বলবো কারে গোপন কথা!
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
বলবো কারে গোপন কথা
হিমেল বায়ুর কণ্ঠ কি যায় শোনা!
খুঁজতে গেলে দোয়েল শ্যামা
বরং বাড়ে দুখের আনা গোনা।
ভাবলে যাবো বকুল তলে
মিলতে পারে তাজা ফুলের প্রীতি,
রোদ সে ক্ষণের ছন্দ কেড়ে
দর্পে রচে শুকনো পাতার গীতি।
নিশ্চিতই ওই ফসল আপন
আস্থা বেঁধে ছুটলে শ্যামল বাটে,
হঠাৎ কেন আছড়ে পড়ে
ফড়িঙ ছানা তপ্ত ঊষর মাঠে!
হিঙ্গুল বরণ মেঘকে সেধে
চুপটি কাটি কতোই কিরে আড়ি,
ঝম ঝমা ঝম রেলগাড়িটা
স্টেশন তখন যায় যদিও ছাড়ি।
ডাকতে গেলে বিলের ধারে
কানাবগি দেয় কি বারেক সাড়া!
গোপন কথা মনেই থাকে
সন্ধ্যাকাশে দেয় ফের উঁকি তারা।
স্নেহের জয়
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
অদ্য দেখি গুড় এ’ নদীর ঢালে
সময় তখন তেরছা বিকেল বেলা,
এক বুড়ি এক চেংড়া ছাগল তালে
মর্জি বিনেই গড়ছে আজব খেলা।
ধৈর্য কিনে চিত্তে বেঁধে আশা
ক্লান্ত বুড়ি চাচ্ছে যদি দড়ি,
হেঁচকা টানে স্তব্ধ করে ভাষা
দুষ্টু ছাগল ভাবছে ভাবো অরি!
নিচ্ছে দড়ি নাগাল দিয়েই কেড়ে
উঠছে যেয়ে ক’ ধাপ দূরেই ডাকি,
গুনছি চুপে আঙুলের গিট নেড়ে
আবার ভুলে ওদের দিতে ফাঁকি।
এহেন সময় অনেক করে গত
ধরলো গলা যখন নানান ছলে,
অবুঝ মতি হারলো শিশুর মতো
ক্রোধ গোঁ সঁপে মাতৃ স্নেহের তলে।
আমি না হে পিচ্চি!
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
সক্কালে চোখ মেলে চেয়ে দেখি দরজায়,
গিন্নীর ভাব বুঝি এই ঘাড় মটকায়!
কোন মতে হেসে বলি বিয়ে বার আজ কি?
ব্যাগ ছুঁড়ে শুরু করে মাছ এনো কাচকি।
গোটা গোটা ডাল নিবে মশুরীও দেশি বুট,
সালাদের শসা চাই দু’পদের বিস্কুট।
রুই শোল লাগবেই দেখে নিও মাংস,
মুরগীর পাখা ধরো ঝুলাবে না হংস।
আদা জিরা মসলার ঘ্রাণ হবে একদম,
প্যাকেটের বাসমতি দই সাথে চমচম।
নুন ঝাল হলদির কথা মনে থাকবে!
ক্ষোভ খেদ চেপে বলি পিয়াজও কি লাগবে?
ফোঁস করে রেগে উঠে বলেছি কি চিনি দুধ,
এই নাও পাঁচ শত যতো সব অদ্ভুত!
বের হও ঘর থেকে! চা দেবে না? দিচ্ছি!
তক্ষনি এক দৌড় আমি না হে পিচ্চি!
দ্রষ্টব্য – শুধুই মজা করার তরে কবিতাটি লেখা!
চন্দ্রবিন্দু
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
বিধাতার সংসার দেখেছিলাম –
ক -তে কুলা
খ -তে খুঁটি
ঝড়ে উল্টে গেলেও
কি সুন্দর মিলেমিশে ধুলোয় খেতো লুটোপুটি।
বর্ণমালা বিনে জীবন নয়
মজবুত হয় না জনমের ভিত
দিনে দিনে ঠিক বুঝে গিয়েছিলাম অবশেষে।
বর্ণ লিখেছি –
আত্মভোলা শিল্পীর মতো
চিত্তের সবটুকু রঙ ঢেলে একটা একটা করে নির্জনে,
আশায়
ভাষায়
ভালোবাসায় –
বিন্দুর অবস্থান নিশ্চিত করতে পারিনি বলে
নিঁখুতভাবে শুধু লিখে যেতে পারলাম না
সবচে’ প্রিয় বর্ণটি ‘চন্দ্রবিন্দু’!
বাঁচতে দাও সেই পৃথিবীকে!
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
আমি উপেক্ষা করি সভ্যতাকে –
চৌচির উদরের উপর বসে যে সভ্যতা
ম্যাগনেফাইং গ্লাস দিয়ে খুঁজে, হস্তরেখার গতিপথ।
আমি উপেক্ষা করি সভ্যতাকে –
কিঞ্চিত রস পাবার সখে যে সভ্যতা
ভেঁকু মেরে উৎপাটন করে, রীতিবাহি খেজুর বৃক্ষ।
আমি উপেক্ষা করি সভ্যতাকে –
জ্ঞানার্থীর স্কন্ধে চড়ে যে সভ্যতা
নির্দ্বিধায় ফেরি করে বেড়ায়, ‘লজ্জানাশা’ প্যাকেজ।
তোমরাও উপেক্ষা করো
দৃষ্টি ফিরিয়ে করো
ছোঁয়াচে করোনা ভেবেই করো
বাঁচিয়ে রাখতে শুধু সেই পৃথিবীকে –
যার প্রতিটি স্পন্দনই সুধা-সুরে গড়ে, নিশ্চিন্তে চেনা
পল্লী মায়ের সখ্যতা।
কবি পরিচিতি

বোরহানুল ইসলাম লিটন। শিক্ষাগত যোগ্যতা এম, এ (প্রথম পর্ব)।
কবির জন্ম ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বাংলাদেশ, নওগাঁ জেলার অন্তর্গত আত্রাই থানার ’কয়েড়া’ গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে। পিতা মরহুম বয়েন উদ্দিন প্রাং ছিলেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাতা মরহুমা লুৎফুন নেছা গৃহিণী। বর্তমানে তিনি একই থানাধীন ’পাঁচুপুর’ গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
স্কুল জীবন থেকেই কবি সাহিত্যানুরাগী মানুষ। প্রকৃতির হাসি অন্তরে পুষে বড় হয়েছেন গ্রামীণ পরিবেশের শীতল ছায়ায়। প্রিয় সখ বই পড়া ও লেখালেখি। ছড়া, কবিতা, গীতিকাব্য ও অনুগল্প মিলে তার লেখার সংখ্যা প্রায় দুই হাজার এর মতো। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন ওয়েব সাইটে নিয়মিত লিখে চলেছেন।