পউষের পোটলা
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
ঘুম থেকে উঠে দেখি বৈকালে খুলে দ্বার,
চারিদিকে ধুম ধাম আহা এ কি কারবার!
বাঁশি বাজে পোঁহ পোঁহ ডুগি ডুগি টমটম,
ভেদ নেই ছেলে বুড়ো বহুরূপী সমাগম।
সর্পিল মেঠো পথে আরো ধেয়ে কে আসে!
ডাঁশ মাছি মাতোয়ারা জিলাপির সুবাসে।
বারোভাজা পিয়াজুর র’লে কড়া মিঠে চোখ
লাল নীল চশমা কি ছাড়বে রে মস্তক?
চাচা কেন খুব বিজি? বেচছে যে চালতা!
চুড়ি ফিতে এতো কেন টিপ ক্লিপ আলতা?
ঘূর্ণন চরকিতে হিসু করে হায় হায়!
গোল্লার লাল ভাঁড়ে মৌমাছি দোল খায়।
ভাব দ্যাখো বাঁদরের জেদি বুঝি খুব সে?
ধ্যাত্তেরী বেলুনটা ফেটে গেলো চুপসে!
মাছ উড়ে ঘোড়া উড়ে খোকা করে খুঁত খুঁত,
ঢুলি আর ঢোল আজ বোল-তালে অদ্ভুত।
কাঁদে কেন ছোট খুকি আছে নাকি আবদার?
সূর্যটা ঢুলু ঢুলু ভুলে গেছে গান তার।
বট তলে জুয়া নিয়ে তবু তাজা জটলা,
আমি মেলি স্মরে এক পউষের পোটলা।
শীত আসছে
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
আসছে কি শীত উলুর ঝাড়ে?
ছিঃ বলি কি থুড়ি!
উত্তুরে বাও মাচার তলে
করছে ঘোরাঘুরি।
ক্রোধ ভুলে হিম ভোরের ঘাসে
হাসছে থরে থরে,
সবজি চাষের ঢেউ লেগেছে
কৃষক শ্রমীর ঘরে।
থমকে গেছে খাল বিলের জল
নেই সে’ সবল ধারা,
কই কোথা চিল! হয়তো ওরা
পায়নি পচা নাড়া।
প্রাণ প্রকৃতি বড়ই লাজুক
টানছে পোষাক গায়ে,
যায় আসে ফের মেঘের বেটি
নাইতে উদোম পায়ে।
তবুও শুনতে পাই মরালীর গান
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
বনানী মিলিয়ে যায় দিগন্তের পাড়ে
দস্যুরূপী অন্ধকার বাঁধলেই ফসলের আঁখি,
বায়ুর স্বভাব দেখে হয়তো বা দূরে
আতঙ্কে সদলে উঠে পাশাপাশি শিয়ালেরা হাঁকি।
না পেয়ে পুষির মতি মুষিকের সাড়া
কি জানি রোদন তার পৌঁছে কি না আকাশের কানে,
অন্ধত্বে নক্ষত্র রাজি কলু শা’র ষাঁড়
কিঞ্চিত হয় না লাভ তাকালেও বামে হেরে ডানে।
অজানাই থেকে যায়, নীরদের দল
তালাশে বেড়ায় যদি কারো কাঁকে স্ফীত পারাবার,
অথচ সরস ছিলো নিশুতিরও রূপ
ক্ষয়িষ্ণু চন্দ্রিমা শেষে ঘুমালেও ভুলে আবদার।
ঘুমন্ত টিনের চালে হুতোমের জোড়া
নীরবে র’লেও জেগে আজ নয় প্রণয়ীর পীড়ে,
ভীষণ অচেনা লাগে আমারই এ’ পৃথ্বী
এখানে শুধুই রাত আসে না সে’ দিনমণি ফিরে।
বুঝেই পরখ করে আঁধারের বুকে লোনাজল,
যে যায় হারিয়ে যায় চিরতরে বিহগীর দল।
গর্জে পাকুড়ের শিরে দৈত্যকার ভূষার কামান,
তবুও শুনতে পাই আমি এক মরালীর গান!
গহীন বাগে
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
মনের গহীন বাগে – হোক ক্ষীণ অনুরাগে
হঠাৎও ডাকলে জেগে পক্ষি,
শুকনো পাতার তালে – বলছি না আবডালে
ঘুরে কারো সচকিত অক্ষি।
থাকে কি ফাগুন দূরে – মেতে উঠে চেনা সুরে
যদিও নিরালে বাঁধে দৃষ্টি,
দেখে এ’ অতুল খেলা – হারে এক কালবেলা
ভূমে পেয়ে অবশেষে বৃষ্টি।
পাইনি বলে অর্ফিয়াসের বাঁশি
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
বুকের বামে বাড়লে ক্ষোভের গতি
যেথায় থাকি ঊর্ধ্বে ছুঁড়ি তির,
কেউ ভেবো না চাই বুঝাতে অতি
ধনুর্বাণে মস্ত আমি বীর।
শুনেই জানি ফুঁসছে তৃষার রোখ
’কিসের তরে আজগুবি ভুল খেলা!’
আস্থা রেখো বন্ধ করেই চোখ
নয় এ’ হৃদয় ভানুমতির চেলা।
বলবে জানি ভাবনা গেলে হেরে
’গল্পে এ’ তো সিন্দাবাদের কাল!’
দোষ দেবো না তারও মাথা নেড়ে
মানবে যে ‘মুক বোধ জ্ঞানে আবাল’।
সাক্ষী আলো আকাশ বাতাস স্থল
তোমরা বলো সত্য চষে হাসি,
যেদিন ক্ষণিক ফেলবো না ফের জল
পাইনি বলে অর্ফিয়াসের বাঁশি!
কবি পরিচিতি

বোরহানুল ইসলাম লিটন। শিক্ষাগত যোগ্যতা এম, এ (প্রথম পর্ব)।
কবির জন্ম ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বাংলাদেশ, নওগাঁ জেলার অন্তর্গত আত্রাই থানার ’কয়েড়া’ গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে। পিতা মরহুম বয়েন উদ্দিন প্রাং ছিলেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাতা মরহুমা লুৎফুন নেছা গৃহিণী। বর্তমানে তিনি একই থানাধীন ’পাঁচুপুর’ গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
স্কুল জীবন থেকেই কবি সাহিত্যানুরাগী মানুষ। প্রকৃতির হাসি অন্তরে পুষে বড় হয়েছেন গ্রামীণ পরিবেশের শীতল ছায়ায়। প্রিয় সখ বই পড়া ও লেখালেখি। ছড়া, কবিতা, গীতিকাব্য ও অনুগল্প মিলে তার লেখার সংখ্যা প্রায় দুই হাজার এর মতো। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন ওয়েব সাইটে নিয়মিত লিখে চলেছেন।