নাগামরিচ
– গোলাম রহমান
বসন্তবাউরী এসেছিল নীহারিকা সম কয়েক প্রহর
বাসন্তী আলোয় উদ্ভাসিত করে
গিয়েছে চলে পুচ্ছ নাড়ায়ে
নাগামরিচের ঝাল ছড়ায়ে
নাক-মুখ-চোখ জ্বালা করে
স্তব্ধ হৃদয়
হাত থেকে খসে গেছে কলমটা
প্রজ্ঞাময়ী বিদ্যাবতী এতোটাই তোমার অহম
না কি হীনমন্যতা
একবার দেখ ভেবে!
আমিতো পিঁড়ি পেতে দিয়েছিলাম
তোমার আসন
উদরতাহীনতায় বসতে পারোনি মখমল আসনে
দুঃখ হয় তোমার জন্য তোমাদের মতন
অবোধ যাহারা
বিচরণ করে ধরিত্রীর কোলে আহা!
ভয়ঙ্কর স্তব্ধতা
– গোলাম রহমান
ভয়ঙ্কর স্তব্ধতা এক এসেছে নেমে পৃথিবীর ‘পরে
আমরা জানুতে ভর দিয়ে যেতেছি গহীন অন্ধকারে!
ম্লান সূর্য এসে প্রতিদিন চলে যায় চুপে চুপে,
ঘরের বউটি পায় না টের, দেউটি জ্বলে না;
কী অদ্ভুত সময় পার করে যেতে হয়, যেতে হয়…
পাগলা ঘোড়ার মত লাফিয়ে লাফিয়ে
মৃত্যুর সূচক ঊর্ধ্বমূখী ধাবমান আহা!
কে থামাবে তারে বা কে থামাতে পারে?
নিয়তির কাছে হাত-পা বেঁধে খাঁচা বন্দীহয়ে
প্রহর গোনার চেয়ে পলকে প্রলয় ঢের ভালো!
শিশুটি উঠল কেঁদে আহা! আহা!!
এমন করে বলোনা বাবা…
হে! প্রতিপালক আমরা রয়েছি তাকায়ে
ঝলমলে একটা রোদেলা দিনের আশায়…
শয়তানের ক্রূর হাসি
– গোলাম রহমান
মায়ের গর্ভ থেকে বেরিয়ে
চোখ খুলে দেখি
শয়তানের ক্রূর হাসি
চিৎকার দিতেই বাবা কোলে নিয়ে
কানে ঢুকায়ে দিলেন
আযানের মধুর ধ্বনি
ওই পর্যন্তই…
কিছু প্রয়োজন অনুভব করে নিয়ে
চৌকাঠের ওপারে পা রাখতেই
হড়কে অনেকটা দূর;
সূর্যের সাথে কিছু বলার অভিপ্রায়
ঘুরে দাঁড়াতেই আগুনের দুয়ার!
পাখির নীড়ের অন্বেষায়-
পায়ের নীচে পিছল উপল
মাথার উপর আবাবিলের ঠোঁটে কঙ্কর…
স্মৃতির জানালা খুলে হুহু বাতাস
উদীচী হাওয়ার কামড়
কোঁচকানো হৃদপিণ্ড ওৎপেতে-
কোনো এক পাখী ডেকে যাবে দখিন জানালায়
আহা! কী বিরল বাসনা!
অর্কিড নয় ক্যাক্টাস
– গোলাম রহমান
ঝড়ে হেলে পড়া মোটা বুড়ো আমগাছটার
শরীর জুড়ে লেপটে আছে বাহারী অর্কিড…
আমাকে কিছু অর্কিড দাও, কবিতার পাতা সাজাবো;
‘সময় খারাপ, বলে দিলো- ‘সোজা মরুভূমে যাও
ক্যাকটাসের গলা জড়িয়ে ধরো
কবিতার চমৎকার রসদ পাবে…’
সভ্যতার পটে আঁকা ছবি
– গোলাম রহমান
ইজেলে ঝুলানো ক্যানভাসে তুলি খেলা করে
সভ্যতার পটে ছুটন্ত ঘোড়ার পিঠে
সুখী দম্পতির দীপিত উজ্জ্বল মুখ,
চিত্রে রঙের শেষ ছোঁয়ার কাজ চলছে
হঠাৎ বিস্ফোরণের বিকট শব্দ,
হকচকিয়ে তাকাই – খানিকটা দূরে জনবসতির
মাথার উপর দিয়ে আগুন আর ধোঁয়ার
কুণ্ডলী উঠে যাচ্ছে আকাশের দিকে।
জানালার ফাঁক গলে একটা কালো বিড়াল
ঢুকে পড়েছে আমার ঘরে
পাথরের মত স্থির চোখের শীতল দৃষ্টি
কাঁপন ধরায় বুকে,
তাড়াতে উদ্ধত হলে
তার প্রতিবাদী কণ্ঠ চিরে বেড়িয়ে আসে হ্রেষা!
ছুটে গেলাম অশ্বশালায়
সেখানে আমার সাদা ঘোড়া নেই
তাহলে…?!?!?!?!…
কাঁপছি আমি, কাঁপছে ক্যানভাসের ছবি
উদ্ভ্রান্তের মত
কালো কালির তুলির
বিক্ষিপ্ত আঁচড় টেনে যাচ্ছি
সদ্য আঁকা নন্দিত চিত্রের বুকে…
কবি পরিচিতি
গোলাম রহমান। জন্মস্থানঃ বরিশাল।
বর্তমান নিবাসঃ ঢাকা, বাংলাদেশ, ফোনঃ ০১৭১০৮৯৫২৫০।