কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস – কবিতা (একটুখানি ভুল, অর্থ সম্পদ, শান্তির খোঁজে, যুদ্ধ, বসন্তের কোকিল)

একটুখানি ভুল

– কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস

শত সহস্র কাজের মাঝে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ হতে পারে একটুখানি ভুল।
চলার পথে সকাল সাঁঝে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ কখনো না হইও ব্যাকুল।
ছোট ছোট অনেক ভুলে যখন,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ মনের ভীতর গভীর ক্ষত হয়।
চারিপাশের বাধা বিঘ্ন তখন,
​ ​ ​ ​ প্রবল হয়ে উঠে কঠিন সমস্যায়।
আজকে যে ভুল ভুলে গেলাম,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ভবিষ্যৎ চিন্তা না করে।
সামনের দিনগুলো কাটিয়ে নিলাম,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ বিভিন্ন কাজের ত্রুটি ধরে।
একটু খানি অলসতায় আর,
​ ​ ​ ​ ​ ​ অসতর্কতার ফলে সময় সময়।
কিছু মারাত্মক ভুলের ভার,
​ ​ ​ ​ ​ ​ বহন করতে হয় ব্যথিত হৃদয়।
ভুলের মাশুল দিয়ে বটে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ সংশোধনের পথে এগিয়ে চলে,
একটুখানি ভুলে অনেক বিপদ ঘটে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ভুক্তভোগীরা বুঝেছে পলে পলে।
অবজ্ঞা আর অবহেলার ফলে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ছোট খাটো ভুল এড়িয়ে চলা।
পড়তে পারে দুর্ঘটনার কবলে,
​ ​ ​ ​ ​ ঘুচিয়ে দিতে পারে সকল লীলা খেলা।
একটু অনাদর একটু ভুলে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ কত সোনা মুখের অকাতরে।
জীবন প্রদীপ নিভে গেলে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ আর্তনাদ থাকে চিরতরে।
একটুখানি ভুলে কত কি যে ঘটে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ হারিয়ে যায় মূল্যবান নিঃশ্বাস।
ভালোবাসা আদর সোহাগে,
​ ​ ​ ​ জীবনীতে লেখা হয় করুণ ইতিহাস।
শুরু থেকে ভুল শুধরে নিয়ে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ চলার পথকে সুন্দর রাখো।
ধৈর্য ধরে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ মানুষের সেবায় এগিয়ে এসো।

অর্থ সম্পদ

– কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস

অর্থ সম্পদে বাড়ায় অহমিকা,
অযথা যুদ্ধ অযাচিত ক্ষমতা।
​ ​ ​ ​ ​ ​ আবার তীর্থ ভ্রমণে লাগে অর্থ,
​ ​ ​ ​ ​ ​ আর্ত সেবায় হয় সদাই তুষ্ট।
অর্থ মানুষকে অমানুষ বানায়,
তাই অর্থ অনর্থের মূল বলা হয়।
​ ​ ​ ​ ​ আবার অর্থ সম্পদ বেঁচে থাকার বড় শক্তি,
​ ​ ​ ​ ​ অর্থের অভাবে বাধাগ্রস্থ সকল প্রযুক্তি।
অর্থ-সম্পদের মোহিনী শক্তি আছে,
তাহারই জন্য অগাধ জলে ডুবিতেছে।
​ ​ ​ ​ ​ আবার তাহারই জন্য ক্ষমতার উচ্চ শিখরে,
​ ​ ​ ​ কেহ কেহ বিলাসবহুল জীবন যাপন করে।
ঝগড়া,বিবাদ, কলহ অর্থের জন্য,
অর্থের অভাবে মানুষ অতি নগন্য।
​ ​ ​ ​ ​ আবার মান-সম্মান সুন্দর পোশাক পরিধানে,
​ ​ ​ ​ ​ সুনাম সুখ্যাতি অনেকটা অর্থের কারণে।
অর্থ-সম্পদে পিতা পুত্রের শত্রুতা,
দেনা-পাওনা সম্পর্কের মনোমালিন্যতা।
​ ​ ​ ​ ​ আবার জ্ঞান অর্জন আর ভ্রমণের সহায়ক,
​ ​ ​ ​ ​ সংসারে টাকাটাই শান্তির নিয়ামক।
রাজা প্রজার বৈরী ভাব অর্থ সম্পদে,
ধনীদের অশান্তি অনেকের সাংসারিক বিচ্ছেদে।
​ ​ ​ ​ ​ আবার সন্তুষ্ট গাড়ি-বাড়ি রকমারি খাবারে,
​ ​ ​ ​ ​ সম্পদ অধিকারকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে।
অতিরিক্ত ধন-সম্পদ বড়ই অশান্তি,
অবৈধ টাকা-পয়সা বাড়ায় ভোগান্তি।
​ ​ ​ ​ ​ আর সৎ পরিশ্রমের আয়ের হিসাব রাখার,
​ ​ ​ ​ ​ আবার পরিমিত অর্থের একান্ত দরকার।

শান্তির খোঁজে

– কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস

সারা বিশ্বের মানুষ শান্তির খোঁজে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ অশান্তি কাহারো কাম্য নয়,
প্রবাসে যারা আছে কঠোর পরিশ্রমে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ স্বজনদের ভালো তারা চায়।
তাপদাহ,ঝড়,বন্যা, শিলাবৃষ্টি,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ কোথাও মহামারী, যুদ্ধ,
মেধা খাঁটিয়ে প্রতিরোধ সৃষ্টি,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ মানব কল্যাণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
কেহবা ধর্মের বানী শুনিয়ে সদা,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ দিতেছে শান্তির আশ্বাস,
বিভিন্ন দেশে যুদ্ধের ভয়াবহতা,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ফেলিতেছে কেহ দীর্ঘ নিঃশ্বাস।
বিশ্ব নেতারা করিতেছে দৌড় ঝাঁপ,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ পক্ষে বিপক্ষে আছে সমর্থন,
দেশে বিদেশে এখন বাড়িতেছে উত্তাপ,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ শান্তির আশায় সবার অবস্থান।
আলোচনার অন্তরালে ক্ষমতার চেহারা,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ কোথাও আবার চরম অশান্তি,
জলে স্থলে আকাশে যুদ্ধের মহড়া,
​ ​ ​ ​ ​ ​ তবুও গুণী ব্যক্তিবর্গ খুঁজিতেছে শান্তি।
গ্রহে উপগ্রহে মানুষের বসতি,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ চন্দ্রপৃষ্ঠে মানুষের পদচারণা,
বিজ্ঞানীদের নেই আশার কমতি,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ সুখ শান্তির চমক ধারণা।
মানুষ অতীত নিয়ে বিভ্রান্তি হয়,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ভবিষ্যতে শুধু শান্তি খোঁজে,
শান্তির বার্তাবাহক খবর দেয়,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ সবার শান্তি আছে অন্তরের মাঝে।

যুদ্ধ

– কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস

যুদ্ধ মানবসভ্যতার জন্য অমানবিক বিপর্যয়,
এই পৃথিবী মানবের তরে দানবের তরে নয়।
যুদ্ধের ভয়াবহতা দার্শনিকদের করেছে চিন্তিত,
যুদ্ধ মানুষকে ধ্বংস করবে যদি না করে প্রতিহত।
বিশ্বযুদ্ধ মানব ইতিহাসে এক কলঙ্কিত অধ্যায়,
যুদ্ধ বিধ্বস্ত ব্যক্তি মানুষের, অসহায়ত্বের সৃষ্টি হয়।
যুদ্ধ মানেই অশান্তি মানুষের প্রাণহানি,
সংঘাত-সংঘর্ষ শান্তি ভঙ্গ আর হানাহানি।
বিশ্বে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো কখনও প্রভাব খাটিয়ে,
অন্যায়ভাবে যুদ্ধে পৃথিবীর মানচিত্রের পরিবর্তন করে।
প্রাণ যায় সৈনিক, সাধারণ মানুষের বারবার,
মাতৃভূমি ছেড়ে শরনার্থী, নিশ্চিহ্ন বহু পরিবার।
মানব জাতির ইতিহাসে অস্তিত্ব রক্ষায় যুদ্ধ,
ক্ষমতা বিস্তারের প্রধান হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত।
কখনও ধর্ম রক্ষা কখনও দেশরক্ষার অজুহাতে,
যুগে যুগে প্রবল ক্ষমতাধর রাজারা যুদ্ধ করেছে।
যুদ্ধে বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে অত্যাধুনিক অস্ত্র,
ক্ষতি হচ্ছে মূল্যবান স্হাপনা হারাচ্ছে অন্ন বস্ত্র।
বর্তমানে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রভাব,
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে সৃষ্টি হচ্ছে মানুষের অভাব।
যুদ্ধ শুধু দোষারূপ আর ক্ষমতার প্রতিফলন,
অসহায় শিশু বৃদ্ধ, সাধারণ মানুষের চরম নির্যাতন।
যুদ্ধ আকাশ বাতাস সর্বত্র করে দূষিত,
মানুষকে করে প্রতিবন্ধী আর শারীরিক অসুস্থ।
যুদ্ধ নয় শান্তি এই শ্লোগান বিশ্বময়,
তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যাক বিজ্ঞানের সহায়তায়।

বসন্তের কোকিল

– কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস

চিরচেনা মুখ অসুন্দর মলিন ফ্যাকাশে,
মনের গভীরে যেন কত যুগের অশান্তি জাগে।
জমেছে আবর্জনা ধীরে ধীরে অজান্তে,
মরীচিকায় আটকে গেছে খোলা বাতায়নে।
পথ বদলিয়ে অন্য পথে পদচারণা,
ভুলে গেছে চিরদিনের সেই পুরানো ঠিকানা।
ইচ্ছায় অনিচ্ছায় আনতে চায় না স্মরণে,
আগমন ছিল যার বিনা প্রয়োজনে।
দূরে গেলে থাকতো সদা ব্যথায় কাতর,
মধুর বাক্য ব্যয় নয়নের জলে করিতো আদর।
জলে ভাসানো নৌকা অস্পষ্ট গভীর সাগরে,
নীরব নিস্তব্ধ অপলক নয়নে বসে আছি তীরে।
মৃদুমন্দ বাতাস কর্ণকুহরে বেদনার সুর তোলে,
নীলআকাশ ডেকে সান্ত্বনার বাণী নাহি বলে।
চকচকে রোদ্দুরে হেঁটেছে পাশে ছিল মধুর হাসি,
বেলাশেষে মেঘলা আকাশে বাজে বিকট শব্দের বাঁশি ।
তুচ্ছ একগুচ্ছ শেওলা ভেসে আসলো অতি নিকটে,
হাতছানি দিতে বৃষ্টি এলে অদ্ভুত ঘটনা ঘটে।
হৃদয়ের শত মান অভিমান ধুয়ে মুছে,
কঠিন বাস্তবতায় যেন সবকিছু গিয়েছে মিশে।
এলোমেলো চিন্তার ফসল স্বপ্নে রেখেছো ধরে,
অজান্তে অভক্তিতে পায়ের ধুলা আঙ্গিনায় নাহি পড়ে।
আশায় আশায় চলে অনিচ্ছার মালা গাঁথা,
ভালোসময় বসন্তের কোকিল হয়ে ফিরে এসো হেথা।


কবি পরিচিতি

কৃপাসিন্ধু বিশ্বাস। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। জন্ম জুলাই ২, ১৯৫৫, বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার কাষ্টবাড়িয়া গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে। পিতা – হৃদয় চন্দ্র বিশ্বাস, মাতা – ফুলমতি বিশ্বাস।

ছোট বেলা থেকে একটি সংগ্রামশীল পরিবারে সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন লেখাপড়ার পাশাপাশি আবৃত্তি, গান ও মঞ্চনাটকের সাথে যুক্ত হন। গনিতের অধ্যাপক হলেও সাহিত্যের প্রতি তাঁর ভালো লাগা আজীবন। কর্মজীবনের অবসরে থেকেও সাহিত্য চর্চায় নিজেকে সম্পৃক্ত নিরলসভাবে।

স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকা, বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও সাহিত্য পত্রিকায় তার লেখা কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। সহজ ভাষায় ছন্দ মিলের উপস্থাপনায় লেখা তার কবিতাগুলো পাঠ করে পাঠকেরা সামান্যতম আনন্দ পেলেই কবি নিজেকে ধন্য মনে করবেন।