গোলাম রহমান – কবিতা (স্বাধীনতা আমার, বাঙালী জাতির ইতিহাসে আর একটা দিন, মেঘবতীর বৃষ্টি ভেজা আর্দ্র মাটি, রাঙা সূর্যের মুখ, খেল খেলতে রহেগা)

স্বাধীনতা আমার

– গোলাম রহমান

স্বাধীনতা মানে-
দানবের খাঁচা ভেঙ্গে শ্বেত কপোতের নীলিমায় ওড়া,
সাঁঝের বেলায় সারি সারি বলাকার নীড়ে ফেরা।
স্বাধীনতা মানে-
মায়ের কোলে মাথা রেখে আকাশের চাঁদ দেখা,
ভোরের আলোয়ে বোনের মুখের মিষ্টি হাসি দেখা।
স্বাধীনতা মানে-
দখিনের মাঠে মুক্ত হাওয়ার পরশ পাওয়া,
পাল তোলা নায়ে মাঝির ভাটিয়ালী গান গাওয়া।
স্বাধীনতা মানে-
চৈতের দুপুরে বটের ছায়ায় রাখালীয়া বাঁশী শোনা,
চাঁদনী রাতে সাহাবাড়ির উঠানে নৌকাবিলাস গান শোনা।
স্বাধীনতা মানে-
দোলের দিনে অরুর কপোলে লাল সবুজ রঙ মাখা
নরম হাতটি ধরে গভীর কাজল চোখে চোখ রাখা।
স্বাধীনতা মানে-
শ্যামল সবুজ ক্যানভাসে ভোরের সূর্যের ছবি আঁকা;
সোনালী ধানের খেতে চাষীর মুখের মনকাড়া হাসি দেখা!

স্বাধীনতা আমার ঘুমভাঙ্গা মমতাময়ী মায়ের মুখের মধুর হাসি
স্বাধীনতা আমার “আমার সোনার বাঙলা, আমি তোমায় ভালোবাসি”!

বাঙালী জাতির ইতিহাসে আর একটা দিন

– গোলাম রহমান

বাঙালী জাতিসত্ত্বা ধুলায় মেশাতে
হিংস্র জানোয়ার হায়েনার মত
ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র নিরীহ ঘুমন্ত
মানুষের বুকের উপর, নির্বিচারে
গুলিতে গুলিতে ঝাঁজরা করে মানুষের বুক
কামানের গোলা ছুঁড়ে আগুনে পুড়িয়ে দেয়
মানুষের আবাস;
তাদেরকে কতটা মানুষ ভাবা যায়?
তাহারা আবার নাকি সভ্য জাতি;
চমৎকার! চমৎকার!!

আমরা একটু ইতিহাস দেখে নেই-
দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে জন্ম নেয়া
মুসলমানের দেশ পাকিস্তান;
যেই দেশ গণতন্ত্রের মুখ দেখেছে খুব কম
সামরিক জান্তারা রাষ্ট্র পরিচালনার ভার
নিজেদের হাতে নিয়েছে তুলে বার বার।

৪৭এ পাকিস্তানের জন্ম লগ্ন থেকে
বাঙালী জাতি হ’তে থাকে শোষনের শিকার।
৫২তে মুখের ভাষা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা
প্রতিহত করতে তরুণের তাজা রক্তে
রাজপথ সয়লাব, জেল-জুলুম অব্যাহত
৬৯এর গণ অভ্যুত্থানে আইয়ূব খান
সরে গিয়ে ক্ষমতা তুলে দেন আর এক
সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খানের হাতে;
৭০এর নির্বাচনে বাঙালীর নিরঙ্কুশ জয়
শুরু হলো ষড়যন্ত্র সাংবিধানিক অধিকার
থেকে বাঙালী জাতিকে বঞ্চিত করার।
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ
জাগিয়ে তুলল বাঙালীসত্ত্বা
“এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম”!
পাকিস্তানি জান্তারা ২৫শে মার্চের গভীর রাতে
বাঙালী জাতির প্রাণ প্রিয় নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমানকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে
পশ্চিম পাকিস্তানে করে কারাবন্দী।

সেই রাত থেকে শুরু ভয়ঙ্কর বরবর গণহত্যা
নিরীহ ঘুমন্ত মানুষের বুকে অতর্কিতে ছোঁড়া
মেশিনগানের গুলি, কামানের গোলা
রাজপথ জুড়ে পাকিস্থানি সামরিক সাঁজোয়া বাহিনী।
শহর থেকে শহরে গ্রাম থেকে গঞ্জে চলে নির্মম
হত্যাযজ্ঞ আর আগুনে পুড়িয়ে দেয় মানুষের আবাস।
বাঙলার জমিনে পড়ে থাকে শিশু কিশোর নারী পুরুষ
বিভিন্ন শ্রেণী পেশার অগণিত মানুষের লাশ;
বাঙালী জাতির ইতিহাসে আর একটা দিন
যোগ হলো নারকীয় “গণহত্যা দিবস”!

মেঘবতীর বৃষ্টি ভেজা আর্দ্র মাটি

– গোলাম রহমান

খোড়লে ঢুকে গেছে চোখ তবুও আবছা আবছা দেখি
উঁচু করা তর্জণীটা ভাসে জনসমুদ্দুরে;

চেরাপূঞ্জী ছেড়ে চলে এসো মেঘবতী,
গোপালগঞ্জের মাটি ভিজিয়ে দাও বিষাদিত ধারায়!

তোমাকেই পারতে হবে বাঙলার আকাশ থেকে মুছে দিতে
বিষাদের ছায়া!
এ মাটির বুক থেকে
লাল রক্তের দাগ ভেসে যাক পদ্মা-মেঘনা-যমুনার স্রোতে!

হতভাগা বাঙালীর মুঠো ভরে থাক
মেঘবতীর বৃষ্টি ভেজা আর্দ্র মাটি…

রাঙা সূর্যের মুখ

– গোলাম রহমান

যাঁহারা একবার গিয়েছেন চলে
রক্ত পিচ্ছিল পথ পেরিয়ে
রক্ত-ঘামের গন্ধ ছড়ায়ে,
শীতের শেষে ঝরা পাতা কুড়িয়ে
বারুদের গন্ধ শুঁকে নিয়ে
দু’ফোটা চোখের জল রেখে যাই
পলাশের রাঙা পাপড়িতে;
কুহকের ডাকে ফিরবে না আর
সবুজ অরণ্য মাঝে
রাঙা সূর্যের মুখ দেখতে!

খেল খেলতে রহেগা

– গোলাম রহমান

আকাশটা ছিল বেশ ঘন নীল
ঝলমলে রোদ বা বৃষ্টির সম্ভাবনা হীন
ধূসর ধুলো উড়িয়ে মেরুন রঙের ঘোড়া
ক্লান্ত পায় ছুটছে প্রান্তিকের দিকে
ক্ষুরের শব্দ বাতাসে মিলিয়ে যেতে না যেতেই
বাজ পাখি তার বিশাল পাখনা মেলে দিলো
লজ্জাবতীলতা তার পাতা গুটিয়ে নিলো তড়িত
পাখপাখালিরা তাড়সস্বরে ছুটছে নিরাপদ
আশ্রয়ের সন্ধানে
ঝোপের ভেতর থেকে হুতোম প্যাঁচাটা
ডেকে উঠলো খরখরে গলায়
জয়তীর হাতটা ধরাছিল মুঠোয়ে
ভীষণ কাঁপছে
বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে বললাম – ভয় পেয়ো না
দুনিয়ামে অ্যায়ছা খেল খেলতে রহেগা
যবতক কেয়ামত নেহি আয়া


কবি পরিচিতি

গোলাম রহমান। জন্মস্থানঃ বরিশাল।

বর্তমান নিবাসঃ ঢাকা, বাংলাদেশ, ফোনঃ ০১৭১০৮৯৫২৫০।