রুবাইয়াত-ই-বোরহান (১ – ১৫)
– বোরহানুল ইসলাম লিটন
(১) বামের ধাম
রাখতে তোমায় যত্নে অতি রুখে লহুর বাঁদরামি,
বুকের বামে ধাম গড়েছি সম্মানে যা খুব দামি।
ভাবছো শুনে রইল কে কার? মূর্খ এ’ মন! কয় সে কি?
দরগা তলা শিরনি দেবো এমন বোকা নই আমি!
(২) চায় না শুধু
ঘর বাহিরে চলতে গেলে যাবেই কিছু আজ ছেড়ে,
বুকের বামেও রোজ হবে ঘা নিত্য নতুন হোক ফেরে।
সয়েই কে নয় অনুগত! জানো হে রব সব তুমি,
চায় না শুধু বহ্নি এমন জল দিলে যা যায় বেড়ে।
(৩) নিষ্কৃতি
দিন রজনী বুকের খাঁচায় বললেও বোধ ‘রোজ জিতি!’
নয়কো মিছে ছোট্ট আয়ু ক্ষণস্থায়ী ভিত ক্ষিতি।
যেতেই হবে ডাক দিলে রব হুকুম তারই শাশ্বত,
মেনেই আড়ে প্রাণ যতো চায় মৃত্যু থেকেই নিষ্কৃতি।
(৪) মেনেই বলি
একলা জেগে রূপ সায়রে দেখে ঢেউয়ের তড়পানি,
গামলা দিয়ে জল গো সেঁচি মানি আমি নই জ্ঞানী।
ভাবলে থেমে এই কি আশা! হয় যে আঁধার ধড়ফড়ে,’
কও তো বিধি কার তরে সেই পূর্ণ শশীর মুখখানি!
(৫) বাসনা
দিলাম সঁপে গোর খুঁড়ে এই সাধের দেহ হাড় পেশী,
দাও বিধি জ্ঞান বিনিময়ে চাই না তাও খুব বেশী!
বাঁধবো ভজে শান যা তোমার ক্ষুদ্র এ’ মোর বাসনা,
রয়েই যাবে নইলে যে শ্বাস আপন ঘরে ভিনদেশী!
(৬) চাই না হতে!
বাম পেতে চাম মজলে প্রভু পেয়ে রিপুর আশকারা,
আপন মেনে মুক এ’ হৃদে দিও জ্ঞানের সেই ধারা!
নাও পেলে শেষ এই জনমে তপ্ত সুখের ফের দেখা,
ভুল করে হোক চাই না হতে পরকে বেচার বাটখারা!
(৭) জীবনের ধন
হায়াত ভেবে ধন গড়া ক্ষণ আশায় সেজে তালকানা,
দুই সিকি দম তুলছি ঘরে নিত্য খোয়ে নয় আনা।
দিন যা গেছে এমনি করেই ভাণ্ড খুলে আজ দেখি,
নেই কোন ধন তুমি বিনে ও গো দয়াল রাব্বানা!
(৮) দাও হে বিধি!
দুঃখ চড়ে এই দু’ কাঁধে সাজলে শখে রোজ ঘানি,
ভয় কি পাবো বাড়লে তাতে রূপ সায়রের তড়পানি!
চষবো যা পণ আশার ভূ’য়েই ভিন ধী আয়ুর বুক ক্ষয়ে,
দাও হে বিধি স্বপ্নে এনে নূর নবিজীর মুখখানি!
(৯) মেহেরবান
ছন্দ হারা তপ্ত মাটি ডাকলে যেমন ডুকরে বান,
দগ্ধ মনে তেমনি করো শান্তি ধারা কৃপায় দান!
রিক্ত হাতে মূর্খ দাস এ’ আর্জি দিলাম পায় সঁপে,
মানছি কি কও তুমি বিনে আর কেউ আছে মেহেরবান?
(১০) চাস্ নে সখী!
শেষ বেলা এই ভাবনা যদি ভুলে ফড়িঙ ফের সাজে,
চাস্ নে সখী যাক পোড়া মন হিজল তলে আন্দাজে!
’চাইলে হবে আর কি দেখা!’ ঝরলে ভেবে দুই আঁখি,
তুলবে কে বল সেই চেনা সুর আজ এ’ ছেঁড়া এস্রাজে?
(১১) পাক বাণী
মাংস যদি রান্না হয়-ই অল্প হলেও কাল আনি,
কই কি সখী ঝোলের তরে একটু বেশী দিস পানি!
না পেলে বল পড়শিরা স্বাদ প্রাণ কি মিলে সেই ভোজে?
এই কথাটি নয় রে কারো আমার নবীর পাক বাণী।
(১২) বুঝবে কে!
সাত সমুদ্দুর ওপার যেয়ে দেখবো বলে আজ তারে,
দিন করে পর গিয়েছিলাম গগন চিলের ফের দ্বারে।
বললো কি সে? হায় পোড়া ভাল বুঝবে কে এই বাক ছেনে!
’একাদশীর চাঁদ যে আমার আটকে আছে বাঁশঝাড়ে!’
(১৩) তার তরে নয় সংশয়
”লোভ বা মোহের বাঁধন কেটে আত্মটাকে করে জয়,
চিত্ত কি আজ নয়কো আমার আস্থা যেচে তাগড়া হয়!
প্রাণ তবে ক্যান চলছে ভেসে ঢলের টানে তীর ছেড়ে?”
বক্ষে র’লে আল্লাহ নবী তার তরে নয় এ’ সংশয়।
(১৪) বুঝলি কি কথা!
এক জনমের স্বপ্ন মেনে সোনার চেয়ে ঢের দামী,
রোজ ভেবেছি তোরে দেব বুকে রেখে আধ আমি।
বাঁচবো দোঁহে টুনির মতো নাচ গানে এক জোড় বেঁধে,
মন সঁপে কি বুঝলি কথা! দুখ করে আজ ভন্ডামী।
(১৫) ছাড়লো কে!
মোহের তরে এই যে তুমি করছো মজুদ লোভের মূল,
ভাবছো এ’ ভাঁড় রাখবে কোথা নয় কি কবর সেজদা তুল?
ডাইনে বামে থাকবে যা ফাঁক বলছো ‘আমিই দখলদার!’
মানছি তবে পুণ্য বা পাপ ছাড়লো কে কও ভাগ একচুল?
কবি পরিচিতি

বোরহানুল ইসলাম লিটন। শিক্ষাগত যোগ্যতা এম, এ (প্রথম পর্ব)।
কবির জন্ম ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বাংলাদেশ, নওগাঁ জেলার অন্তর্গত আত্রাই থানার ’কয়েড়া’ গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে। পিতা মরহুম বয়েন উদ্দিন প্রাং ছিলেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাতা মরহুমা লুৎফুন নেছা গৃহিণী। বর্তমানে তিনি একই থানাধীন ’পাঁচুপুর’ গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
স্কুল জীবন থেকেই কবি সাহিত্যানুরাগী মানুষ। প্রকৃতির হাসি অন্তরে পুষে বড় হয়েছেন গ্রামীণ পরিবেশের শীতল ছায়ায়। প্রিয় সখ বই পড়া ও লেখালেখি। ছড়া, কবিতা, গীতিকাব্য ও অনুগল্প মিলে তার লেখার সংখ্যা প্রায় দুই হাজার এর মতো। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন ওয়েব সাইটে নিয়মিত লিখে চলেছেন।