পারমিতা ব্যানার্জি – লিমেরিক গুচ্ছ

লিমেরিক গুচ্ছ (১ – ১0)

– পারমিতা ব্যানার্জি

(১) উঠতি কবি

সুকুমার প্রেমী, এক ছোঁড়া-কবি ভাবলো,
লিখবে সে পদ্য কিংবা এঁকে হবে পাবলো।
লিখতে গিয়ে লিমেরিক,
হেঁচকি তোলে হিক্ হিক্।
শোনাতে গিয়ে আড্ডায়, তীরে তরী ডুবলো।

(২) মধুর পোকা

পদ্মকলির মধু খায় মিশকালো ভোমরা।
ডায়াবেটিসে ভুগে পিঁপড়ে হ’ল গোমরা।
ফড়িং আর প্রজাপতি,
মদ্য খোঁজে ইতি উতি।
মৌমাছি ভুল করে চোষে পাকা আমড়া।

(৩) ঘুমের টেনশন

চোখ বুজেই হাই তোলে বড় ভাই মন্টু।
নাকে সর্ষের তেল ঢালে মেজ ভাই ঝন্টু।
ওদের ঘুম হয় না।
টেনশন কাটে না।
ঘুমায় সরকারি দপ্তরে, ছোট ভাই ঘন্টু।

(৪) নব্য সেলফি

টাকমাথা ভূতনাথের আছে বড় জুলফি।
রোজ রাতে গান গায় আর খায় কুলফি!
পড়শিরা ভয় পায়,
দরজায় খিল দেয়।
তাই দেখে দুঃখেতে শুয়ে তোলে সেলফি!

(৫) পালোয়ান

নাম তার দেবদাস, ডাক নাম দেবু।
প্রতিদিন সকালে খায় নুন ও লেবু।
খান তিন রুটি খান।
গাঁজাতেও দেন টান।
শীত কিংবা গ্রীষ্মে হন নাতো কাবু।

(৬) খেন্তি পিসির রান্না

চচ্চড়িটা রাঁধে ভালোই, বুড়ি খেন্তি পিসি।
রাঁধতে গেলে আসে তার হাঁচি আর কাশি!
গুণ যে তার একটাই,
নেই তো বারফাট্টাই!
দোষের মধ্যে, রাঁধে আর দাঁতে ঘষে মিশি!

(৭) বাঘ রহস্য

সোঁদর বনে বাঘ ডেকেছে, মামা কাঁপেন ত্রাসে।
রান্না ছেড়ে বিনু মাসীও, খকর খকর কাশে।
মামা চোখ রেখে বন্ধ,
খোঁজেন বাঘের গন্ধ!
এসব দেখে বাঘের মাসী, ‘মিয়াও’ করে হাসে!

(৮) ছন্দ পতন

রাঘব বোয়াল করছে জল ঘোলা।
রুই কাতলার মনটা ভোলা ভালা!
চুনোপুঁটির যত্ত দোষ!
তারাই যেন নন্দ ঘোষ!
চাবি কই? রইল পড়ে ভাঙা তালা!

(৯) বর্ষার আনন্দে

কোলা ব্যাঙ ছাতা মাথায় যেই তুলেছে ঠ্যাং,
উঠে এসে কুয়োর কুনো মারলো কষে ল্যাং!
পুকুর পাড়ে চলছে খেলা।
হাঁকছে হাঁস উঁচিয়ে গলা।
কানকো দিয়ে হেঁটে ‘কই’ নাচলো ড্যাড্যাং ড্যাং।

(১০) ছড়ায় ছড়া

ছড়া লেখা খুবই সোজা, বলেছিল মেজকা।
তড়িঘড়ি কাগজ কলম দিয়ে গেল ছোটকা।
ভাবনায় ভাবনায়,
লেখবার বাহানায়
হিজিবিজি কাটে, পেনে দিয়ে এক ঝটকা!


কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।

ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।