পথের দোষ
– বিভূতি দাস
পথের দোষ নয়গো সুজন দেখে চলতে হয়
জীবন-খানা পদ্ম পাতায় শিশির ভেজা নয়
অকুলে কুল মেলে তারই, ধরে থাকলে হাল
আঁধারে ও পথ মেলে জ্বললে হৃদে মশাল।
আলগা পানির নেই দাম, কোন সাধনায় তা লাগে
প্রাণ শূন্য খাঁচা কি আর নতুন করে জাগে
থাকলে শেকড় আঁকড়ে মাটি তবেই বাঁচে সবুজ
বুঝে দেখো ভালো করে আর হইয়ো না অবুঝ
থাকতে সময় ঠাহর করো পথের কোথায় শেষ
সময় কারো নয়রে গোলাম নয় ফকির দরবেশ
মূল্য দিলে ফেরত দেয় সে হিসেব করে গুনে
হাওয়ায় ভাসালে পানি ফোটে না ফুল আসমানে।
অলীক আশা ঘোর তামাশা উল্টো খাতেই বয়
জীবন পথের কোন রাস্তাই সহজ সরল নয়
সময়ে হালের মোচড় সঠিক পথই দেখায়
আলগা ইচ্ছা বেকার ভাবনা বিফলেই তা যায়।
মাঝি রে ও মাঝি
– বিভূতি দাস
মাঝি রে ও মাঝি, কোথা বাইয়া যাও
দিন শেষ তীরে বসে, পার কইরা দাও
ঘর থেকে ও ঘর ছাড়া, মন পরবাসী
সব জেনেও তুমি তবু থাকবে কি উদাসী!
সকাল গেল হাসি কান্নায়, দুপুরে দায় এলো
সূয্যি ঢলে পাটের পথে আর লাগে না ভালো
আঁধারে ভয় ধরে মনে, কার কাছে বলি
পাই না খুঁজে বন্ধু সুজন, কেবল কথাকলি।
আলো বিনা বল দেখি কেবা থাকে বেঁচে
শুক্তি পেলাম মুক্তা ছাড়া জীবন নদী সেঁচে
ঋণ শোধের পাকা খাতায় হিসেব চুকিয়ে দাও
মাঝি রে ও মাঝি, এবার তরী ভেড়াও।
পলাশ রাঙা মন
– বিভূতি দাস
বন্ধু তোর পলাশ রাঙা মনে
ইচ্ছে করে তির তিরিয়ে বাতাস হই
গলায় বেঁধে সুরের মাদল খুশীর ফাগুনে
মন মহুয়ার প্রেমের নেশায় সবুজ ভুবনে
বন্ধু তোর পলাশ পলাশ মনে।
বন্ধু তোর পলাশ পলাশ মনে
জাগছে বুঝি সারা দুপুর নানা রঙের সুর
উড়ছে ভ্রমর কাজল পাখায় বেঁধে নিক্বণ নূপুর
প্রজাপতির হাসিতে দুঃখ ভুলে চল পালাই বহুদুর
কেউ পাবে না খুঁজে কোনখানে।
বন্ধু তোর পলাশ রাঙা মনে
কেন রুক্ষ বাতাস থমকে আছে কিসের প্রতিক্ষায়
ইচ্ছে করে মেঘ হয়ে জড়িয়ে ধরি বুকে
প্রেমের মাদল বাজাই জোরে মন হারানোর সুখে
দুজনায় বেঁচে থাকি বসন্ত কুজনে
বন্ধু তোর পলাশ পলাশ মনে।
কুলভাঙা নদী
– বিভূতি দাস
ওরে ও কুলভাঙা নদী
কোথাযাস তুই ভাঙতে কার হৃদি
অকারণে জাগাস হাজার স্মৃতি
ওরে ও কুলভাঙা নদী।
যতনে সাজানো গোলাপ বাগিচায়
মনের পাপিয়া কেঁদে যায়
না বুঝে হেঁয়ালি ভাসে এই হৃদি
মাঝ দরিয়ায় এসে কি ফেরা যায়?
হৃদি চাহে না যারে কেন হলে সাথী
সুর ছিল সারাবেলা ভাব উদাসী
কেন এঁকে যাও অঞ্জনে ধুসর স্মৃতি
ওরে ও কুলভাঙা ছলছল নদী।
মৌ পিয়ে
– বিভূতি দাস
পলাশ ফুলের মৌ পিয়ে
মৌটুসি তুই কোথায় গেলি
বসন্ত রঙ মেখে পাখায়
কোন নেশাতে বিহ্বল হলি
সাজিয়ে ডালি বাগের রাণী
ডাকছে তোকে আয় চলি
বুক ভরা মধুতে তার
দিচ্ছে নজর হাজার ওলি।
যায়নি শীত সকাল বিকাল
ঘুম ভাঙেনি সব সবুজের
আসছে ওলির মূর্ছনা দল
সৌরভ পেয়ে আম মুকুলের
জাগছে শাল জাগছে পিয়াল
সাথে নিয়ে মহুয়া মাতাল
দখনে বাতাস দিচ্ছে হানা
ঘুম ভাঙানোর হলে খেয়াল।
পাতায় পাতায় সবুজ হাসি
বাজে মনে শ্যামের বাঁশী
খসে পড়ে দিলের বাঁধন
পলাশ ফুলের মৌ পিয়ে
শরাবি আঁখ খেলে হোলি।
কবি পরিচিতি

বিভূতি দাস। অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক। জন্ম ১৪ই ফেব্রুয়ারী, অভিভক্ত ২৪ পরগনার কৃষক পরিবারে।
প্রকৃতির কোল ছুঁয়ে গ্রামে বেড়ে ওঠা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। ছাত্রাবস্থা থেকেই সৃষ্টির সাথে প্রেম। নেশা-লেখালিখি এবং ভ্রমণ। বর্তমান নিবাস – সোনারপুর, কলকাতা –৭০০ ১৪৯, ভারত।