গোলাম রহমান – কবিতা (বিষ ছায়া, সোনামিতার স্বপ্ন, খেয়ার অপেক্ষা, নতুন পৃথিবীর সন্ধানে, ভাগ শালা বেজন্মা)

বিষ ছায়া

– গোলাম রহমান

অনায়েসে চলে যায়
কাহারো পায়ের ছাপ পড়ে ধুলায়
কাহারো পড়েনা।
মালি এসে বলে গেলো
একটা গোলাপ ফুটেছে ক্যাবল!
মাটির উর্বরতা লোপ পায় ধীরে ধীরে
আগাছায় ভরে গেছে
কূটকীট পোকা এতো বেশি
কুঁড়ি গুলো খেয়ে গেছে
পায়নি টের গোলাপ তরু।

আমরা কেবল কথা বলে

চলে গেলাম সহজ কথা।
এমন তো হওয়ার কথা ছিলনা –
বৃষ্টির জলে চোখের জল
আড়াল করে বসে ছিলেন
নির্বাক প্রবীণ এক
কী কষ্টো তাহার এতো
বুঝেনি তা কেহ আহা!

বিষ ছায়া নেমে এসে

খেয়ে গেলো তরুপল্লব
কোনও মহৎ প্রাণ বুঝেনি তাহা
মালিও পায়নি টের!

আমাদের কী প্রয়োজন এখন

একজন সত্যেন বোস,
না একজন আইনষ্টাইন
দুর্বোধ্য ব্যাপার; অসীমের দিকে ধাবিত।
স্বর্গ নরকের কথা হয় খ্যাপার মতন;
কে কাহারে বলে?

ক্লান্ত ঘোড়ার মতন এক পায়ে

রয়েছি দাঁড়ায়ে ঠায়
অন্ধকারে দূর আকাশে
ক্ষীণ আলো তারার দিকে।

উলুবনে পড়ে আছে উলঙ্গ নারী

প্রসব বেদোনায় কাতরায়;
রাতের আঁধার ঠেলে
সূর্য এসে একবার দেখে যায় তারে!

সোনামিতার স্বপ্ন

– গোলাম রহমান

সোনামিতা হাতের মুঠয়ে জোনাকি নিয়ে
সাঁঝের বেলায় উল্লাসে পাগল প্রায়
ফিসফিসিয়ে বলে-
‘আমার শেওড়া গাছ হতে ইচ্ছে করে;
মাথা ভরা জোনাকিরা জ্বলবে আর নিভবে
দ্যুতিতে আমায় আলোকমালা পরীর রানী মনে হবে!
তুমি আমার পাশে থাকবে তো?’
বললাম থাকব, আর তোর গাল দু’টো
চুমোয়ে চুমোয়ে রাঙিয়ে দেবো;
সবাই বলবে তুই একটা আলোকময় লাল পরী!
হটাৎ একদিন কী যে হলো
জোনাকিরা সব পালিয়ে গেল!
সোনামিতার বুকে অনেক কষ্ট এখন!
আমায় বুকের ভিতর জড়িয়ে নিয়ে
চুমোয়ে চুমোয়ে ভরিয়ে দিলো,
হাতটা টেনে নিয়ে ভেজা চোখে রাখল;
বল্ল, কথা দাও-
‘আমার ঘরটা ভাঁটফুল আর শটিবনে
সাজিয়ে দিবে শেওড়া গাছের নিচে!
সাঁঝের বেলা জোনাকিরা সব দল বেঁধে
আলো দিবে অনেক অনেক আলো!!’

কিছু বলার আগেই একটা দমকা হাওয়া…

সোনামিতাকে রাখতে পারি নি…

আমি তার কথা রেখেছি
পুকুর পারে শেওড়া গাছের নিচে
ওর ঘরের চারপাশে ভাঁটফুল
আর শটিবনের বাগান করেছি
জোনাকিরাও রাতভর দীপ জ্বালিয়ে রাখে!

আমার সোনামিতা অনেক অনেক খুশী
নিশ্চিন্তে ঘুমায় লাল গাল নিয়ে!!

খেয়ার অপেক্ষা

– গোলাম রহমান

চৈতের খর তাপদাহে অনেকটা পথ হেঁটে
ক্লান্তি বিনাশের প্রয়োজনে বটের ছায়ায় পাতা
চেরাবাঁশের মাচাঙে পুটলি মাথার নীচে রেখে চিত
একটু ঝিমুনী আসতেই লাল বটফল চোখে ভাসে
বটগাছ থেকে ভরদুপুরে পেত্নীটা নেমে সরু নখ
মাথার খুলির ভেতর ঢুকিয়ে নিউরনে
টিউনিংফরক এর মতন ঠকাস
হাজার তারের বীণার ঝঙ্কার বেজে ওঠে
চোখে সরষেফুলের মেলা বসে
নিউটনের গতিসূত্র পথ হারায়
সরষের বীজদানা আর বটবীজদানা নিয়ে
মাইক্রো আর ম্যাক্রো ভাবনায় ডুবমারি…

কালা কাউয়াটা তারস্বরে বলে গেল-
‘এখনতো ফেরার সময় ঘুমোবার নয়’
অবনী তখন কালো চাদরের নীচে
বাঁকা চাঁদ আর একটু বাঁকিয়ে ঠোঁট
আকাশে দুলছে, আমি বসে আছি
বসে থাকছি খেয়ার অপেক্ষায়…

নতুন পৃথিবীর সন্ধানে

– গোলাম রহমান

একবার জেগে উঠি পৃথিবীর মাঠে
সোনার ফসলে কতোটা ভরেছে মাঠ
দেখিবার আশে!
ক্ষীণ চোখে দেখি চেয়ে
মাঠ ভরা লাশ আর লাশ
শকুন রয়েছে বসে তার পাশে,
লোলুভ শিয়াল করে আসা যাওয়া
সুযোগ সন্ধানে!

আকাশ দিয়েছে ঢেলে অকাতরে
বিষের পেয়ালা;
ঝরায়ে সবুজ পাতা
বিষণ্ণ তরুরাজি রয়েছে দাঁড়ায়ে একেলা!

বিষাদের ছায়া মেখে সূর্য পড়েছে ঢলে
বিরান মাটির পৃথিবীর ঢালে;
লুটায়ে আঁচল বিমর্ষ বধূটি
সেঁজুতি জ্বালায়ে যেতেছে চলে
অনন্ত আঁধার পথে
নতুন কোনোও পৃথিবীর সন্ধানে!

ভাগ শালা বেজন্মা

– গোলাম রহমান

খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কথাটা বড্ড বেমানান, ঠিক খাটে না
বরং রসিয়ে রসিয়ে উপভোগ করি তোমায় যেটুকু সময়
ততোটুকু সময় এ দেহে প্রাণ আছে বলে মনে হয়
মৃতবৎ বাকীটা সময়…উফ! কাটে না… কাটে না…!!!

তোমার উদম বুকে গাঢ় মগ্নতায়
চোখ দুটো লেপ্টে থাকে অনুক্ষণ
তীব্র ক্ষুধা এসে কষে লাত্থি মেরে বলে-
‘ভাগ শালা বেজন্মা…
কবিতার বুকে না খুঁজে প্রাণ
কর অন্নের সন্ধান!’


কবি পরিচিতি

গোলাম রহমান। জন্মস্থানঃ বরিশাল।

বর্তমান নিবাসঃ ঢাকা, বাংলাদেশ, ফোনঃ ০১৭১০৮৯৫২৫০।