বিভূতি দাস – কবিতা (ওঝার কথা, ব্যবধান, প্রভাব, টাপুর টুপুর, বসন্ত রঙ)

ওঝার কথা

– বিভূতি দাস

মজার কথা শুনছে মানুষ কারো কারো মাথায় হাত
কারো ঠোঁটে মুচকি হাসি সামনে নাকি গভীর খাদ
কালো মেঘে শুষছে আলো আসছে ধেয়ে ঝড়ের রাত
বাঁশের ঝাড়ে লেগেছে কাঁপন সময় যেন শাঁকের করাত।

উড়ছে ধুলো চালের খড় পড়ছে ভেঙে মোটা ডাল
কেউ ভাবেনি স্বপ্ন ঘোরে করবে ঝড়ে এমন হাল
এদিক ঢাকলে ওদিক ওড়ে ঝড়ের উপর হচ্ছে রাগ
গলা তুলে ডাকছে শিয়াল শুঁকছে মাটি রয়্যাল বাঘ!

কাকে ত্যাজে কাকে রাখে কোথায় কোথায় আলগা রাশ
হেই সামালো হেই সামালো দ্রুত লয়ে বাড়ছে শ্বাস
শুঁকে ঘেঁটে চাইছে হদিশ কোন মরাইয়ে ধরেছে পচন
পানির থেকে জল ঝরানোই মরণ বাঁচন মন্ত্র সাধন।

চিন্তায় কাটে ধুসর দিন কোথায় বসে মিচকে শালিক
কোটাল গোমস্তা হন্যে হয়ে ঘেমে নেয়ে খুঁজছে শরিক
মান বাঁচাতে হাঁকছে ওঝা কোমর বেঁধে কাটাতে রাত
কোন দত্যির ক্ষমতা এমন ওঝার দিকেই বাড়ায় হাত।

ব্যবধান

– বিভূতি দাস

নৈরাজ্যের পেশীর ছায়ায়; নাকি চেতনার উন্মেষে হবে সমাধান
কার ভালো, কাদের ভালোতে প্রবাহিত জিজ্ঞাসা অনন্ত কাল
কতটুকু লাভ সমাজের, নাকি পুরোটাই একীভূত স্বার্থে বহমান
নৈরাজ্যের পেশীর ছায়ায় নাকি চেতনার উন্মেষে হবে সমাধান।
কলম থমকে যায় তুল্যমূল্য দোলাচালে, জনমন নিশ্চিত সন্ধিহান
রাজনীতি কোথা হতে আসিয়াছ! প্রতিপদে বিছাও ব্যবধানের জাল
নৈরাজ্যের পেশীর ছায়ায়; নাকি চেতনার উন্মেষে হবে সমাধান
কার ভালো কাদের ভালোতে প্রবাহিত জিজ্ঞাসা অনন্ত কাল।

প্রভাব

– বিভূতি দাস

মাত্র তিনটি অক্ষরের সমষ্টি তবুও বৃস্তিতি তার সর্বকালে
সমাজিক আবহে প্রতিদিনের যাপনে কর্মে অকর্মে সে অবিচল
কিছু হয়েছে সার্বজনীন, কিছু তার মাথা তোলে অকালে
মাত্র তিনটি অক্ষরের সমষ্টি তবুও বৃস্তিতি তার সর্বকালে।
কাটানো যায় না সুশিক্ষায়, জিনগত অবস্থায় বয়ে চলে
সম্বিত ফেরে না, যতক্ষণ সম্মুখে না দাঁড়ায় কর্মফল
মাত্র তিনটি অক্ষরের সমষ্টি তবুও বিস্তৃতি তার সর্বকালে
সমাজিক আবহে প্রতিদিনের যাপনে কর্মে অকর্মে সে অবিচল।

টাপুর টুপুর

– বিভূতি দাস

টাপুর টুপুর রজত ধারা শুকনো পাতার বনে
চঞ্চল মন ছন্দ খোঁজে কিসের অমোঘ টানে
নীরব দিনের পর্দা সরায় কুহুর আকুল ডাক
বন-পলাশের আগুন বুকে কুল ভাঙাবার বাঁক
স্বপ্ন আসে ভালোবেসে মন ছাপানো গুঞ্জনে
রঙের ভেলায় কাটে সময় মৃদুলা কুঞ্জবনে।

আসে সন্ধ্যাপরী আঁচলে তার লক্ষ হীরের মেলা
আঁধার ছোঁয়া ডালে ডালে প্রভাকীটের লুকোচুরি খেলা
ডাকছে ঝিঁঝিঁ ঝিঁঝিঁ কাছে দূরে ছড়িয়ে সুরের যাদু
অচেনা কলির দল জাগছে ধীরে বুকে নিয়ে মধু
রাত গভীরে কার বাসাতে ওঠে হৃদয় ভাঙা ডাক
ভাবছে কি কেউ উদাস হয়ে যা গেছে তা যাক।

রাত্রিশেষে মেঘ সরিয়ে বাঁকা-চাঁদে হাসির ঝিলিক গুনে
আবছায়া রং ভোরের আলো জাগে নতুন দিনের প্রাণে।

বসন্ত রঙ

– বিভূতি দাস

বসন্ত রঙে বইলে বাতাস
মন মহুয়া ছড়ায় সুবাস
নিশিথে ঘুম টুটে যায়
মহুয়া শরাব পানের নেশায়
দিলের শশী দোদুল দোলায়
মাঙে মহাব্বতের আসমানি আশ।

জাগে নিশি আকাশ ফুলে
মঞ্জরীতে তার ঢেউ তুলে
লুটায় শরমের ঘোমটা খুলে
আগুন পলাশ আম মুকুলে
কবরীতে তার করবী দোলে
ছড়িয়ে সুবাস ফুলে ফুলে।

গুঞ্জনে মেতে মৌমাছি দল
ধায় দিকে দিকে অবিরল
পিয়াসী মৌটুসি পাখনা মেলে
মনের বাসনা কাকে বলে
জানিতে চায় কত ছলে
পুড়িলে মন বসন্ত অনলে।

হৃদি পাপিয়া নিশি জাগে
অভিসার মাগে গোপন রাগে
দখনে হাওয়ায় দুরন্ত আশ
মেটে না থাকিলে পরবাস।


কবি পরিচিতি

বিভূতি দাস। অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক। জন্ম ১৪ই ফেব্রুয়ারী, অভিভক্ত ২৪ পরগনার কৃষক পরিবারে।

প্রকৃতির কোল ছুঁয়ে গ্রামে বেড়ে ওঠা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। ছাত্রাবস্থা থেকেই সৃষ্টির সাথে প্রেম। নেশা-লেখালিখি এবং ভ্রমণ। বর্তমান নিবাস – সোনারপুর, কলকাতা –৭০০ ১৪৯, ভারত।