গিয়েছিলাম, সুযোগ হয়েছিল। সেই আভাস এখনো রয়ে গেছে স্মৃতিপটে। ভালো আছি, ভালো থাকবার চেষ্টা করি। অন্যকে ভাল রাখারও চেষ্টা করি নিরন্তর।”