বিভূতি দাস – কবিতা (জীবনের রং, ভাবিনিতো, তাবলে ভেবোনা, পলাশ শিমুল, অন্তরা)

জীবনের রং

– বিভূতি দাস

পলাশ পাপড়ির মত জীবনের রং ঝরে গেলে
পড়ে থাকে শুধু শুকনো খড়ি
থাকবে না হাসি স্মৃতির বাড়াবাড়ি
পায়ে পায়ে এগিয়ে চলা স্মৃতিকে পিছনে ফেলে।

যতনে ফোটানো পাপড়ির অন্তরে মধু ভরে রাখা
মাতাল বাতাসে মায়ার যাদুতে রঙে ভাসা
দোল খায় পিউকাঁহা মন, জাগে আশা
স্মৃতির সমাধিতে খুঁজ না বেদনার পথ আঁকাবাঁকা ।

ধুসর জমিনে ধুলোর আস্তরণ, হৃদয় কুরে খায়
বেদনার অশ্রু চিরকাল একাই বয়ে যায়
সাথী মেলে না অশ্রু মোছাবার হায়
সবাই একা ক্ষণিকের বসতে মায়ার ছলনায়।

ভাবিনিতো

– বিভূতি দাস

ভাবিনিতো দেখা হবে গোধূলি বেলায়
দেখা তবু হোল আবার পলাশের ছায়ায়
যতই গিয়েছে দূরে পথ হেসেছে সময়
স্মৃতি গুলো সজীব হয়েছে থাকলে নিরালায়
ভাবিনিতো দেখা হবে গোধূলি বেলায়।

ফুল ফুটলে প্রজাপতি সকালে দুটি মনে
গুনগুনিয়ে গাইত ভ্রমর সারাদিন গোপনে
ধরতে গেলেই উড়াল দিত ঝিলমিলিয়ে হেসে
ভালবাসার উড়িয়ে পরাগ প্রেমের নীলাকাশে
দুচোখের রংধনুতে জাগত কথা স্বপ্নের বুননে
তবুও পায়নি প্রকাশ রেখেছিলে শুধু মনে।

কি জানি কি করে দিন গেলো চলে
স্মৃতিরা চুপ ছিল কথা না বলে
কেন যে দোলেনি রঙের দোলায়
ভেবো না তবুও ভুলে গিয়েছি তোমায়।

তাবলে ভেবোনা

– বিভূতি দাস

বন্ধু, হঠাৎ এসেছি তাবলে ভেবোনা
গিয়েছি তোমায় ভুলে
সুর জাগে আজো মনের বীণায়
ভালোবাসার কুলে কুলে।

ঝিলমিল করে তারাদের প্রদীপ
সময়ের রাগ অনুরাগে
রেখেছি তারে ভোরের স্বপনে
কুন্তলা সাঁঝে গোপনে।

জীবনের উৎসবে ছিলাম পাশাপাশি
আজো নেই একটুও দূরে
নবীন আমনের ক্ষেত তেমনি আছে
সৌরভ জাগে ঘুরেফিরে।

ভাবতে যেমন আগের দিনে
আবেগে অশ্রু সজল
তেমনি ভেবো, না করে ছল
ভালোবাসা আজো অবিরল।

মনের পাখী যদি হারায় পথ
থেমে যাবে ভাবনার রথ
কমল কুঁড়ির ভাঙবে না ঘুম
হৃদয় দীঘির নীল জলে।

পলাশ শিমুল

– বিভূতি দাস

ও পলাশ ও শিমুল তোরা কোথায় পেলি এত হাসি
ঐ হাসির রঙে ঠোঁট রাঙিয়ে ভীষণ খুশি মৌটুসি
উড়ন্ত বলাকারা থমকে দাঁড়ায় ওড়ার কথা ভুলে
সারাদিন শুধু ডাক দিয়ে যায় কুহু সব কাজ ফেলে
তোদের হাসির কুজনে বনে বনে জাগে হিন্দোল
মুগ্ধ মনের ভাঙা দেউলে জাগে নতুন সুরের কল্লোল
আসছি আমি তোদের কাছে ধার নিতে খানিক খুশি
ও শিমুল ও পলাশ কোথায় পেলি তোরা এত হাসি।

বসন্ত রং দুপুরে রাঙিয়ে নিতে মন জাগে শিহরন
মনে হয় মৌটুসি পাখায় ছেড়ে দিই এই মন
আরো কাছাকাছি ঠোঁটে ঠোঁট রেখে হারাই কিছুক্ষণ
বেলা শেষের রং কুড়িয়ে যদি ফিরতে না চায় মন।

যেতে যেতে চলার পথে যদি ডাক দেয় পিয়াল
স্নিগ্ধ সবুজ বাহারে সেজে যদি পথ আগলায় শাল
বলে দিস তোরা কাকে রাখবো আগে হতে খুশি
কার হাসিতে পড়বো প্রেমে ছড়িয়ে খুশীর রাশি
ও পলাশ ও শিমুল কোথায় পেলি তোরা এত হাসি
আসছি আমি তোদের কাছে ধার নিতে খানিক খুশি।

অন্তরা

– বিভূতি দাস

বসন্ত বাতাসে এ কাহার হুতাশ
হৃদে বাজে অহরহ বাজে
রাত ফুরানো কথারা জাগে
অনুভবে পাই নিবিড় দীর্ঘঃশ্বাস।

চঞ্চল বরষার আলাপনে
পাতায় পাতায় বাজে নূপুর বনে
কান পেতে থাকি শুনবো বলে
শুনেছিলাম যাহা আগের কালে
হৃদয়ে এখন শুধুই ভাঙন
সময়ের ভাটির টানে।

কিছু না বলে সে চলে গেলো
বসন্ত কখন যে বৈশাখী হলো
বুঝিতে পারিনি তার এতটুকু
অন্তরাতে খুঁজি কোথায় নিবাস।


কবি পরিচিতি

বিভূতি দাস। অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক। জন্ম ১৪ই ফেব্রুয়ারী, অভিভক্ত ২৪ পরগনার কৃষক পরিবারে।

প্রকৃতির কোল ছুঁয়ে গ্রামে বেড়ে ওঠা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। ছাত্রাবস্থা থেকেই সৃষ্টির সাথে প্রেম। নেশা-লেখালিখি এবং ভ্রমণ। বর্তমান নিবাস – সোনারপুর, কলকাতা –৭০০ ১৪৯, ভারত।