কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস – কবিতা (যদি এমন হতো, ভালো থাকার জন্য, আবার ফিরে আসতে চাই, আমার দেশ)

যদি এমন হতো

– কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস

সকালে ঘুম থেকে জেগে সকল মানুষ,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ বুঝতে পারতো জীব-জন্তুর ভাষা।
যদি এমন হতো স্বচ্ছ সুন্দর পরিবেশ,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ বৃক্ষরাজি কহিছে মনের কথা।
বাড়ির পোষা কুকুর ঘেউ ঘেউ না করে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ বলতো খাবার দাও লেগেছে ক্ষুধা।
সারারাত পাহারা দিয়েছি ঘুম না পড়ে,
​ ​ ​ ​ তোমাদের সাহায্য করতে মানিনি বাধা।
রাস্তায় গাধা পিঠে বোঝা নিয়ে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ অতি কষ্টে চলেছে দূরে কোথাও,
বলিছে অন্যায় অপরাধ করো না মোটে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ আমার কষ্টের কথা সবাইকে জানাও।
গাছ থেকে কতো সুস্বাদু ফল পাই,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ কখনো করে না ছিড়তে মানা।
যদি এমন হতো আমরা সবাই,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ বুঝতে পারতাম তার ব্যথা-বেদনা।
বিড়াল যদি মিউ মিউ না করতো,
​ ​ ​ ​ ​ ​ শুধু আদর আল্লাদের কথা বলতো।
বাঘ সিংহের হিংস্রতা বোঝা যেতো,
​ ​ ​ ​ ​ যদি ভাষায় প্রকাশ করতে পারতো।
পাখিদের সৌন্দর্য্য যেমন মনোমুগ্ধকর,
​ ​ ​ ​ ​ তেমনি তাদের চলাফেরা আচরণ।
যদি শোনা যেতো বাংলায় কোকিলের কন্ঠস্বর,
​ উপভোগ করতো সকল পরিবার পরিজন।
যদি এমন হতো হনুমান তাদের,
​ ​ মিলে মিশে থাকার কথা করতো ​ প্রচার।
মানুষে মানুষে একে অপরের,
​ ​ ​ ​ ​ মধ্যে সৃষ্টি হতো মানবতার ব্যবহার।
হাতি ঘোড়া সহজাতি তাদের সভায়,
​ ​ ​ ​ ​ যদি বলতে পারতো উপকারের বর্ণনা।
সাপে কেনো দংশন করে পালায়,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ মানুষে পেতো সমূহ ধারণা।
জীবজন্তু পশু পাখি যদি কহিতো কথা,
​ ​ ​ ​ ​ উপলব্ধি হতো সুখ দুঃখ ভালবাসা।
মানুষের স্রষ্টার কাছে বেশি নত থাকতো মাথা,
​ ​ ​ ​ ​ ​ প্রকাশ পেত শ্রেষ্ঠত্বের কৃতজ্ঞতা।

ভালো থাকার জন্য

– কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস

সকাল থেকে সারাদিন ব্যস্ত,
নানান কাজকর্মে আছে যুক্ত,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ শুধু ভালো থাকার জন্য।
কৃষক শ্রমিক সারাটা দিন,
অক্লান্ত পরিশ্রমে কাটিয়ে দিন,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ সামান্য খাবারে হয় ধন্য।
পরিবারে ভালো থাকার আশায়,
অনেকই শ্রম দেয় কঠিন ব্যবসায়,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ রাতদিন দিয়ে যায় সময়।
লেখাপড়া শিখে কেহ চাকুরীতে,
দায়িত্ব কর্তব্য পালন করতে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ছুটতে হয় দূরে উপার্জনের আশায়।
অন্ন বস্ত্র বাসস্থান নিয়ে,
চিন্তিত যখন অভাবগ্রস্ত হয়ে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ বিভিন্ন কাজে করে যোগদান।
অর্থের প্রয়োজনে কতজন,
ঝুকিপূর্ণ কাজে নিজেকে অর্পণ,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ শুধু সুখ শান্তির অন্বেষণ।
ভালো থাকার জন্য স্রষ্টার কাছে,
প্রার্থনা আর দিন যাপন করে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ সততায় আর সৎচিন্তায় কাটায়।
ভাগ্যের কারো নির্মম পরিহাসে,
কষ্ট দুঃখ সহ্য করে অনায়াসে,
​ ​ ​ ​ পৌঁছাতে পারে না সুখের কিনারায়।
গাড়ী বাড়ি অর্থ সম্পদ,
ভালো থাকার বাহিরের সনদ,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ কতবুদ্ধি আর পরিশ্রম।
সুশিক্ষায় আদর্শ নৈতিকতায়,
শান্তি মিলতে পারে সকল সময়,
​ ​ ​ ​ ​ ​ আর ভালো থাকার জন্য সৎশ্রম।

আবার ফিরে আসতে চাই

– কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস

আবার ফিরে আসতে চাই,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ এই সুন্দর মায়াবী ভুবনে।
মনে হয় অনেক কিছু পাইনি,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ যা রয়ে গেল মনের গহীনে।
শিশুকালে পেয়েছি মা বাবার ভালবাসা,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ পাইনি আধুনিক খেলনা।
আদর শাসনে মিটেনি সব আশা,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ বাধাগ্রস্থ হয়েছে অনেক কল্পনা।
প্রকৃতির নিয়মে কিশোর যৌবনে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে রোজগার।
সুযোগ সুবিধা অভাবের কারণে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ কত কিছু রয়ে গেছে জমা তার।
সবকিছু বদলাচ্ছে ক্রমাগত,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ প্রযুক্তির ছোঁয়া দরজায়।
আবার ফিরে এসে দেখবো কত,
​ ​ ​ ​ ​ ​ নতুন নতুন আবিষ্কারের বিস্ময়।
ইচ্ছা অনিচ্ছার বিরুদ্ধে সর্বদা,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ সাধ-আহল্লাদ পছন্দ মত।
হয়তোবা ঘুরতে পারিনি সদা,
​ ​ ​ ​ ​ মনের আশা পূরন হয়নি ইচ্ছামত।
পরিচয় হয়নি কত কিছুর সাথে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ যাওয়া হয়নি অনেক জায়গায়।
শেষ বেলায় স্বল্প সময় হাতে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ বাধা দেয় ক্ষণে ক্ষণে শরীরটায়।
জীবনে জানা শোনায় দেখায়,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ রইলো অনেক কিছু বাকি।
শিক্ষা দীক্ষায় কর্মক্ষেত্রে অভিজ্ঞতায়,
​ ​ ​ ​ ​ আরো দেওয়া নেওয়া ছিল নাকি!
শিক্ষক হয়েও পারিনি হয়তো,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ অনেক জ্ঞানের ভান্ডার লুটতে।
পারিনি কত ছাত্র ছাত্রীদের মনের মতো,
​ ​ ​ ​ ​ ​ সহায়তা করে তাদের ভবিষ্যৎ গড়তে।
আবার ফিরে আসতে চাই আমি,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ এই জগৎ সংসারের মাঝে।
সব আয়োজনে অংশ নেব ভাবি,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবের সাথে।।

আমার দেশ

– কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস

সুন্দর সুজলা সুফলা প্রকৃতি,
নদীবেষ্টিত অপরূপ আকৃতি।
নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের নেই শেষ,
আমার সোনার এই বাংলাদেশ।
পাখির ডাকে ভোরে জেগে উঠি,
ভালো লাগে চেনা মুখের হাসি।
সারাদিন কাজকর্ম, নেই কোন ক্লান্তি,
পথে প্রান্তরে দেখি কৃষকের হাসি।
কত মহামারির স্বাক্ষী হয়ে,
বেঁচে আছে কেহ পরিবারের হাল ধরে।
ঘাটের মাঝি নৌকায় এখনো ঘুমায়,
আবার কেহ ভুগছে অনেক যন্ত্রণায়।
দালান কোটা রকমারি গাড়ি বাড়ি,
তৈরি হয়েছে কত মিল-ফ্যাক্টরি।
তবুও গোলপাতার ঘরে থাকে নিদ্রারত,
আজও দারিদ্র্যতার কষাঘাতে জর্জরিত।
কখনো প্রকৃতির বিরূপ আচরণে,
আমার দেশে কষ্ট পায় দুঃখীজনে।
আমার দেশের পদ্মা সেতু মেট্রোরেল,
যোগাযোগের অত্যাধুনিক নতুন মডেল।
সুসজ্জিত দেশরক্ষা বাহিনী যত,
সততা দক্ষতা আর দেশপ্রেমে রত।
আমার দেশের গুণী মানুষেরা,
উন্নতি আর যোগ্যতায় বিশ্বের সেরা।
বিভিন্ন দেশে আছে কর্মরত অনেকে,
দক্ষতার পরিচয় দিয়ে সুনাম করছে।
আমার দেশের শিক্ষা স্বাস্থ্যসেবা হবে উন্নত,
দেশে বিদেশে সুনাম করবে অর্জিত।
দেশের শ্রমিক, দেশের কৃষক,
নিবেদিত আছে যত শিক্ষক।
আমার দেশের মাটি জল আকাশ,
মহান স্রষ্টার সৃষ্টির বহিঃপ্রকাশ।


কবি পরিচিতি

কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। জন্ম জুলাই ২, ১৯৫৫, বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার কাষ্টবাড়িয়া গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে। পিতা – হৃদয় চন্দ্র বিশ্বাস, মাতা – ফুলমতি বিশ্বাস।

ছোট বেলা থেকে একটি সংগ্রামশীল পরিবারে সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন লেখাপড়ার পাশাপাশি আবৃত্তি, গান ও মঞ্চনাটকের সাথে যুক্ত হন। গনিতের অধ্যাপক হলেও সাহিত্যের প্রতি তাঁর ভালো লাগা আজীবন। কর্মজীবনের অবসরে থেকেও সাহিত্য চর্চায় নিজেকে সম্পৃক্ত নিরলসভাবে।

স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকা, বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও সাহিত্য পত্রিকায় তার লেখা কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। সহজ ভাষায় ছন্দ মিলের উপস্থাপনায় লেখা তার কবিতাগুলো পাঠ করে পাঠকেরা সামান্যতম আনন্দ পেলেই কবি নিজেকে ধন্য মনে করবেন।