সুমিত্র দত্ত রায় – কবিতা (আলো, নিবেদন, পসরা, বিস্ময়)

আলো

– সুমিত্র দত্ত রায়

মাথার কোষগুলো অচল,
নেশাগ্রস্ত একটি জীবন-
পথে পরে মরণ কবলে,
পথের হদিশ! বাতুলতা।

নিমেষগুলো খণ্ডাতিখণ্ড,
ভাসছে হাওয়ায় ফালতু!
অমূল্য কি? মূল্যহীন নাকি-
মূল্যবান! বিচার কে করে?

প্রতি পাতা উড়ে উড়ে ক্লান্ত,
কলমের আঁচড় মেলে না,
অচল সচল হবে কি করে?
নতুন ভাবনার জগৎ চাই।

আঁধারে দেশলাই পেলাম,
মনে হয় কোষগুলো চালু
করতে হলে, ভাঙ্গাটা খুব
দরকার। ভাঙ্গাগড়ার শুরু।

উদ্যানে সবুজ ভালবাসা,
কলমে কবিতার আবেশ,
আলো দেখাবার জন্য শুধু
দেশলাই প্রয়োজন ছিলো।

নিবেদন

– সুমিত্র দত্ত রায়

পূর্ণ তুমি করো না আমায়
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ সমাপ্তি আমি চাই না,
সৃষ্টি বাসরে স্বপ্নিল ​ রাত
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ মন ভরলে পাই না।

তার থেকে ভালো শূন্য থাকা
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ সাজিয়ে ফের ভরাবো,
বীনাপানি শুভাশীষে আজ
​ ​ ​ ​ ​ ​ আলোতে মন মাতাবো।

শূন্য ঘরের এ খেলা নিত্য
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ আমার কাছেই থাক,
মহাশূন্য-মিলন মেলায়
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ শূন্য মিলিয়ে যাক।

পসরা

– সুমিত্র দত্ত রায়

আমি যে অনাঘ্রাতা অসুন্দর বনফুল,
আমাদের স্বপ্নমায়া! কুঁড়িতেই শেষ।
নাকউঁচু সম্প্রদায়ের যত ইন্ধন দানে,
আজকে কিন্তু দুকুড়ি বসন্তও কাবার।

এক সময় স্বপ্নে দেখা রাজপুত্তুর
অনেক আসতো যেতো,
কেউ আর আজ আসে না ।
এখন নতুন রীতি,
কপাকপ গিলে,
আসবো বলে, ধাঁ।
অসহ্য লাগে আমার।

আমার ঘাটতিগুলো কেউ দেখায় না।
চাপা রঙ, শিক্ষা কম ;
চলে যাওয়ার ছুতো।
খেলাচ্ছলে যদি কিছু চাও,
নিতে পারো।
বিনিময়ে সজীব সন্ধান আমি চাই।

পল্লবিত সাজতে চাই শুধু একবার।
চিরন্তন মাতৃভুমিকে চাই দখলে।
কেউ আসে না।
তবে কি আমি তোমাদের চোখে শুধুই এক
কালো পাষাণের প্রাণহীন শিলামূর্তি?

বিস্ময়

– সুমিত্র দত্ত রায়

একটি পৃথিবী ছিলো,
দুয়েতে মিলেও এক।
যখন তিনে, তখনও…
কোন তফাত মেলে নি।

নক্ষত্রের আকর্ষণেই
সূর্য থেকে গ্রহ হয়,
শুনেছিলাম সবার মতো,
তা তো চোখে দেখা নয়!

কিন্তু চোখে দেখলাম,
পৃথিবী টুকরো হলো।
টুকরো হয়ে তা দুই,
অবশেষে তিনটি ভাগেও…

আকর্ষণ ছিলো- নাকি
বিকর্ষণ! তা অনিশ্চিত।
কেবল নিশ্চিত আমি,
পৃথিবীটা টুকরো হলো।

অথচ আশ্চর্যভাবে তা
সম অক্ষে ভ্রাম্যমাণ।
কিভাবে যে চ্যুতি ছাড়া
ওদের চলা, সেটাই বিস্ময়!


কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।

আমি ছেলেবেলা থে‌কে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু,  আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।