কৌটা
– সুমিত্র দত্ত রায়
নজর আড়ালে চাপা পড়েছিল,
দৈনন্দিন কর্মব্যস্ত জীবনেতে
কোন কিনারায় দেখতে পাইনি,
তবু সেটাই ছিলো প্রথম বসন্ত।
ছলনার প্রেমে বিশ্বাস ছিলো না,
কিন্তু তা বছরের আবর্তনেই শেষ।
কেন যে হারালো তখনো বুঝিনি,
কৌটা যত্নেই ছিলো জায়গা মতো।
নতুন তরণীর এক উন্মাদ যাত্রা,
শক্ত হাতের হাতছানি দেখেছে
অনিশ্চিত ছোটা মোটে ঠিক নয়।
কৈশোর আঘাতেই পোক্ত হলাম।
চলে গেল। বছর পাঁচেক পর শুনি
তরী তারও অথৈ সাগরের মাঝে!
মুক্তোর খোঁজে গিয়ে হারিয়ে যায়
নাম না জানা কালাপানির কোলে।
নতুন করে পাবার আশা দপদপ।
ফেরেনি। শরমই বাঁধা দিয়েছিল।
আর নয়, এরপর গতির জীবন
উঁচুর থেকে নীচুতে দেখি, যন্ত্রণা।
ধোঁয়ার আড়ালে আজো চাপা আছে।
কৈশোর এখনো ডাক দিয়ে যায়
সব কান্না খেলাঘরে ঘোরে আজীবন।
কৌটো ইচ্ছে মতো খুলি ও বন্ধ করি।
পরিক্রমা
– সুমিত্র দত্ত রায়
দুরন্ত পরিক্রমার শেষে,
ভাসমান বদলানো দৃশ্য-
ঝিনুকে শুক্তির আগমন।
ক্ষত সৃষ্টি করেও নির্মল।
ফুল ফোটে ফোটার সময়,
পাঁপড়ি ছড়ায় আধবোজা।
গুণগুণানিতে ভোমরারা-
কানাকানি করে চারদিকে।
রেনু ছড়ায় পদচুম্বনে।
যথা নর নারী মিলনেতে।
দরজা বন্ধ হয়, আপন
ঘরে এখন সৃষ্টির সুখ।
ফুল থেকে ফল, আপনাকে
হাজির করে নব কলেবরে।
পরিক্রমা চলে, গাছ কিন্তু
শীর্ণ হতে আরো শীর্ণকায়।
ধীরে ধীরে নুয়ে পড়া, তবু
ভ্রমরের ফলদান থেকে-
নতুন জীবন। মহাবিশ্বে
ভ্রমণ শেষ হবার নয়।
সীমাহীন কালের যাত্রায়,
অনন্ত পথের দিগ্বিজয়।
শূন্যতা
– সুমিত্র দত্ত রায়
পুকুরে ঢিল ছুঁড়ে
যে তরঙ্গের সৃষ্টি,
সে পারে যেতে চায়।
কোনো তরঙ্গ পার
খুঁজে পায়। কেউ বা
হারায় শূন্যতায়।
পুকুর বদলে সে,
সরসী বা নদীর
দেখা পায়, তবুও…
কিন্তু মহসাগর!
সব ঢিলই গিলে
লহরে অবিরাম।
যে নিজে মহাশূন্যে,
তার কী যায় আসে
হাত ফেরতা খাতে?
তার নিজের সৃষ্ট
সব ঢেউ কি আর,
পার নাগালে পায়?
নব বন্ধন
– সুমিত্র দত্ত রায়
চল না বন্ধু হাতে হাত রেখে চল না,
আয় না সময় ডাক দিয়েছে আয় না,
সামনেতে ওই পাহাড় চূড়া! থাক না,
সকল বাঁধাকে চুরমার করে, দল না।
দেখিস বন্ধু টপকে যাব এ বাধা সব,
তুলবোই প্রাণে আনন্দ তানে কলরব,
মুক্ত পথে যে বাসনারে করি অনুভব,
রাখবো দূরে মনের ক্লান্তি ও পরাভব।
চলতে শুরু করে দেখো বাঁধা, বাঁধা না,
জলের তোড়ে মুছে যাবে সব সীমানা,
দুরন্ত বেগে আসবে নতুন ভাবনা,
রক্তিম পথে উড়বে জয়ের নিশানা।
দেখবে কাছে পথ রয়েছে চলবার,
যা কিছু বাঁধা নির্ভয়ে কর তোলপাড় ,
জীর্ণ হলেও হিসেবটা নয় ভুলবার,
তাই প্রাচীনের অভিজ্ঞতাও দরকার।
সব বিপ্লব এগোনোর পথ, পায় না,
তা বলে তাকে, দূরেও রাখা যায় না,
পুরাতন গড়া ভিতের উপরে আয় না,
যত্নে সাজাই নতুন দিনেরই ভাবনা।
কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।
আমি ছেলেবেলা থেকে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু, আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।