পরিচয়
– অসীম পোদ্দার
আমি এক অনাথ পাখি
গাই বাংলার গান
আমার জননী বাংলা
ঠিকানা সুন্দরবন।
প্লাবনে প্লাবনে স্বজন হারায়ে
ধূসর পাখনা মেলে
মরুর আকাশে ঘুরে ঘুরে বেড়াই
ভোলা কাঙালীর ছেলে।
কোভিড ১৯
– অসীম পোদ্দার
হঠাৎ করেই অশুভ ইঙ্গিত বিশ্বজুড়ে
চীন থেকে এক মরণব্যাধি ঢুকছে ঘরে।
ধনী গরীব পায়না রেহাই সবাই ভয়ে আছড়ে পড়ে
মৃত্যু ভয়ে অনেকেই ঢোকে পাতাল পুরে।
রোগীর কাছে কেউ যায় না, নেই রে দরদ
টেক্কা দিয়ে উর্ধ্বগতি মৃত্যু পারদ।
দম থাকতে দমের মরণ আত্মার বাড়ি যমের পুরে
মায়া মমতার জ্বলছে চিতা সবাই থাকে দূরে দূরে।
বিজ্ঞানীদের ঘুম ভেঙে যায়, বসল তারা নড়ে চড়ে
ধ্বংস করতে হবে রোগের যে করে হোক আঁতুড় ঘরে।
সবাই ভাবে, সমাধানের উপায়টা কী, চক্ষু বুজে
অবশেষে এক দাওয়াই পেল নানান তথ্য খুঁজে।
মানুষ নামের আজব জীবের খবর
জানতো নাতো কোভিড ১৯ পোঁকা
ধোকা দিতে এসে খেল মরণ ধোঁকা।
পদ্মা সেতু
– অসীম পোদ্দার
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেতু, পদ্মা সেতু।
শেখ হাসিনার দৃঢ়তার সেতু, পদ্মা সেতু।
বাংলাদেশের আশার আলো, পদ্মা সেতু।
স্বাধীনতার আর এক পুরস্কার, পদ্মা সেতু।
পদ্মা সেতুর গলার হার, পদ্মা সেতু।
দু’কোটি লোকের রোজগারের চাবি, পদ্মা সেতু।
গৌরী সেনদের মুখটা আঁধার, দেখে শেখ হাসিনার বাহাদুরি
লজ্জায় তারা ঘোমটা দিছে, ছি ছি ছি, মরি মরি।
কপাল মুছে এবার লেখো – পদ্মা সেতু বাঙালির গর্ব,
হতে পারে গরীব তারা, বুদ্ধিতে তাঁরা নয়কো খর্ব।
মহাকাব্যের আর এক অধ্যায় হলো যে শেষ
ধন্য মোদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,
ধন্য ধন্য বাংলাদেশ।
রক্ত যারা দিতে জানে তাদের কাছে তুচ্ছ জীবন।
বিজয় মালা আনবে ছিনিয়ে এটাই হলো বাঙালীর পণ।
বিশ্বটাতো জেনে গেছে তাদের চিন্তার গলদ কোথায়,
ষোল কোটির দেশটা লড়ছে এক পতাকায়,
আসবে সুদিন, সবুর কর, ধৈর্য ধরো।
মহাকাব্যের অনেক বাকি,
লড়াই গুলো অনেক বড়।
নবান্ন
– অসীম পোদ্দার
শালিধানের বাজনা বাজে
ঘরে বাইরে বেশ তো তাড়া,
নবান্ন যে হাজির হল
ঝুম ঝুমা ঝুম করছে পাড়া।
চেংড়াগুলো খ্যামটা তালে
নাচছে আজ হেলেদুলে,
ডাঙর মেয়ে কচি ছুড়ি
নাচছে আজ বাহু তুলি।
মোড়ল বুড়ো খগেন খুড়ো কাশেম চাচা
কাছারীতে গুন গুন গুন।
হুক্কা বদল হাতে হাতে কলকের আগুন জ্বলছে দ্বিগুন,
ঘরের ভিতর পড়শী কুটুম
গুম গুমা গুম।
নবান্ন যে হাজির হল ঝুম ঝুমা ঝুম।
জোয়ান গাইয়ের পালান টিপে
আন না দুয়ে দুধের হাড়ি
ঝুনা নারকেল কোরা করে
হাড়ির মাঝে দে না ছাড়ি।
আদা ছিচে কাদা করে নেনা মেখে চালের গুড়ি।
নলেন গুড়ের গন্ধ মধুর
হাতের ছোঁয়া লাগলে বঁধুর
আ-হা-হা মরি মরি, ওরে বুড়ি
ওরে কানাই বাজারে তোর পাতার সানাই
প্যা-প্যা-প্যা
মরি মরি আ-হা-হা
ঝুম ঝুমা ঝুম।
জৈষ্ঠ্যের দুপুর
– অসীম পোদ্দার
ঝিম ধরা দিন তীব্রদাহ নড়ে না গাছের পাতা,
ঝুপড়ি গাছগুলো ছায়া পায় ফেলে
উঁচিয়ে ধরেছে পাতার ছাতা।
খোলা খাটিয়ায় আধবোজা চোখে
অলস দেহটি বাঁকা
ঘুম পড়ানো মাসি আয় আয় বলে
নাড়িতেছে হাতপাখা।
ঘাম চোষা মাছি বড়ই বেয়াড়া
উড়ে পড়ে নাকে মুখে।
রাগের পারদ ওঠা নাম করে
আঘাত হানিছে সুখে।
পিপাসায় মাঠের বুক ফেটে যায়
বাজিছে ঝিঝির সানাই।
মেঘের সেনারা আকাশ ছেড়েছে
পবনের সোহাগ নাই।
ঘরে পালা পশু মাঠ ছেড়েছে
ছায়াতে নিয়েছে ঠাঁই।
রৌদ্রের মদ পান করে ঝিমায়
শাবকের সাথে গাই।
পথিক হনহন মাজা টনটন
ঘাম ঝরা জামা ভিজে।
গোবরের পিঠায় কড়া পৌঁকাগুলো
ঘুমায় চক্ষু বুজে।
রঙ চড়া আমে কাকের ঠোকর
কাঠালের কি যায় আসে।
খেয়ালী বিধির অদৃশ্য হুকুমে
কোষগুলো ভরে রসে।
অকাল বৃষ্টি
– অসীম পোদ্দার
হালকা হাওয়ায় আকাশ ছাওয়া খুচরা মেঘে
ঠান্ডা হাওয়া শক্ত ভীষণ হাওয়ার বেগে।
হঠাৎ করেই বৃষ্টি শুরু টুপ টুপা টুপ
ধানের পালায় চাটাই তলই ওয়েল পেপার ঝুপ ঝুপা ঝুপ।
রসের ঠিলা খেজুর গাছে ঠন ঠনা ঠন
বাজ্জালাতে গুয়ে মাছি ভন ভনা ভন।
জলে ভিজে মরল যত শুকনো কাঁচা সবুজ ঘুটে
কুজ মাজা ওঠা নামা ভিজছে বুড়ির সখের চিটে।
ঘরের চালের পানির ধারা নামছে বেকুব থেমে থেমে
দেখতে দেখতে উঠানটা যে উঠল ঘেমে।
বিজলীটাতো চোখ ধাঁধানো আকাশ মাঝে হঠাৎ কড়াৎ
এক দৌড়ে উঠতে ঘরে খেল বুড়ি জোরছে সড়াৎ।
মাজাটা যে গেছে ভেঙে, ওরে ঠাকুর ওরে রঘু
খিল খিলিয়ে উঠল হেসে সোনার নাতি পিতলে ঘু-ঘু।
গুন গুনা গুন কাছারিতে মিথ্যা হয় না খনার বচন
তিলের দানা চতে বেগুন চিনে কাওন ফলবে দ্বিগুন।
ডান্ডা মেরে ঠান্ডা হাওয়া হাড়ের গায়ে ঢুকছে কষে
হুক্কার আগুন নিবু নিবু কাশছে বুড়ো দাওয়ায় বসে।
বেলা গেছে হাট সরে যায় জোরছে কদম মুরগী ছোটে
লক্ষী ছাড়া হায়রে বাদল ফিরছে ঘরে মজুর মুটে।
শালিক পেঁচা কাদা খোচা কা কা কা কাকের দল
বেশ তো ওজন কম্বল ভারি খুট খুটা খুট ভেড়ার পাল।
মাথার উপর শীতের খাড়া জান চলে যায় শকুন চিলের
মাচার তলায় খপ খপা খপ বৃষ্টি কি ছাই কুনো ব্যাঙের?
ভ্যা ভ্যা ভ্যা দৌঁড়ে ছাগল কানটা নেড়ে এক পলকে
গুন গুনা গুন মশার মিছিল তুলছে সুর চিনা জোকে।
চু চু চু হাঁসের ছানা জল ছিটিয়ে করছে খেলা
ঝির ঝির ঝির তেঁতুল পাতা, একটু পরে ডুববে বেলা।
কবি পরিচিতি

অসীম পোদ্দার। জন্ম জানুয়ারি ১, ১৯৫৭ সাল। পিতা স্বর্গীয় নির্মল পোদ্দার, মাতা স্বর্গীয় কমলা পোদ্দার (কালি তারা)। পিতা কৃষক ছিলেন, মা গৃহিনী। স্থায়ী বাসস্থান – শেলাবুনিয়া, মোংলা পোর্ট পৌরসভা, মোংলা উপজেলা, বাগেরহাট। শিক্ষাগত যোগ্যতা – ১৯৫৭ এইচ এস সি। স্ত্রী বীনা রানী পোদ্দার। পুত্র – শান্তনু ও কন্যা মুক্তা পোদ্দার।
মোংলার উপজেলার শেলাবুনিয়া এলাকায় গ্রাম-নদী-খাল-বিল আর সুন্দরবনের শীতল-সবুজ পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা। পড়াশুনা সেন্ট পলস হাই স্কুলে এবং সেখানে থেকেই এস এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সমকালীন সময়ে মোংলা অঞ্চলে যারা সাহিত্য ও কাব্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করে তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। সহজ, সরল ও সাধারণ জীবনযাত্রায় বিশ্বাসী কবির অন্তর চেতনাই তাঁর কাব্য প্রেরণা। ১৯৭১ সাল থেকে গল্প ও কবিতা লেখার শুরু। এ পর্যন্ত দুটি যৌথ কাব্যগ্রন্থসহ খুলনা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক হৃদয় বাংলা পত্রিকা ও মোংলা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক মেছেরশাহ পত্রিকাসহ অন্যান্য পত্রিকায় বহু কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। অপ্রকাশিত রয়েছে কবিতা, ছোটগল্প ও উপন্যাস। দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত লিখে থাকলেও এবং ইচ্ছা থাকা সত্বেও আর্থিক প্রতিকূলতার কারণে এখনো পর্যন্ত কোন বই প্রকাশ সম্ভব হয়ে ওঠে নি। তবে আশা আছে ভবিষতে সময়-সূযোগমত কবিতার বই প্রকাশের।