মহড়ার গান
– সুমিত্র দত্ত রায়
চলছে মহড়া দিনরাতে শত কাজের ভিড়ে,
চলছে মহড়া একসাথে আজ গানের সুরে।
সার্থক হবে সে গান মিললে প্রাণের তারে।।
দায়িত্ব জাগে না দায়িত্ব না নিলে,
স্থায়িত্ব বাড়ে না পথটা না পেলে।
তাই তো পথের সন্ধানে এই মহড়া ফেরে,
জীবন পাবেই মহড়া সঠিক নিশান ধরে।
সার্থক হবে সে গান মিললে প্রাণের তারে।।
দুর্গম ভেবে রাখলে দূরে,
মেলে না সুর প্রাণের সুরে,
সুর মেলাতে গানের ভেলায়,
নিত্য নতুন প্রাণের দোলায়।
একতানে সুর বাঁধা দরকার এক জোয়ারে,
সেই জোয়ারের সন্ধানেতেই মহড়া ঘোরে।
সার্থক হবে সে গান মিললে প্রাণের তারে।।
কি লিখি তোমায়
– সুমিত্র দত্ত রায়
শৈশবের আনাগোনায় যে তুমি –
উঁকি দিয়েই ডুবে যেতে আঁধারে,
খোলামেলা তাকে ধরতে পারিনি।
আমার কবিতা, তুমি আর আমি…
কবিতা হতে তুমি পৃথক ছিলে ;
তবে তুমি কে? তখনও বুঝিনি।
সব ভাবনারা কবিতা হয় না,
সব দেখা নদী সাগর পায় না।
আজ অভিজ্ঞতা হলো, অতীতের
স্মৃতিগুলো ঘেঁটে। ভাবতে ভাবতে
কখন তোমরা মিলেছো বুঝিনি,
তুমিও শেষে কাজেই লেগে গেলে।
কল্পনার স্রোতে ভেসেছি যখন,
তুমি ছিলে, কবিতা ছিলো না।
আজ কবিতা আছে, তোমাকে ছাড়া।
তুমি অস্তিত্বই দান করে দিলে।
তুমি আর কবিতা এখন আর
কেউ আলাদা নও। ভাবে তাইতো
ভাবনার আনাগোনা। অনাদরে
চির আকাঙ্খিত মৃত্যুটাই হলো।
তরুণ দলের গান
– সুমিত্র দত্ত রায়
সমাজের চোখে ঘৃণিত আমরা,
আমরা তরুণ দল;
তোমাদের ফাঁদে মরেছি আমরা,
ফেলেছি অশ্রুজল।
আমরা তরুণ দল।।
যুগে যুগে শুধু আঘাত হেনেছ,
এবার বাঁচতে দাও,
জমাটবাঁধা চিন্তাগুলোকে-
একবার চিনে নাও।
ছাইপাঁশ মাঝে পড়ে আছি তবু,
করো না গো নিস্ফল।
আমরা তরুণ দল।।
বেকার বেকার একই হাহাকার
সমস্ত দেশ ছেয়ে,
দেখিনি জীবন পাই নি দরদ
ব্যাথা ভরা এ হৃদয়ে।
প্রতিভাগুলোর
গলা টিপে ধরে,
লাভটা কি হবে
এ ভাবেতে মেরে?
অসহায় বলে যদি মেরে ফেল,
পাবে কি নতুন ফল?
আমরা তরুণ দল।।
মুক্তির গান
– সুমিত্র দত্ত রায়
আশায় আশায় সাঁঝের বেলাটা
যায় শেষ হয়ে যায়,
তবু আমি আজো বসে থাকি একা
তোমারই প্রতিক্ষায়।।
নীড় হারা পাখি উড়ে চলে যায়
অজানাকে ভেদ করি,
তবুও গায় সে আমি তো গাই না
তোমাকেই শুধু স্বরি।
কেমনে যে তুমি ভেসে চলে যাও
মন সে দিশা না পায়,
বসে থাকি একা লাগে বড় ফাঁকা
চোখে জল ভরে যায়।।
ঘরের ঠিকানা জানে না তো পাখি
গায় তবু কত গান,
ওযে ওর প্রিয়া চিনেছে বলেই
আনন্দে ভরে প্রাণ।
আমি বসে থাকি আঁধারে একাকী
পাখি তো থাকে না বসে,
আমার মন যে এখনও বন্দী
পাখির মুক্তাকাশে।
কলতান মাঝে আজো সে বিরাজে
বাঁধনে এই হৃদয়,
তাই অসহায় চোখে জল আসে
স্মৃতিও হারিয়ে যায়।।
কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।
আমি ছেলেবেলা থেকে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু, আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।