পারমিতা ব্যানার্জি – কবিতা (অন্য মনে হারাই, স্বপ্ন শহরে, হাল হকিকত, সুন্দর সন্ধ্যায়, সুখের সাফাই)

অন্য মনে হারাই

– পারমিতা ব্যানার্জি

গানের ওপর গান সাজিয়ে
যখন খুঁজি পুরোনো সেই ঘর,
কেবল হারিয়ে যাই!

ছিটকে যায় হাতে রাখা হাত।
কুয়াশা নেমে আসে…
মনে হয় কাঁচের দেয়াল,
আড়াল করে রাখে যত বন্ধন!
কিংবা হারাই!

পথ চলতে চলতে হোঁচট খাই,
পিছন ফিরে তাকাই…
অজানা মনে হয় সব কিছু!
নতুন করে গান বাঁধতে গিয়ে
বার বার হেরে যাই!

ভোর ছিনিয়ে ছেঁড়া কুয়াশা
জীবনকে ভাবায়…
নিজেকে তখন
কেন যে অন্য অন্য মনে হয়।
আবারো হেরে যাই!

স্বপ্ন শহরে

– পারমিতা ব্যানার্জি

শহর ঘুমিয়ে পড়ে যখন
ল্যাম্পপোস্টের আলো জাগে।
সাথে জাগে পথ।
শহরের চোখে তখন
হাজার রঙিন রাংতা স্বপ্ন…
পথ পাহারা দেয়…
রাস্তায় কুকুরেরা গলা উঁচু করে
ডেকে চলে অকারণে।

কাঁচের গ্লাস ভাঙ্গার শব্দে
রাতের রেস্তোরাঁ বলে
এখনও জঙ্গল আছে শহরে!
শ্বাপদ সঙ্কুল জঙ্গল!
ভোরের আলো ফুটলে
কোথাও কোথাও পড়ে থাকে
হিংসার ছাপ।
তবু শহর বাঁচে বুকে স্বপ্ন নিয়ে।

সকাল হলে
ল্যাম্পপোস্টের নরম আলো
নিভে যায়।
পথ জেগে ওঠে কর্মব্যস্ততায়
পথ চলার আনন্দে!
শহর সুসকাল দেখে রোজ।
সূর্যোদয়ের ছবি মেখে
শহর বাঁচে মরে প্রতিটি দিনই।

হাল হকিকত

– পারমিতা ব্যানার্জি

যে পথে তার ছেঁড়ে একতারার
ক্লান্ত ফুল রং খোঁজে না জানি।
মনটা তখনই ব্যথায় যাযাবর__
হৃদয় খুঁড়ে ফাগুন রাখে গ্লানি!!

যখনই হেঁটেছি অনেকটা পথ__
বসন্ত দেখেছি কূজনে কূজনে।
হঠাৎ আলোয় সাজে উল্টোরথ,
কিংশুক রাগে রেঙেছি দুজনে!

ঘুঘুর ডাকে একঘেঁয়ে দুপুর।
দিন রাতের গল্প যেন জোলো।
রাখেনি খোঁজ টাপুর টুপুর__
জোনাক ঝাঁক রাতের আলো।

বেলোয়াড়ি ঝাড়ে ক্লান্ত রাত,
উপন্যাসের সে ছেঁড়া পাতায়।
পোড় খাওয়া যে হাল হকিকত,
দুজনে কূজনে যতেক কথায়!

সুন্দর সন্ধ্যায়

– পারমিতা ব্যানার্জি

আশ্চর্য এক সন্ধ্যায় __
তুমি এসেছিলে গানের ওপারে!
এক আচ্ছন্নতায়
আমি চোখ মেলেছিলাম।
সুরে সুরে ভরে গেলাম আমি।

চাঁদ ছিল না সেদিন আকাশে ।
তবু সোনাঝরা হয়েছিল সন্ধ্যা।
হাজার তারার আলো
ছড়িয়ে পড়েছিল গানে গানে…
তুমি দাঁড়িয়েছিলে দীপ্ত!

সুরের ডিঙি বেয়ে আবছায়ায়
পৌঁছে গেলে আমার মনে।
সেই আশ্চর্য সন্ধ্যা
মুখরিত হলো নীরব আলাপে,
তারার আলোয়।

সুখের সাফাই

– পারমিতা ব্যানার্জি

সারি সারি শাড়ির মত সুখ
সাজানো ছিল
আমার ভাঙা ঘরের আলনায়।
জানলা দিয়ে তাই
উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম
আমার যত দুঃখ!

তুই দাঁড়িয়ে ছিলি দাওয়ায়।
ভালোবাসার ব্যথা
ছিল তোর চোখের আয়নায়।
সুর ও ছন্দে মশগুল হয়ে
কবিতার ডালি সাজিয়েছিলি
সেদিন!

আমি ভেসে যেতে চেয়েছি
ভালবাসার চরণে চরণে!
কবিতাকে বলেছি
পাগল করে দাও গো আমায়
সুখের নিরালায়,
কবির কলম আরশিতে।


কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।

ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।