অসিত কুমার রায় (রক্তিম) – কবিতা (নন্দিনী, নন্দিনীর বৃষ্টি ভেজা, নন্দিনীর অভিমান, সেই তুমি নন্দিনী, আবার নন্দিনী)

নন্দিনী

– অসিত কুমার রায় (রক্তিম)

নন্দিনী
তোমার জন্য, জানি না কতগুলো ভালবাসা পত্র লিখেছি ;
কতগুলো নতুন শব্দ চয়ন করেছি পৃথিবীর পাঠশালা থেকে।
বাবুই যত্নে বাসা বোনার মুহুর্তের মতন ভাবনারা জড়ো হয়।
ঝড়েতে খেজুর পাতায় দুলতে থাকা বাসা যেন যুঝতে পারে।
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ তোমার দুচোখ জুড়ে এমনি এক অদৃশ্য বাঁধন।

নন্দিনী
এই দেখো ঝুপ করে কেমন সন্ধ্যে হয়ে গেল;
সন্ধ্যামণিরা টুপ টুপ করে কেমন একে একে ফুটে উঠলো।
দোলনচাঁপাও দুলতে দুলতে স্বপ্নের পাঁপড়ি মেলে দিল।
জোনাকীরা এখানে ওখানে আলো জ্বেলে ফিরতে লাগলো।
তুমিও এলে, ছায়া মেখে সারা শরীরে তারার আলো নিয়ে।
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ গন্ধরাজ লেবুর গন্ধের মতো কেমন নেশা লাগে।

নন্দিনী
চাঁদনী রাতের চন্দ্রমাও ফিকে হয় তোমার মুখ ছবিতে;
শুকতারার থেকে উজ্জ্বল হয় কেন তোমার নাকের ফুল?
আলোকরশ্মি কোন সুদূর থেকে উড়ে এল ওড়না হতে।
এমন পা ফেলে হেঁটে যাও মনে হয় দেমাকি প্রজাপতি।
​ ​ ​ ​ ​ দেখেও না দেখার ভানে চলে যাও মনের গভীরে।

নন্দিনী
একরাশ চিঠির স্তুপের ভিতর জমে পাথর হয়ে গেছি;
পত্রগুলো নীলখামে ভরে কোনদিনও তোমাকে পাঠাইনি।
তোমার ঠিকানাই জানি না, কবে যে বলবে সেটাও জানি না।
তোমার ডাকবাক্সে কোনদিনই ওরা পৌঁছাতে পারবে না।
তাতে তোমার কোন দায় নেয়। ভালবাসি আমি, তুমি নও।
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ তোমার জন্য এক সমুদ্র অপেক্ষায় থাকব।

নন্দিনীর বৃষ্টি ভেজা

– অসিত কুমার রায় (রক্তিম)

নন্দিনী
আজ আর তোমাকে ডাকব না, থাকো নিজের মত।
সারাদিন রিমঝিম বৃষ্টি দেখার ছলে বৃষ্টি ভেজো।
চোখের পাতায় লেগে থাকুক বৃষ্টির ফোঁটা।
ওরা কখনোই আমার মতন হতভাগ্য হতশ্রী নয়।
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ আমার ঈর্ষাতে ওদের কিচ্ছু যায় আসে না।
আজ পিঠের ডানদিকের চিনচিনে ব্যথার বাড়বাড়ন্ত
আমিও বৃষ্টি দেখে বৃথা ব্যথা ভোলার চেষ্টা করছি।
এই বৃষ্টিতে ভিজে কাকটা কার্নিশে পাখা ঝাড়ছে।
তুমিও তো ভিজে চুল এইভাবেই ঝেড়ে ফেল।
তবুও তো ভিজে চুল বেয়ে জল পড়ে মাটিতে।
আমার আর বৃষ্টি হয়ে তোমায় ছোঁয়া হলো না।
বৃষ্টিফোঁটারা তোমার শরীরে নদীর মতন নিম্নগামী;
শেষে ওরা তোমার শরীরেই হারিয়ে যাবে দেখো।
এমনি নাম না জানা নদীগুলোর নাম রেখেছি।
তোমার তা না শুনলে ও চলবে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ আমার দিনলিপিতে লেখা থাকবে।

নন্দিনীর অভিমান

– অসিত কুমার রায় (রক্তিম)

এখনও কি তুই তেমনি যেমন আগে ছিলি!
ঘরে এসেছিস আর আমি তোকে না দেখার ভান করেছি।
বাপরে বাপ… আমার ঘাড়ে জানি একটাই মাথা।
তুই এসে যাওয়া মানে একটা ভীষণ ঝড়।
নাগাড়ে একটানা বৃষ্টির রিমঝিম বকবকম,
কে কেমন করে চেয়ে দেখল, কে কি বলল?
ওর কি এটা বলা উচিত ছিল? এক আকাশ প্রশ্ন ।
সন্দীপন কেন দোলার সাথে নাটক দেখতে গেল?
একবার কেন আমাকে ও বলল না।
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ তাহলে আমিও তো যেতে পারতাম।
দোলা কি আমার চেয়ে ভাল বোঝে সন্দীপনকে!
চোখের সামনে দিয়ে হাত ধরে দুজনে চলে গেল ।
​ ​ ​ ​ ​ আমাকে যেন ওরা দেখতেই পেল না।
ব্যগটা ইচ্ছা করে ফেলেছিলাম দৃষ্টি আকর্ষণ করতে;
​ ​ ​ ​ জানতাম ও আমাকে দেখবে না কিচ্ছু বলবে না।
পরের দিন কত গল্প। ওরা কী করল। কী নাটক দেখল;
নাটক শেষে বাড়ি ফিরল হাত ধরে, বৃষ্টি ভেজা হয়ে।
​ ​ ​ ​ ​ তুই বল আমি কী করে এতটা সহ্য করি।
বুকের ভেতরে সুনামির মতো কান্না ঠেলে চোখে আসছিল।
সটান চলে এসেছি তোর কাছে। সব বলে হালকা হতে চাই।
​ ​ ​ তুই না যদি শুনিস এই মুহুর্তে নিজেকে হারিয়ে ফেলব।

একপ্রস্থ হাসি হেসে বললাম- জানিসতো তোদের মতো আমি নই।
এখানে ওখানে যাবার ইচ্ছা থাকলে, ইচ্ছা দমন করে থাকতে হয়;
কবিতার খাতা, বই গান ছবি আঁকা ​ আর ঐযে ক্রাচ নিত্য সাথী!
জানিতো সন্দীপনকে তুই খুব ভালবাসিস। এতকথা আমাকে কেন?
নন্দিনী হেসে বলে- তুইতো প্রিয় বন্ধু ! তোকে সব বলতে পারি।
তোর ঝাকড়া চুল ছিঁড়ব, কবিতার খাতা ফেলে যা খুশি তাই করব
কিচ্ছু বলতে পারবি না, জানিতো তুইও আমাকে ভীষণ ভালোবাসিস;
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ তোর কাছে আসি লুকানো কান্না কাঁদতে।

সেই তুমি নন্দিনী

– অসিত কুমার রায় (রক্তিম)

চশমা’টা যে কোথায় রেখেছি খুঁজে পাচ্ছি না।
আজ যে তোমার সাথে দেখা করার কথা।
​ ​ ​ ​ ​ ​ তুমি তো জানো নন্দিনী,
চশমা ছাড়া আমি যে এক পাও চলতে পারি না।
ছোটো বেলা থেকে তুমি খুব খুব রাগাতে
চায়ের গ্লাসের মতো মোটা কাঁচের চশমা।
​ ​ ​ ​ ​ ​ আমার মুখে সেটা এক্কেবারে বেমানান।
মাঝে মাঝে লুকিয়ে রেখে মজা করতে;
ভাবতে বুঝি ইচ্ছা করে চশমা পরে থাকি
তোমার একটু অনুগ্রহ পাবার আশায়।
​ ​ ​ ​ ​ ​ একদিন চশমা ছাড়া হাঁটতে হাত ভাঙল…
খুব কষ্ট পেয়েছিলে, চোখের জলও ফেলেছিলে
আর বলেছিলে, এমন মজা আর কোনদিন নয়;
কেমন করে জানি খুব কাছাকাছি এসে গেলে;
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ আমি খুশি হলেও অনেকে হিংসা করতো।
তারপর থেকে হয়ে গিয়েছিলে বিশেষ বন্ধু
তারজন্য তোমাকেও কম শুনতে হয়নি;
তুমি একাই লড়ে গেছো অন্যদের সাথে।
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ আজ যদি পাশে থাকতে ঠিক তুলে দিতে।
চশমা বিহীন তোমায় লিখে চলেছি নন্দিনী
জানি, তুমি এটা জানবে না আর পড়বে না;
তবু আমি যেন একটা ​ সান্ত্বনা খুঁজে পাই।
​ ​ ​ ​ ​ ​ হয়তো এখুনি বলবে অনেক হয়েছে ​
​ ​ ​ ​ ​ ​ এবার চশমা’টা পড়ে নাও অনিকেত।

আবার নন্দিনী

– অসিত কুমার রায় (রক্তিম)

তুমি কি আমার সাথে সাগরের
​ ​ দুরন্ত নীল ফেনিল ঢেউএ ভাসবে;
পায়ে পায়ে হেঁটে তীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে রেখে
​ ​ চিকচিক বালুকাতে ছাপ রেখে যাবে।
বহুদূর যেতে যেতে যখন হয়ে যাবো ক্লান্ত
পিঠে পিঠ রেখে দেখব একান্ত নীলদিগন্ত।

কখনো দেখনি নাকি পালতোলা নাও সারি
কখনো রাখনি চোখ দুরের বলাকা দেয় পাড়ি।
আমি আবার যাব চলে সেই স্বপ্ন সমুদ্র স্নানে
যদি ভাবো যাবে, চলে এসো গানে গানে!
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ঠিক আসবেতো পথ চিনে।
দল বেঁধে সেদিন যে সভা করেছিলাম রুদ্ধদ্বার;
প্রশ্ন অনেক ছিল, যুক্তি ছিল না শুধু জবাব দেবার।
জীবন অনেক জটিল, সহজ ছিল না দায় নেবার।
তাই কথা বলি একা একা, পথ চলি একা একা; ​
ভালবাসাহীন এই জীবন, এ কেমন বেঁচে থাকা!
কেন বাঁচি একা একা, আবার হোক না দেখা, ​ ​ ​ ​ ​
বল কিসে মুক্তি আছে? জানি না শান্তি কোথা।

তবে এখনো স্বপ্ন দেখি, জাগি গল্প কবিতায়;
জীবনের পথ খুঁজে নিতে এখনো তো গান গাই;
মানুষের কাছে থাকি, এখনও পথের দাবি,
তরঙ্গ ঝড় দেখি সবই, বাঁচা মরা নিয়ে ভাবি;
এখনও গোলাপ ফোটে ইচ্ছা হয় ভালবাসতে
হাত দুটো রেখে দিতে তোমার ও শূন্য হাতে;
স্বপ্ন দেখবো রাতে দুজনে আবার নতুন করে; ​
ফেলে আসা পথ ছেড়ে নতুন এক পথ ধরে।
আবার নতুন গানে, ভিনদেশী এক সুর ধরে ​
কুড়াতে কুড়াতে নুড়ি হেঁটে হেঁটে যাব সুদূরে।


কবি পরিচিতি

অসিত কুমার রায় (রক্তিম)। জন্ম ৬ ফেব্রুয়ারি, ভতেহট্ট, নদীয়া, ভারতবর্ষ। বর্তমান নিবাস, কলিকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। পেশা কবিতার সঙ্গী হওয়া।

কবির ভাষায় – “জীবন কে দারুণ ভাবে অনুভব করতে চাই। যতটুকু আলো বাতাস খুশি আনন্দ মাটি আমার বরাদ্দ এই প্রকৃতির কাছে, আমি সবটুকু পেতে চাই। আমি বুঝে নিতে চাই একটা কাঁচপোকা বা পিপিলিকার এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবার অধিকার আছে। সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে চাই না। নারী স্বাধীনতা আমার কাছে বিশেষ মুল্য নিয়ে বিরাজ করে। চেষ্টা করি তার সম্মান তাঁকে পুরোটা ফেরত দিতে। আমি আমার পরিবার নিয়ে মাছে-ভাতে দিব্য আছি। ইলিশ বড় প্রিয়। বাংলাদেশের আমি ভীষণ ভক্ত। বাবার মুখে অনেক গল্প শুনেছি ভৈরব নদীর । স্বাধীন হবার প্রাক্কালে গিয়েছিলাম, সুযোগ হয়েছিল। সেই আভাস এখনো রয়ে গেছে স্মৃতিপটে। ভালো আছি, ভালো থাকবার চেষ্টা করি। অন্যকে ভাল রাখারও চেষ্টা করি নিরন্তর।”