দীপক রায় – কবিতা (ভোরের ভাবনা, জগতের হাওয়া, এইতো জীবন, হার আসে বার বার, আজকের সকাল, ‘৭১ ডিসেম্বর স্মৃতি)

ভোরের ভাবনা

– দীপক রায়

ভোরের ভাবনাগুলো এলোমেলো
রাত পোহানো নরম আলোর পাখায়,
ডানা মেলে কত ছবি রঙ পেলো–
আজ মনের বাগানে হাজারো বৃক্ষশাখায়!

কত প্রিয় মুখের অন্তরঙ্গ আনাগোনা
কত চেনাপথ আর ফেলে আসা প্রিয় প্রাঙ্গণ,
কত প্রাণময় প্রহরায় প্রিয় কথার প্ররোচনা
আজ প্রশান্ত প্রভাতে বিমর্ষ ব্যথিত এক মন!

কত হিসাব-নিকাশের মুহূর্তগুলো মনে ভাসে
কত আশা-নিরাশার বেদনা নীরব গানে,
হাজারো হার-জিতের হারানো দিন ফিরে আসে
দিনের রূঢ় বাস্তবতা এসে শেষে হানে এ প্রাণে!

জগতের হাওয়া

– দীপক রায়

জগতের হাওয়া কোনোদিন বুঝিনি
আজও তা আমার বোঝার বাইরে,
না বোঝার কারণ কোনোদিন খুঁজিনি
সে যোগ্যতা ছিলো না, এখনো নাইরে।

সোজা পথে যতো চলতে চেয়েছি
কত রকম কত প্যাঁচে ধরা পড়েছি,
যতই সহযোগিতার প্রয়াস পেয়েছি
বৃহৎ সব কৃত্রিম সমস্যাই শুধু গড়েছি!

নির্ভেজাল অকৃত্রিম কর্মের প্রচেষ্টায়
দুর্নাম কত সহজেই না এগিয়ে এসেছে,
তার প্রতিদান দিয়ে সীমাহীন সস্তায়
একদিন ‘নির্মল’ আনন্দে তারা ভেসেছে!

এইতো জীবন

– দীপক রায়

আজকালকার জীবনে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ চার পাশে শুধু অসংগতি,
ব্যস্ত দিনের শুরুতেই
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ লেগেই রয়েছে দুর্গতি।
​ ​ ছোট বেলায় যা ছিলো
এখন তা কোথায় গেলো?
কথায় কাজে এত অমিল
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ কবে আর হবে সুমতি!
কষ্টের মাঝে অস্থির সময়
​ ​ ​ ​ ​ ​ ভালো কাজে নেই সংহতি।

যদি কারও ভালো করো
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ নিশ্চিত তুমি হবে দোষী,
স্নেহ ভালোবাসা যদি দাও
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ মিলিয়ে যাবে তার হাসি।
দেওয়া-নেওয়ার জালে সবাই
​ ​ ​ ​ চলছে শুধুই খাই খাই,
চাওয়া-পাওয়াতে লজ্জা নাই
​ ​ ​ ​ সে ব্যাপারে হয়েছে দুর্মতি।
গাড়ী জ্যামে অস্থির সময়
​ ​ ​ ​ ​ লেগেই আছে ছোটা-ছুটি।

রাস্তাচলা প্রায় অসম্ভব
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ থুতু, ধূমপান, শব্দ দূষণ,
আর্থিক স্বচ্ছলতা দৃশ্যমান
​ ​ ​ ​ ​ দামী মোবাইল বেশ-ভুষণ।
মিথ্যা দিয়েই তর্ক চলে
কাজ-কর্মে সব তা বলে,
ভুল করেও জিততে চায়
​ ​ ​ ​ ​ ​ দেয় না কথায় অব্যাহতি।
টাকার পিছনে অস্থির সময়
​ ​ ​ ​ হতে চায় সবাই কোটিপতি।

হার আসে বার বার

– দীপক রায়

হার আসে বার বার
কোনো দোষ না করেও,
মন বোঝার কারবার
নেই আজ গেলে মরেও!
জোর তর্কে খোঁড়া যুক্তি
এ থেকে নেই আর মুক্তি,
শ্রদ্ধা ভালোবাসার নেই মূল্য–
জিদ না মেটে গেলে দূরে সরেও!!

কী হয় থাকলে আগের মতো
বন্ধুহীন স্বজন সুজন হারা,
নেই দায়বদ্ধতা ভুল করি যতো
নেই কেউ বকবে আমায় যারা!
দৈনন্দিন চলা-ফেরা
সুযোগ পায় নিন্দুকেরা,
অকারণ দোষ পাহাড় তুল্য–
মন্দ কী এভাবেই বাকীটা হোক সারা!!

আজকের সকাল

– দীপক রায়

শীতের সকালে
রোদের মাখামাখি,
ছাদের কিনারে
চড়ুইয়ের ডাকাডাকি,
অদূরে সাত তলায় সূর্যের হাসি।
লাগোয়া বারান্দায়
কাপড়ের ছড়াছড়ি,
নানা রঙে ঝুলছে
দু’প্রান্তে টাঙানো দড়ি,
হালকা কুয়াশায় দূষণ রাশি রাশি!!

রান্না ঘরে আওয়াজ
রুটি ভাজার গন্ধ,
সকালের ঠান্ডায়
জানালাগুলো বন্ধ,
পর্দা সরাই উষ্ণ রোদের আশায়।
রুটি ডিম সবজি
সকালের খাবার,
এ-সবই শুধু জোটে
নেই কিছু ভিন্ন পাবার,
সকাল আসে নতুন অনিশ্চয়তায়!!

‘৭১ ডিসেম্বর স্মৃতি

– দীপক রায়

ডিসেম্বর মাস এলে
​ ​ ​ ​ একাত্তরে ফিরি স্মৃতি মেলে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ মনের পাতায় তা আজও অমলিন।
বাল্য সে সব স্মৃতি
​ ​ ​ ​ দুঃখ আনন্দে ভরা এক প্রীতি
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ নতুন জন্ম নেয়া লাল-সবুজের দিন।।

বেতারে বজ্রকন্ঠ শুনেছি
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ দেশে ফেরার দিন গুণেছি
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ অবশেষে শীতের এক মেঘলা বিকালে।
খুলনা থেকে লঞ্চে ভেসে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ নামি চিলা বাজার-ঘাটে এসে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ হেঁটে চলি অফুরন্ত নতুন কৈশোর কালে।।

ছিলো না বাড়ীতে কিছুই
​ ​ ​ ​ শুধু পৈতৃক ভিটাখানি আর ভুঁই
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ লুটেছিলো সব এ দেশীয় পাকি-প্রেমিক।
সে এক মিশ্র প্রতিক্রিয়া
​ ​ আনন্দে বেদনায় কাঁদে ছোট হিয়া
​ ​ ​ ​ ​ ​ শেষে পাই বেঁচে থাকার এক নতুন দিক!!

শূন্য ভিটায় ফিরে এসে
​ ​ ​ ​ ​ ​ যেতে চাইনি কোন ভাবেই ভেসে
​ ​ ​ ​ নারকেল পাতা-বিছালীতে হলো নতুন ঘর!
জাতির পিতার আশ্বাসে
​ ​ ​ ​ শিক্ষা শুরু ​ সোনালী বিশ্বাসে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ স্বাধীন ভূমিতে ভুলে যাই আপন পর!!


লেখক পরিচিতি

দীপক রায় – পূর্ণ নাম: দীপক কুমার রায়। জন্ম এস এস সি সার্টিফিকেট অনুযায়ী ৭ই জানুয়ারী, ১৯৬৩। বৃহত্তর খুলনার অন্তর্গত বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলায় মালগাজী গ্রামে। বাবা স্বর্গীয় শ্রী ধনঞ্জয় রায় এবং মা শ্রীমতি অমলা রায়। মোংলার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয় ও খুলনার দৌলপুরে সরকারী ব্রজলাল কলেজ থেকে যথাক্রমে এস এস সি এবং এইচ এস সি পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।

চাকরি জীবন শুরু ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বর, ঢাকায় বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের জন্য বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার একটা স্কুলে সিনিয়র ল্যাঙ্গুয়েজ টিচার হিসাবে। ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে ওই চাকরি থেকে ইস্তাফা দিয়ে বর্তমান পর্যন্ত স্বনিযুক্ত প্রশিক্ষক হিসাবে বিদেশী শিক্ষার্থীদেরকে বাংলা ভাষার শিক্ষাদানের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।

ব্যক্তি জীবনে বিবাহিত। এক ছেলেও এক মেয়ের বাবা। ছেলে সুদীপ্ত রায় ঢাকার একটি বৃহত্তর বেসরকারী হাসপাতালে রেজিস্ট্রার ডাক্তার হিসাবে কর্মরত। মেয়ে শর্মিষ্ঠা রায় পরিবেশ বিজ্ঞানে সম্মান সহ সম্প্রতি স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনের পর ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় যোগ দিয়েছে।

বাংলাভাষা ও সংস্কৃতিতে গভীর ব‍্যুৎপত্তি ও অনুরাগসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী দীপক রায়। তাই কাজের ফাঁকে নিজের সন্তুষ্টির জন্য লেখা-লেখি নিয়ে সময় পার করেন। ফেসবুকে জীবন ও বাস্তবতা নিয়ে কবিতা লিখে থাকেন প্রতিদিনই, নিয়মিত। গান শোনা তাঁর অন্যতম প্রধান শখ। বিশেষতঃ রাগ প্রধান গান – এ উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রতি তাঁর ব্যপক আগ্রহ। যখনই অবসর পান গান শুনে সময় কাটানোই তার নিয়মিত অভ্যাস।