পায়ে পায়ে
– বিভূতি দাস
চলনা পায়ে পায়ে বেরিয়ে পড়ি
দূরে না হোক কাছাকাছি
কখনো ঝাউ বনে বাতাসের ডাক
কখনো বা সমুদ্র বেলায়
রেখে আসি কিছু দলবাঁধা পায়ের ছাপ
দুঃখের কাল রেখে চার দেওয়ালে বন্দী
কিছুটা সময় করে
জীবনের সাথে হোক প্রকৃতির সন্ধি।
ভুলে যাই পাওয়া না পাওয়ার হাজার বেদন
ভুলে থাকি কিছুটা সময় রোদন
হুল্লোড় হাসি খুশীতে মুছে ক্লিষ্ট ছাপ
ক্ষতি কি পেলে ছোঁয়া রাগ অনুরাগ
সময় বদলাতে পারবো না জেনেও খুঁজে সুখ
মুক্ত বাতাসে ভুলি দীনতা দুখ ।
পথে প্রান্তরে বাংলার কোণে কোণে হাজার রূপ
না হয় অতি সাধারণ ভাবে করে গ্রুপ
হারিয়ে যাই সবুজ অরণ্যে অথবা সমুদ্র সৈকত
খানিক সময় রেখে শুধু মনের জন্য
পাখির ডাকে বুনো অরণ্যের সৌরভে ভেসে
বিষণ্ণ মন অজান্তেই উঠুক হেসে
বাঁচার আনন্দ রসদ সাথে নিয়ে ভালোবেসে
ফিরে আসি সংগ্রামী যোদ্ধা বেশে।
কি হবে অতীত বা অজানা ভবিষ্যৎ ভেবে
হাতে নেই কারো তেমন কিছু
ভাগ্যের পাতা লাইনে সবাই এক রেলগাড়ি
চল চল সব ছেড়ে বেরিয়ে পড়ি।
দুঃখের কাল রেখে চার দেওয়ালে বন্দী
জীবনের সাথে করি প্রকৃতির সন্ধি।
চাঁদ সিরাজি
– বিভূতি দাস
বে-ঘুম নিশির পেয়ালা ভরি
চাঁদ সিরাজি পান করি
কোথা গেলে হৃদ পাপিয়া
একেলা মোরে ছাড়ি
শুনিতে পাও কি গো
এ মনবীন ওঠে গুমরি।
রূপসী চাঁদ পিছলিয়ে যায়
বকুলের ঐ শীতল পাতায়
দেখে তারে ভরে না হৃদয়
মন আঁচলা ভরে পেতে চায়
সোহাগ পিরিচে হৃদয় ভরি
চাঁদ সিরাজি পান করি।
ফুটেছিল যে বাগিচা আলো করি
কোন অজুহাতে সে দিলো না দিল ভরি
সোহাগ যামিনীতে ছল করি
শুনিতে কি পাও মনবীন ওঠে গুমরি।
জড়ায়ে রাখো
– বিভূতি দাস
যদি নাহি দিবে প্রেম
কেন স্বপনে জড়ায়ে থাকো
পলাশ রেনুতে সাজায়ে তনু
মহুয়া মদিরা ছড়ায়ে রাখো।
সবুজ এ মনে হয়ে ফাল্গুনী বাতাস
খেয়ালের খেলায় ভাসিয়ে আকাশ
তৃষিত এ মনে জাগিয়ে সুবাস
কেন জ্বালাও বাতি নিরাশ।
ওরে চঞ্চল কোথা চলে যাস
বলে যাস মোরে বলে যাস
আশাবরীতে জাগিয়ে এ হৃদয়
জড়াইব না হয় বাহু পাশ।
যদি নাহি দিবে প্রেম
কেন স্বপনে জড়ায়ে থাকো
হাসিতে ছড়ায়ে জোছনা সৌরভ
এ মনবীথি আঁধারে ঢাকো।
কাঁটার বনে
– বিভূতি দাস
আজি এ কাঁটার বনে কে
হারালে গো পথ
গোলাপ ফোটে না হেথা
পুরে না মনোরথ
বর্ষা মুখরিত কল্লোল শেষে
বসন্ত আসেনি হেসে
নীরব দহনের জ্বালা সয়ে
নিঃস্ব হৃদয় রথ।
সঞ্চারিতে যে সুর ছিল
হারিয়েছে সে অন্তরাতে
ঝরা ফুলের পাপড়ি বলো
কে রাখে গো ফুলদানীতে
থামে জীবনের যত কলরোল
হৃদয় ভেজানো অশ্রুতে।
মাশুলে ধরা পড়লে ভুল
ছন্দ হারায় জীবন
সবুজ হারিয়ে বেঁচে থাকা
পিঞ্জারায় বন্দী মন
ভালোলাগা সব ইচ্ছেগুলো
গুমরে কাঁদে এখন
স্বপ্ন কাজল শুকিয়ে হয়েছে
জীবন পথের কাঁটা।
ডুব দিয়ে
– বিভূতি দাস
মন যমুনায় ডুব দিয়ে
কোন প্রেমিকা যায়
মানস পটে ছবি আঁকে
ধরা নাহি দেয়
জানে কি মনের খবর
তাকে ছুঁতে চায়।
এই মনটা নিয়ে কীযে করি
একলা ভাসাই স্বপ্নতরী
ঘুম আসে না চোখের পাতায়
কে করল ঘুম চুরি।
জানি না সে কোথায় থাকে
প্রেম সমুদ্রে সাঁতার কাটে
সকাল দুপুর চাঁদনি রাতে
ঢেউ তুলে সে মন যমুনায়
কোথায় তরী ভেড়ায়।
আহা মন যমুনায় ডুব দিয়ে
কোন প্রেমিকা যায়।
কবি পরিচিতি

বিভূতি দাস। অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক। জন্ম ১৪ই ফেব্রুয়ারী, অভিভক্ত ২৪ পরগনার কৃষক পরিবারে।
প্রকৃতির কোল ছুঁয়ে গ্রামে বেড়ে ওঠা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। ছাত্রাবস্থা থেকেই সৃষ্টির সাথে প্রেম। নেশা-লেখালিখি এবং ভ্রমণ। বর্তমান নিবাস – সোনারপুর, কলকাতা –৭০০ ১৪৯, ভারত।