অসিত কুমার রায় (রক্তিম) – কবিতা (বন্ধু ভালো থাকিস, বন্ধু যখন সাথে, বন্ধু, বন্ধু ক্ষমা করিস, বন্ধু হাত বাড়ালে)

বন্ধু ভালো থাকিস

– অসিত কুমার রায় (রক্তিম)

বন্ধুর শরীর খারাপ
দেখতে গেলে হয়তো যেতে পারতাম
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ কিন্তু যেতে পারব না।
আছে অনেক বিধিনিষেধ।
কুশল জানার ইচ্ছা, সেথায় যাবার ইচ্ছা ষোলআনা।
চারআনা বাদ যায়, আমার শরীর তেমন ভালো না।
সেখানে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ, আরো বাদ চারআনা ।
ক্ষমা করিস বন্ধু যেতে আসতে সন্ধ্যে, বন্ধু যে তোর রাতকানা।
এই চারআনা যোগে বাদ হয়ে গেল ঠিকঠাক বারোআনা।
গিন্নী যাবে তিন্নির বাড়ি জন্মদিনের খাবার, হবে মোগলাই খানা।
পূর্ণ হয়ে গেল আর চারআনা যোগে পুরোপুরি ষোলআনা।

বন্ধু ভালো থাকিস
আড়ালে মুখ ঢেকে চোখের জল ফেলিস।
কেউ যেন না দেখে ফেলে
বালি পড়েছে চোখে দেখলে বলে দিস।
একদিন আমরা ভিজেছিলাম শ্রাবণ পূর্ণিমাতে
পারলে সেদিনের কথা স্মরণ করিস।

আমার বন্ধুর শরীর খারাপ
দেখতে গেলে হয়তো যেতে পারতাম
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ কিন্তু যেতে পারব না।

বন্ধু যখন সাথে

– অসিত কুমার রায় (রক্তিম)

গোধুলিতে আনবে যখন ঊষার স্নিগ্ধতা,
যেদিন বিকেলে ফোটাবে ভোরের ফুল,
আসর শুধু তোমারই জন্য সেই খানেতেই
পরশুদিন শুক্রবারে আসর বসবে রাজার ঘরে।
সঙ্গে এনো কবিতাকে মনের ভাষা প্রাণের সুরে।
কবিতা আসবে কবিতা বসবে কবিতা থাকবে সাথে
সামনের দিন ফাগুন দিন জলসা চলবে অধিক রাতে।
বসলে আসর ফাগুন রাতে মোহিনী মন চক্ষু রঙিন
ফিরতে পথ আর পাবে না খুঁজে, জীবন তখন নতুন।
ভয় করি না হবে জয় হবে জয় বন্ধু যখন সাথে
উথলে উঠবে ফেনা, চলকে পরবে সুধাবারি
টালমাটাল পায়ের তলায় নাইবা থাকুক মাটি
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ বন্ধু যখন সাথে।

বন্ধু

– অসিত কুমার রায় (রক্তিম)

কাছে থাকলে খুনসুটি আজ ভাব কাল আড়ি
দূরে গেলে সুনশান চুপচাপ স্মৃতির কড়া নাড়ি।
সেই হাসিটাই হাসতে বলিস
সেই গানটাই গাইতে বলিস
ভালবাসার কথা আজও বলিস।
মাঝে মাঝে স্মৃতির পাতা উল্টে পাল্টে দেখি
বন্ধু হয়ে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছিস একি।
সেই হাসিটাই হাসতে বলিস
সেই গানটাই গাইতে বলিস
ভালবাসার কথা আজও বলিস।
একসাথে আগুন পথে হাতে হাত রেখে চলা
ঝড় তুফানে বাদল রাতে প্রাণের কথা বলা।
সেই হাসিটাই হাসতে বলিস
সেই গানটাই গাইতে বলিস
ভালবাসার কথা আজও বলিস।
রাত্রি জাগা পাখির কাছে ভোরের কথা শুনিস
কেন যে সব বদলে গেছে বুকেতে কান পাতিস।
একবার বল সেই হাসিটাই হাসি,
আজও তোকে তেমনি ভালবাসি।।

বন্ধু ক্ষমা করিস

– অসিত কুমার রায় (রক্তিম)

বন্ধু ক্ষমা করিস।
আমার কৃতকর্মের জন্য আমি দুঃখিত।
সেদিন মাথার ভিতর কিযে হয়ে গেল,
সব কিছু একবারে ওলট পালট
নিজেকেই বোধ হয় নিজে ইচ্ছা করে চিনি নি।
বন্ধু ক্ষমা করিস।
তুইতো জানিস কতবার কত ভুল করেছি।
বুকের বাম পাশে ধক ধক শব্দের তালে,
আমাদের চলার পথ সব সময় সরগরম।
পাশে থাকতেই পারতাম ইচ্ছা করেই থাকিনি।
বন্ধু ক্ষমা করিস।
বারবার আন্তরিকতা এনে ব্যর্থ মনরথে ফিরেছিস।
দরজা ধাক্কা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে গেছিস!
জানতাম একসময় তোকে ফিরে যেতেই হবে
খুলে দিতেই পারতাম তবুও ইচ্ছা জাগেনি।
বন্ধু ক্ষমা করিস।
আপন গর্বে মুঠোফোনটাকে বন্ধ রেখেছি।
খুলে ফেলতেই দেখি একরাশ মিসডকল!
একই মেসেজ আছে পর পর অনেকগুলো,
পড়তেই পারতাম তবু ইচ্ছা করেই পড়িনি।
বন্ধু ক্ষমা করিস।
আজ কৃষ্ণচূড়া ধোয়া সকালে মনে হলো
কেউ কি পিছন থেকে বার বার ডাকছে।
তাই কি বার বার পিছন ফিরে চাইছি?
ডাকবাক্সে চিঠি! এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলেছি।
আর একবার , আর একবার সুযোগ দিলি না!
চলে গেলি সব ফেলে। আবার একা হয়ে গেলাম …

বন্ধু হাত বাড়ালে

– অসিত কুমার রায় (রক্তিম)

বন্ধু হাত বাড়ালে
নদীর বুকে বান ডাকবে
রামধনু রঙ মাটি চুমবে।
আকাশগঙ্গা ধরায় নামবে
হলুদ পাখী উড়াল দেবে।
বন্ধু হাত বাড়ালে
শুকনো পাতায় দমকা বাতাস
হাসির ঝিলিক মেঘলা আকাশ।
ফুলের বুকে মধু ঝরাস
আঁধার ঘরে জোৎস্না ফরাস।
বন্ধু হাত বাড়ালে
একটা মেয়ের পায়ের ঘুঙ্গুর
আন্দোলিত পাতায় বাহার।
বাজে আগমনী বুকের ভিতর
হাতছানি দেয় দূরের সাগর।


কবি পরিচিতি

অসিত কুমার রায় (রক্তিম)। জন্ম ৬ ফেব্রুয়ারি, ভতেহট্ট, নদীয়া, ভারতবর্ষ। বর্তমান নিবাস, কলিকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। পেশা কবিতার সঙ্গী হওয়া।

কবির ভাষায় – “জীবন কে দারুণ ভাবে অনুভব করতে চাই। যতটুকু আলো বাতাস খুশি আনন্দ মাটি আমার বরাদ্দ এই প্রকৃতির কাছে, আমি সবটুকু পেতে চাই। আমি বুঝে নিতে চাই একটা কাঁচপোকা বা পিপিলিকার এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবার অধিকার আছে। সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে চাই না। নারী স্বাধীনতা আমার কাছে বিশেষ মুল্য নিয়ে বিরাজ করে। চেষ্টা করি তার সম্মান তাঁকে পুরোটা ফেরত দিতে। আমি আমার পরিবার নিয়ে মাছে-ভাতে দিব্য আছি। ইলিশ বড় প্রিয়। বাংলাদেশের আমি ভীষণ ভক্ত। বাবার মুখে অনেক গল্প শুনেছি ভৈরব নদীর । স্বাধীন হবার প্রাক্কালে গিয়েছিলাম, সুযোগ হয়েছিল। সেই আভাস এখনো রয়ে গেছে স্মৃতিপটে। ভালো আছি, ভালো থাকবার চেষ্টা করি। অন্যকে ভাল রাখারও চেষ্টা করি নিরন্তর।”