যোষেফ হাজরা – প্রাকৃতিক দূষণ ও প্রতিকার (প্রবন্ধ)

প্রাকৃতিক দূষণ ও প্রতিকার

– যোষেফ হাজরা

পৃথিবীর তিন-চতুর্থাংশ সমুদ্রের পানি ৭০% থেকে ৮০% অক্সিজেন সরবরাহ করে। সমুদ্রের ভাসমান ফাইটোপ্লাংটন হল এককোষী উদ্ভিদ, এবং জুয়োপ্লাংটন হল এককোষী প্রাণী। ফাইটোপ্লাংটন সমুদ্রের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। সমুদ্রের প্রাণী বিশেষত নীলতিমির বর্জ্য খেকো ফাইটোপ্লাংটন পৃথিবীর উল্লিখিত অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। পৃথিবীর সমুদয় বৃক্ষ অনুপস্থিত থাকলেও পৃথিবীতে অক্সিজেনের কোন অভাব হবে না। কিন্তু বৃক্ষের প্রয়োজনীয় আছে খরা, বন্যা ও সাইক্লোন রোধকল্পে। এজন্য আমাদের সর্বপ্রথম দায়িত্ব হল সমুদ্র দূষণ বন্ধ করা। বৃক্ষের সাথেও সমুদ্রের এক মিতালী আছে, যেহেতু তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য বৃক্ষ ও উদ্ভিদের অবদান আছে। গ্রীন-হাউস ইফেক্ট-এর প্রাদুর্ভাবে সূর্যের বেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে প্রবেশ করে এবং মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। এজন্য বৃক্ষরোপণ জরুরি বিষয়। যদি মনে করেন বনভূমি উজাড় করে রাবার বাগান করে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করবেন সে ধারণা ভুল। বনভূমির প্রতিটি ইঞ্চিতে বড় ও ছোট জঙ্গলী গাছ যতখানি বায়ু ঠান্ডা রাখে ততটা রাবার বাগান পারে না। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ জরুরি কারণ উত্তরমেরু ও দক্ষিণমেরুর বরফগলা রোধ করে সমুদ্রের পানির স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে তা না হলে উপকূলীয় জনপদ অচিরে সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হবে। যার প্রকোপ বর্তমান সময়ে শুরু হয়ে গেছে।

সমূদ্র দূষণ (অনলাইন সংগৃহীত)

এছাড়া সমুদ্র দূষণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে। বিশেষ করে যে প্লাস্টিক আমার একবার ব্যবহার করে ফেলে দেই সেই সকল মাটিতে মিশে যেতে ক্ষেত্রবিশেষে ৪০০বছর সময় লাগে। যে সব অপচ্য খাবারের প্যাকেট আমরা ব্যবহার করে ফেলে দেই সেগুলো বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। কিছু বছর পূর্বে বাংলাদেশি বিভিন্ন উদ্ভাবক প্লাস্টিকের পলিথিন পুড়িয়ে জ্বালানি তেল উৎপাদন করেছে। সম্ভবতঃ এখন সরাকারিভাবে এই প্রকল্প চালু হয়েছে। তবে আর বেশি করে জনপ্রতিনিধিদের নিয়োগ করে প্লাস্টিক সংগ্রহ করে পুনব্যবহার বা ধ্বংস করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমাদের চোখের অলক্ষ্যে এই সকল প্লাস্টিক সমুদ্রে চলে যায়। বিভিন্ন সামুদ্রিক পর্যটন শিল্পে আমার দেখেছি প্রতিদিন কিভাবে সমুদ্র সরাসরি দুষণ হয়। এসব ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দুরত্বে সৌন্দর্য বর্ধক ডাস্টবিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে, জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে। যে সকল ব্যবসায় ওয়ানটাইম প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয় সেই সকল প্রতিষ্ঠানে ডাস্টবিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক ও বিনামূল্যে সেবার আওতায় আনতে হবে, অন্যথায় অর্থদণ্ড বা সাজা বাস্তবায়ন করতে হবে।

বায়ূদূষণ – বাংলাদেশ (অনলাইন সংগৃহীত)

সাধারণ জনগণ ছাড়াও শিল্প কারখানাকে শুধু আইনের আওতায় সাজার ভীতি দর্শন নয়, তাদের ইতিবাচক প্রেষণা প্রদান করতে হবে। সাধারণ জনগণের চেয়েও বড় একটা অংশ হল শিল্প কারখানা – এই সব ক্ষেত্রে ছলে-বলে-কলে-কৌশলে পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে হবে। যেমন স্বর্ণ অলংকার শিল্পে ক্ষতিকর নাইট্রেড এসিড কোনভাবে যেন সরাসরি পানিতে না যায় তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা। এছাড়া বিভিন্ন কারখানা শিল্পে অনুমোদন দেবার আগে রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে পরিবেশের ক্ষতি শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। সম্প্রতি সময়ে আমি লক্ষ্য করছি ভারতীয় টিভি চ্যানেলে দুর্গাপূজার বিশালমন্ডপ বানানোর আগে সেটা কতটা পরিবেশ বান্ধব উপাদান দিয়ে করা হয় সেটাতে গুরুত্ব দিচ্ছে। এইভাবে আমাদের ইতিবাচক দিক সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রচার, প্রসার ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

শহরে দূষণ – বগুড়া শহর (অনলাইন সংগৃহীত)

পানি দূষণে পচ্য ও অপচ্য দুটো অংশ আছে। বুড়িগঙ্গা নদে পানির মত ছোট নদীতে যদি মাত্রাতিরিক্ত অপচ্য অংশ ফেলা হয় তবে পরিবেশ সেটা শোষণ করতে পারে না। ঠিক তেমনি ব্যক্তিগত ব্যবহারের ক্ষেত্রে পচ্য অংশ আলাদা গর্ত করে পুতে রাখলে সেখান থেকে বসতবাড়ির শাক সবজির জন্য উৎকৃষ্ট সার পাবেন। শহরগুলোতে জানলা দিয়ে ময়লা নিচে ফেলার অভ্যাস বন্ধ করতে হবে। এই সবের জন্য আপনার শহরে দূষণ ছাড়াও বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা হতে পারে। ইদানিং সময় ছাদ বাগানের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এছাড়া অপচ্য বর্জ্যের পূর্ণাঙ্গ পরিশোধ বা পুন ব্যবহার করা করে যেতে পারে। ডক ইয়ার্ড বা শিপ ইয়ার্ডে সহ সমুদ্রেবন্দর ও নদীবন্দরে অংশে প্রচুর পরিমাণে লোহার ক্ষয় হয়। লোহা একসময় মরিচা ধরে মাটি পানিতে মিশে যায় কিন্ত মাত্রাতিরিক্ত অবশ্যই জীবকুল ও পরিবেশের জন্য অনুকূল নয়।

নদী দূষণ (অনলাইন সংগৃহীত)

এছাড়া আছে বায়ু দূষণ যা কলকারখানা, ইট ভাটা যানবাহনের ধোঁয়া থেকে আসে। কালো ধোঁয়া বাতাসে ছাড়ার আগে তাকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। খুব সহজেই এসব কাজ করা যায়। কালো ধোঁয়া পানির ভিতর দিয়ে প্রবাহ করিয়ে পরিশুদ্ধ করা যায়। সেই পানি আবার পরিশুদ্ধ করে দুষিত পদার্থ মিনিমাইজ করে গভীর মাটিতে বদ্ধ করতে হবে।

প্লাস্টিক ক্ষয় হয় এবং মাইক্রো প্লাস্টিক খাবারে সাথে মিশে যায়। এমনকি মাতৃদুগ্ধেও মাইক্রো প্লাস্টিকের সন্ধান মিলেছে। এই সকল প্লাস্টিক ক্যান্সারের কারণ। সমুদ্রের যে সকল ছোট বড় প্রাণী আছে তাদের আবাসস্থলে প্লাস্টিক, জাল, অ্যালুমিনিয়াম সামুদ্রিক ও প্রাকৃতিক জীবন দুর্বিসহ করে তুলছে। ইন্টারনেটে সার্চ করলে এ সম্পর্কে আরো তথ্য পাওয়া যাবে ।

প্রকৃতি আমাদের বন্ধু। আমরা প্রকৃতিকে রক্ষা করলেই প্রকৃতি আমাদের রক্ষা করবে। প্রকৃতি ও মানুষ একে অন্যের পরিপূরক। আমাদের একটু অভ্যাস পরিবর্তন করলেই ঘটে যাবে বিপ্লব। আসুন আজকে থেকেই শুরু করি সু-অভ্যাস গুলো। নতুন প্রজন্মের শৈশব আচরণের মধ্যে পরিবেশ রক্ষা প্রাধান্য পাক। অভিভাবক যারা আছি নিজেরাও লজ্জা না করে শিখি এবং শিশুদের শিখাই। তারা যখন ভবিষ্যতে দেশের নেতৃত্ব দিবে, বড় শিল্প কারখানার প্রতিষ্ঠা করবে তখন তারাও পরিবেশ রক্ষায় কথা চিন্তা করবে। কারণ কয়লা ধুলে যেমন ময়লা যায় না, তেমনি ভাল অভ্যাসও যায় না।


পরিচিতি

যোষেফ হাজরা। ছদ্ম নাম তারুণ্যের কবি।

আমি আমার জীবন গঠনের সময় বহু জায়গার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলাম। শহরের হাওয়া বা মফসলের জীবন এমনকি উত্তর আর দক্ষিণাঞ্চলের জীবনধারার ছোঁয়া আমি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছি। আমার জন্মস্থান মোংলার স্বনামধন্য সেন্ট পলস হাসপাতালে। ১লা মে জন্ম হাওয়ায় ফাদার মারিনো রিগন আমার নাম যোষেফ (আধুনিকায়নে যোসেফ) রাখে। পিতা তাপস হাজরা, মাতা এন্ড্রো রিনা নাথ।

আমি প্রথম যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “আমাদের ছোট নদী” কবিতা পড়ে তার সম্পর্কে জানি তখন থেকেই তিনি আমার অনুপ্রেরণা। এ জন্য চিত্রকলা, সংগীত, আবৃত্তি, অভিনয় ও পরবর্তীতে সেন্ট পলস স্কুলের লাইব্রেরি ও বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অপার সুযোগে লেখালেখির হাতে খড়ি দেই। সকল শিল্প-সংস্কৃতি থেকে আমি লেখালেখি করতে বেশি ভালবাসি। কারণ মনের কথা সম্পূর্ণরূপে ব্যক্ত করে, ভাষার জাদুকারিত্বে, জ্ঞান ও দর্শনের যে সমন্বয় হয়, সেই আত্মদর্শনে সম্পূর্ণ আত্মতৃপ্ত করতে সক্ষম। আমি যদিও রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব মানি তবুও তার ধাঁচে আমি লিখি না। আমি কাব্য ও রচনায় অন্যান্য ঢং রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করি যাতে কেউ পড়ামাত্রই বুঝতে পারে এই লেখনীর স্রষ্টা কেবলমাত্র আমি।