১. এক মুঠো প্রশান্তি
বাতাসের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকতো চুল গুলো। কারণে মা বলছিলেন আমার নাকি প্রচুর রাগ। সেই কথা প্রায়ই মনে পড়ে আর হাসি পায়। হাসি পাবেই না কেনো কারণ তখন না জানলেও এখন তো ঠিক জানি ঐ কথাটা ছিলো শুধুই মুখো কথা। কিন্তু রাগ তো হয় রাগ করতে পারলাম কই আমার রাগ এর তো কোনো ফয়দা নেই কারো কাছে তো রাগ করলে হাসি মুখ ভেংচি ছাড়া কিছু পাওয়া যায় না। কই আমি তো রাগ করে কখনো কোনো ফয়দা লুটতে পারলাম না বড়জোর কোনো বদ্ধ বিছানায় চক্ষু আড়াল করে বালিশে ফুপিয়ে ফুপিয়ে অশ্রু ঝরানো শুধু এতটুকুও আমার রাগ সান্ত্বনা। পাঠক মনে ক্ষুদ্র চিন্তায় বিশ্বাস না হতেও বা কি যখন কথা গুলো ভাবছিলাম লেখছিলাম মনে হচ্ছিল বুকের ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। যেমনটা দুমড়েমুচড়ে গেছিলো তুরস্ক ও সিরিয়ার সেই ভূমিকম্পে ঠিক সেই মতন। মাঝে মাঝে বিষণ্ণতা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কোথায় চলে গেল হয়তো তৃষ্ণা মিটবে বুঝি এমনটা মনে হতো আবার তো কখনো মনের ভিতর থেকে ইচ্ছা হয় শুদ্ধ হবার জন্য দাবানলে অগ্নি লাভায় ডুব দেই। কিন্তু পিছনে থেকে ভবিষ্যত টেনে ধরে বলে হার মানলে চলবে না পিছনে তাকিয়ে দেখ তোর কাঁধের বোঝা গুলো যে গুলো শুধুই তোর অপেক্ষায়। ভবিষ্যতে তাকিয়ে দেখ তোর কত দায়িত্ব কত কর্তব্য সেগুলো ভুলে গেলে চলবে না। কোথায় আছে একটু মুক্ত নিশ্বাস ফেলার মতো কলরব বিহীন সমাধি, কোথায় থেমে দিতে পারবো গলা ছেড়ে চিৎকার, কোথায় কার কাছে আছে আমার দিল আস্থা, কোথায় আটকে গেলে মিলবে এক মুঠো মনের প্রশান্তি। তোমাদের আনন্দময় কথায় চেয়েছিলাম দক্ষিণ জানালা খুলে একটু বিশুদ্ধ বায়ু মনে ধরাই কিন্তু আমার দক্ষিণ জানালা খুললেই তো কালো ধোঁয়া ভরে যায় বাসা বাঁধে ফুসফুসে। ধোঁয়া তাড়াতে যখন উত্তর জানালার কাছে উতাল বাতাস পাবো বলে যাই গিয়ে তো জানালা খোলার উপায় হারিয়ে ফেলি। বিভিন্ন স্তুপ একের পর এক জমে জং হয়ে গেছে জমাট বেঁধে বন্ধ হয়ে গেছে জানালা। যা খোলার সামর্থ আমার নাই নির্বিশেষে আমার দুটো জানালাই বন্ধ। অন্ধকারেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়। অনেক সময় দেখবেন একটু কিছু হলেই অনেকে কত চিল্লাচিল্লি করে কত বিপদ বিপত্তি সৃষ্টি করে আবার এটাও দেখে থাকবেন যে অনেক কঠিন কিছু ঘটে গেলেও আনেকে ঠিক চুপ-চাপ সয়ে যাবে কিছুই করবে না। যে না সয়ে বিপত্তি ঘটায় তাকে দেখে মনে হয় সে জানো কত কষ্ট কত দুঃখে চিল্লাছে। কিন্তু যে চুপ-চাপ সয়ে যায় সব থেকে বেশি পুড়ছে। যে চিল্লায় সে তো চিল্লাইয়া সব দুঃখ কষ্ট দুর করে দেয় আর যে চুপ-চাপ থেকে তার ভিতরটা চুরমার হয়ে যায় কেউ দেখেও না আর কেউ বুঝেও না। আসলে নিজেকে নিজের জীবন কে খুব সহজ করে নিয়েছি। সব পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে শিখেছি আর শিখবো না কেনো শিখতে যে হয়েছে কখন যে শিখে ফেলেছি আসলে জানিও না। তাই এখন আর কারো অবহেলায় নিন্দায় একটুও খারাপ লাগে না একটুও কষ্ট পাই না আমি তো আমার কাছে দিব্বি ভালো আছি। কিন্তু দিন ফুরিয়ে যায় রাত আসে গভীর নিবিড়ে মাঝে মাঝে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়। কে আমি কেনো মাঝে মাঝে আমার নিজের জীবনের প্রতি এত অভিযোগ দেই কই আমার চোখে দেখা পথের ধারে তো কত জনকেই দেখি মা নাই, বাবা নাই, সজন নাই, সুজন নাই,পরিবার নাই,পরিজন নাই, মাথা গুঁজবার একটা কুটিরও নাই আসলেই বড্ড আজব লাগে রোদে পোড়া বৃষ্টি ভেজা দুঃখে ঘেরা ধুলোপড়া দেহটা মিলিয়ে দেওয়ার মত দিন শেষ একটা বিছানাও তো নাই। এত নাই এর মাঝেও তো কত হাসি তাই তে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়। অভিমানী সুর আমি কখনো দিতে পারিনি কারণ আমার সম্বল হলো দু চোখের গাঁও বেয়ে পড়া নোনাজল যা ধীরে ধীরে শূন্য হয়ে যাচ্ছে সেই দিন শেষে একি বাসনা এক মুঠো প্রশান্তির কাছে খুবই অসহায়।
২. অভিশপ্ত কালবৈশাখীর ঝড়
রূপকথার এক গ্রাম। গ্রামটির চার পাশে খাল, বিল, নদী দিয়ে গড়া। বশির গ্রামের এক অটোরিকশা চালক। বশিরের স্ত্রী আমেনা বেগম খুব অসুস্থ। বশিরের বাবা পাঁচ বছর আগেই মারা গেছে। বশির তার মা আর আমেনা বেগম তিন জন একটি টিনের ঘরে থাকে। বশির আর আমেনা বেগম এক বছর আট মাস হলো বিয়ে করেছে। আমেনা বেগম অন্তঃসত্তা। হটাৎ এক আমাবস্যার রাতে পুর্ণিমার চাঁদের মত ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান আসে আমেনার কোল জুড়ে সকলেই খুশি কিন্তু সবাই খুশি হলেও খুশি হয়নি সেদিনের আবহাওয়া। হটাৎ শুরু হয় কাল বৈশাখী ঝড়। আমেনার অবস্থা খুবই খারাপ। বাহিরে মুষলধারে বৃষ্টি আর প্রচন্ড বেগে বাতাস বইছে। বশির কী করবে তা বুঝতে না পেরে সেই ঝড়ের মধ্যে তার অটোরিকশা নিয়ে চলে যায় গ্রামের পর কিছু দুরে কমিউনিটি ক্লিনিকে। এই ঝড়ের রাতে কাউকে ক্লিনিকে না পেয়ে সে যায় সেখানের ডাঃ আপার বাড়ি। এত রাতে ঝড়ের মধ্যে ডাঃ আপা যেতে না চাওয়াতে বশির খুব অনুরোধ করে। অটো করে বশির ডাঃ নিয়ে আসছে। এদিকে থামছে না বৃষ্টি আর ঝড়। তেমনি থামছে না নবজাতক শিশুর কান্না। হঠাৎ নিঃশব্দ হয়ে যায় আমেনা। বশির ডাক্তারকে নিয়ে আসলে ডাক্তার আমেনাকে দেখে মৃত বলেন। অদূরেই ঢলে পড়ে কান্নায় বশির আর তার মা। ডাঃ আপা দুঃখ ভরা মন নিয়ে চলে যায়। ঝড় কিছুতেই থামছে না। বশিরের মা চৌকির এক কোণে শিশুটিকে নিয়ে বসে আছে। হারিকেনের নিবু নিবু আলোতে বশির তার মৃত স্ত্রীর পাশে বসে কান্না করছে। সকালে ঝড় থেমে যায় গ্রামের সকলে ভিড় করে বশিরের বাড়ি। বশিরের শোক আক্রান্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দিচ্ছে গ্রামবাসী। পূর্ব দিকের বাঁশ বাগানের কাছে আমেনাকে কবর দেয়। পেরিয়ে গেলো কিছু দিন। কন্যা সন্তানটি কালবৈশাখীর ঝড়ের রাতে জন্ম হয় বলে তার নাম রাখা হয় বৈশাখী। বশির তার বউ এর মৃত্যু শোক সহ্য করতে না পেরে মানসিক ভাবে পাগল হয়ে যায়। পেটের দায়ে বিক্রি করে বশিরের অটোরিকশা। এভাবে শেষ হয় এক বছর। পাগল বশির গ্রাম ছেড়ে কোথায় চলে গেছে কেউ জানে না। কেউ পায়নি তার কোনো খোঁজ। এদিকে বৈশাখী বেড়ে ওঠে। বৈশাখীর বয়স পাঁচ বছর। বৈশাখী আর তার দাদি এক সাথে প্রতি দিন এবাড়ি-ওবাড়ি ভিক্ষা করে কেটে যায় দুই বছর। হটাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যায় বৈশাখীর দাদি। বৈশাখী হয়ে যায় একা। কিছু দিন গেলো বৈশাখী না খেয়ে। বৈশাখীর গ্রামের এর এক লোক শহরে থাকে সে বৈশাখী কে নিয়ে শহরে চলে যায় এবং এক প্রাভাব-শালী লোকের বাসায় কাজে দেয়৷ সাত বছরের মেয়ে বৈশাখী যেখানে তার সহপাঠীদের সাথে পড়াশোনা খেলাধুলা করবে সেখানে সে অন্যের বাসায় কাজ করে। প্রথম কিছু দিন ভালোই কাটছিল বৈশাখীর। বৈশাখী যে বাসায় কাজ করে সেই বাসার কর্তা জনাব রফিকুল সাহেব একজন সরকারি কর্মকর্তা। তার বাসায় সে এবং তার মা বাবা ও স্ত্রী সহ তিনটা সন্তান থাকে। রফিকুল সাহেবর স্ত্রী রুনা বেগম একজন স্কুল শিক্ষক। তার দুই ছেলে শিহাব এবং সিফাত ভার্সিটিতে পড়ে আর এক মেয়ে সুমাইয়া কলেজে পড়ে। সকালে রফিকুল বাসা থেকে বের হয় আর রাতে ফেরে কোনো কোনো দিন ফেরে না। কিছু দিন গেলে বৈশাখীর দুঃখের দিন শুরু হয়। বৈশাখী সাত বছরের মেয়ে। বাসার প্রায় সব কাজই তাকে একা করতে হয়। রান্না করা ঘর মোছা ঘর গুছানো কাপড় ধোয়া ইত্যাদি কাজ। এক দিন বৈশাখীর শরীর খারাপ করে খুব অসুস্থ সে। সকালে অসুস্থতার কারণে উঠতে পারেনি তাই সে দিন সকালের খাবার হয়নি। রফিকুল অফিসে যাওয়ার সময় নাস্তা না পেয়ে তার স্ত্রীকে অনেক বকে এবং অফিসে চলে যায়। রুনা বেগম গিয়ে দেখে বৈশাখী শুয়ে আছে। বৈশাখী কে টেনে হেছড়ে নিয়ে আসে রান্না ঘরে এবং রান্না করার হাতা দিয়ে খুব মারে। বৈশাখী মা বাবা বলে কাঁদছে তাও তাকে ছাড়লো না। বৈশাখীর কোনো কথাই শুনে না। অসুস্থ বৈশাখী নিরুপায় হয়ে কান্না করতে করতে কাজে লেগে যায়। এ ভাবে শুরু হয় বৈশাখীর উপর শারিরীক ও মানসিক অত্যাচার। এভাবে বৈশাখী প্রায় কোনো না কোনো সূত্র ধরে মার খায়। কেউ ছিলো না তাকে রক্ষা করার। এত অত্যাচারে বৈশাখী হয়ে উঠলো রোগা চেহারার। বৈশাখীর কাজ করতে খুব কষ্ট হয় কিন্তু কি আর করার যার জীবন শুরু হয়েছে কষ্টের বার্তা নিয়ে তার তো এই কষ্ট মেনে নিতেই হবে। এই তো সে দিন রুনা বেগম জলদি করে খাবার দিতে বললো বৈশাখী ছোট একটি মেয়ে সে অতিদ্রুত কাজ করতে গিয়ে তার হাত থেকে একটি গ্লাস পড়ে ভেঙে যায় রুনা শব্দ পেয়ে এসে দেখে একটা গ্লাস ভেঙে ফেলছে এবং দেখেই যে কি রাগ। বৈশাখীকে ধরে বেদম মার শুরু করে এবং সেই ভেঙে যাওয়া গ্লাসের খন্ডের উপর তাকে ফেলে দেয় তাতে বৈশাখীর হাত পা কেটে যায়। এ ভাবেই প্রতি নিয়ত কষ্ট সয়ে যায় তার কষ্ট দেখার মত কেউ নেই। বৈশাখীকে প্রায় প্রায় মার খেতে হয় টাকা চুরির অপরাধে। কিন্তু সে নিরাপরাধ। এভাবে কেটে যায় একটি বছর। সুমাইয়া প্রায় তার বাবার ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করে কেনাকাটা করে এবং রেস্টুরেন্টে খরচ করে। এই টাকা চুরি সকলে বৈশাখীকে দোষ করে। হঠাৎ বৈশাখী সুমাইয়াকে টাকা চুরি করতে দেখে ফেলে সুমাইয়া তাকে ভয় দেখিয়ে বলে সে তার মা বাবার কাছে যেনো না বলে এবং টাকা নিয়ে চলে যায়। কিন্তু সুমাইয়া খুব ভয়ে ছিল বৈশাখী যদি বলে দেয় এই জন্য সুমাইয়া তার বাবার ব্যাগ থেকে অনেক টাকা চুরি করে বৈশাখীর বিছানার নিচে রেখে দেয় এভাবে বৈশাখীকে চোর বানায়। বৈশাখীর বিছানার নিচে টাকা পেয়ে বৈশাখীকে রুনা বেগম অনেক মার-ধর করে জলন্ত উননের মধ্যে তার হাত পুড়ে দেয়। বৈশাখী ব্যাথায় কাতর হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তাকে রান্না ঘরে ঐ অবস্থায় ফেলে তারা চলে যায়। বৈশাখী ঐ খানেই পড়ে থাকে। কেউ তার উপর একটু দয়া দেখালো না। বৈশাখীর অনেক রাতে জ্ঞান ফিরে আসে এবং সে তখনি ওখান থেকে প্রাচীর টপকে পালিয়ে যায়। রফিকুল সাহেবের বাসার কেউ এই ব্যাপারে চিন্তিত ছিলো না আর কেউ বৈশাখীর খোঁজ করেনি। এদিকে রাত পেরিয়ে সকাল হলো গ্রামের মানুষ সকলেই অবাক। গ্রামের সকল মানুষ ভিড় বৈশাখীর মায়ের কবরের পাশে। বৈশাখীর মায়ের কবরের পাশেই একটা গাছে ঝুলছে বৈশাখীর নীথর দেহ। গ্রামের থানা থেকে বড় সাহেব এসে নিয়ে গেলো বৈশাখীর দেহটা। বৈশাখীর দেহে এমন কোনো যায়গা ছিলো না যেখানে অত্যাচারের দাগ নাই। এখনো প্রতিকার বৈশাখীর ঝড়ে বৈশাখীকে ঝুলতে দেখা যায় সেই গাছে।
৩. রক্তের নয় স্নেহের প্রেম
ফেসবুক একটি সামাজিক যোগাযোগ এর বিশেষ সহজ মাধ্যম। এখন কাউকে সহজে পেতে হলে ফেসবুকে খুঁজলেই পাওয়া যায়। আর পাবেও না কেনো কারণ এখন ছোটো-বড় যেই হোক একটু অবসর পেলেই ফেসবুকে ঘাটাঘাটি করে। যাই হোক ফেসবুকের ঘাটাঘাটি নিয়ে কিছু লিখবো না। ফেসবুকে মাধ্যমে হওয়া একটা হৃদয় ঘটিত মায়ার কথা বলবো। ২০১৬ সালে নিয়াজ ৪র্থ হয়ে অষ্টম শ্রেণিতে উঠেছে। নিয়াজ গ্রামের খোকন আনছারির একমাত্র ছেলে। নিয়াজ তার মা-বাবার এক মাত্র ছেলে। নিয়াজের আর কোনো ভাই অথবা বোন নাই তার একটা বোন এর খুব ইচ্ছা। নিয়াজ নিয়মিত ফেসবুক ব্যাবহার করে। এ ভাবে একদিন নিয়াজ কোনো এক পাবলিক গ্রুপ-এর পোস্টের মাধ্যমে এক জন মেয়ের সাথে পরিচিত হয়। মেয়েটির সাথে কথা বলে নিয়াজ জানতে পারে মেয়েটির বাড়ি নোয়াখালীর ফেনীতে এবং সে ১ম বর্ষের ছাত্রী। মেয়েটির নাম রিতা। এ ভাবে তারা একে অপরের সাথে পরিচিত হয়। এক সময় রিতা জানতে পারে নিজের ভাই বোন নেই সে একাই। এই ভাবে তারা নিয়মিত আড্ডা দিতে থাকে এবং তাদের মধ্যে একটা দুষ্ট-মিষ্টি সম্পর্ক হয়ে যায়। তারা এক জনের কথা অন্য জনকে বলে। নিয়াজ রিতাকে বোন বলতে শুরু করে এবং রিতাও নিয়াজকে ভাই এর মত করে ভালোবাসে। ভালোই তাদের দুষ্টামি-ফাজলামি করে দিন কাটছে। তারা এমন ভাবে কথা বলতো মনে হইতো তারা যেনো দূর-দূরান্তে নয়। তারা এক জায়গাতেই। নিয়াজ রিতার সব কথাই শুনতো। হঠাৎ রিতা দু-এক দিন ধরে ফেসবুকে একটিভ হচ্ছে না। এদিকে নিয়াজ রিতার চিন্তাতে অসুস্থ হয়ে গেছে। নিয়াজের মা বাবা নিয়াজের এই অবস্থা দেখে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তার নিয়াজকে দেখে ওষুধ দেয়। নিয়াজ ঠিক মতো খানাদানা করে না। এই কয়েক দিনে তার শরীরের অবস্থা খুব বেহাল হয়ে গেছে সে সব কিছুতেই অমনোযোগী হয়ে গেছে। হঠাৎ বিকালে রিতার মেসেজ এলো। রিতা মেসেজ দিয়ে বললো সে খুব অসুস্থ বেশ কয়েক দিন সে হসপিটালের ছিলো। সে Bone marrow Cancer এবং কিডনি, লিভার রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কাল তাকে কেমোথেরাপি দেওয়া হবে। নিয়াজ তার মেসেজ পেয়ে কান্না শুরু করে এবং নিয়াজ তার মা বাবাকে সব কিছু খুলে বলে। নিয়াজের মা বাবা তার কথা শুনে অনেক কষ্ট পায় এবং রিতাকে দেখতে যাবে ঠিক করে যাতে নিয়াজ খুব তারাতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়। তারা একদিন পরেই রওনা দিলো। সকালে নিয়াজ তার মা বাবা সহ রিতার বাড়িতে উপস্থিত হয়। তারা গিয়ে দেখে রিতাদের বাড়িতে অনেক মানুষ ভীড় করে আছে। নিয়াজরা জানতে পারে গতকাল শেষ রাতে হসপিটালে রিতার মৃত্যু হয়েছে। তার শূন্য নিথর দেহ হসপিটাল থেকে নিয়ে আসতেছে। শোনার সাথে সাথে নিয়াজ অজ্ঞান হয়ে পড়ে। নিয়াজদের কেউ চিনতো না। নিয়াজের মা-বাবা তাদের পরিচয় দেয় এবং নিয়াজ আর রিতার সব ঘটনা বলে। এতক্ষণে নিয়াজ সুস্থ হয়। নিয়াজ তার মা-বাবাকে ধরে অনেক কান্নাকাটি শুরু করে। কিছুক্ষণ বাদে রিতাকে নিয়ে আসলো। রিতার নিষ্প্রাণ দেহটার কাছে বসে নিয়াজ কান্নায় ঢলে পড়ে। নিয়াজের কান্না দেখে রিতাকে দেখতে আসা এলাকার সকল লোক কান্না করে। নিয়াজ এমন ভাবে ছটফট করতে ছিলো মনে হচ্ছিল তার দেহ থেকে প্রাণ চলে যাচ্ছে। নিয়াজ এই অজ্ঞান হয় আবার সুস্থ হয়। বিকাল বেলা রিতাকে মাটিতে কবর দেয়া হয়। নিয়াজের মা-বাবা নিয়াজকে নিয়ে চলে আসে তাদের বাড়িতে নিয়াজ সব সময় চুপ থাকে কারো সাথে কথা বলে না কেমন যেনো হয়ে গেছে। নিয়াজের সাথে কথা বলতে চাইলে সে শুধুই অনিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মূলত নিয়াজের বাকশক্তি ও শ্রবণশক্তি বিকলাঙ্গ হয়েছে। নিয়াজকে একটি পঙ্গু হাসপাতালে এডমিশন করা হয়।
৪. সর্বনাশের খিচুড়ি
“সর্বনাশ” কথাটা শুনলেই কেমন যেনো মনে হয় কোনো এক বিপদ সংকেত। মনে হয় এমন কিছু হবে যার কারণে ক্ষতি নিশ্চিত করা যায়। এমন কোনো কিছু বুঝাতেই “সর্বনাশ” কথাটা বলা হয়। কিন্তু আমরা প্রায়ই শুনে থাকি কোনো আনন্দময় খবর শুনেও অনেকই বলে “সর্বনাশ” এই যেমন কেউ যদি বলে কাল একটা বাস দূর্ঘটনা হয়েছে। তাহলে বলে “সর্বনাশ” কোথায়, কি ভাবে ইত্যাদি। এখানে সর্বনাশ বলা ঠিক। কিন্তু যখন কোনো খুশির অথবা আনন্দের খবর হয়। যেমন যদি কেউ বলে আজ আমার এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট পেয়েছি। আমি (A+) পেয়েছি। তখনও বললো “সর্বনাশ” তাই নাকি তাহলে তো ভালোই হইছে এখন মিষ্টি খাইতে হবে।
এরকম অনেক ঘটনা রয়েছে। আপনার শুনেছেন না কি জানি না কিন্তু আমি অনেক বার শুনেছি যে কেউ আনন্দের কথাতেও “সর্বনাশ” কথাটা বলেছে। তার মানে কি “সর্বনাশ” ডেউয়া ফলের মতো। কারণ ডেউয়া ফলের তো কোনো নির্দিষ্ট আকৃতি বা গঠন নেই ।
কবি পরিচিতি

কবি মেহেদী হাচান ২০০৪ সালের ১১ জুলাই বরিশালের ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার ২নং ওয়ার্ড বৈচন্ডী গ্রামের এক সম্ভ্রন্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মোঃ সেন্টু হাওলাদার এবং মাতা মোছাঃ কাজল বেগম। কবির শিক্ষাজীবন শুরু হয় ২০০৯ সালে নিজ গ্রামের বৈচন্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। পরে তিনি পাওতা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে এস. এস. সি. এবং ২০২৩ সালে বি. এম. টি শাখা থেকে এইচ. এস. সি. করেন।
নীরব মনের এই কবি বেশির ভাগ সময় একা থাকতেই ভালোবাসেন। ছোট থেকেই তিনি বিভিন্ন বিষয় বস্তুর উপর ছন্দ সাজাতে আনন্দ পেতেন এবং কবিতা লিখতেন, বিশেষ করে তিনি ২০১৪ সাল থেকে নিয়মিত লেখা শুরু করেন। বিভিন্ন সাহিত্যিক আঙ্গিনার সাথে জড়িত এবং বিভিন্ন সাহিত্যিক প্লাটফর্ম-এ যুক্ত রয়েছেন – সেখানে তিনি নিয়মিত লেখালিখি করেন এবং বেশ কয়েকটি সম্মননা সনদ অর্জন করেছেন। এ সবের মধ্যে উল্লেখিত বেতাগিয়া সাহিত্য ভূবন সনদ, জাতীয় গোল্ডেন সাহিত্য পরিশোধ সনদ, স্বরাজ সাহিত্য পরিষদ(স্বসাপ) সনদ, পূর্ব বঙ্গ সাহিত্য পরিষদ ট্রাস্ট সনদ, জাতীয় কবি ও সাহিত্য সংসদ সনদ। তিনি কবিতার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি গল্প লিখেছেন। উল্লেখযোগ্য কবিতা – একুশ নিয়ে গর্ব আমার, প্রত্যাশা, পড়ার টেবিল, করো কি স্মরণ তারে, চৌকনীপাল, ইত্যাদি। উল্লেখযোগ্য গল্প – এই রাতে সেই রাস্তা, অভিশাপ্ত বৈষাখীর ঝড়, কূল বিনাশী, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের অপরাধ, জীবনের সাথে এক যাত্রা, রক্তের নয় স্নেহের প্রেম, (প্রবন্ধ) সর্বনাশের খিচুড়ি এবং একমুঠো প্রশান্তি। এদেশের জনপ্রিয় পত্রিকা সহ বিভিন্ন লাইভ অনুষ্ঠানে আবৃত্তির মাধ্যমে বেশ কিছু কবিতা প্রকাশ পেয়েছে। তার লেখা বেশ কিছু যৌথ কাব্যগ্রন্থ প্রাকাশিত হয়েছে। এ সবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – সাহিত্যের দিশারী অদম্য ইচ্ছাশক্তি, স্বারাজ কাব্যসম্ভার, চৌষট্টি জেলার কবির মেলা প্রথম দেখায় ভালোবাসা। এ ছাড়া বিভিন্ন সমসাময়িক ম্যাগাজিনে কবির লেখা ছড়িয়ে রয়েছে। কবির শিক্ষাজীবন এখনো চলমান। তিনি বর্তমানে তাঁর পরিবারের সঙ্গে জন্মস্থান নলছিটিতে বসবাসরত আছেন।